Advertisement
E-Paper

সস্তার লাল রঙা ডিম ভুলেও ছোঁবেন না!

ডিম কিনে ‘মুরগি’ হয়েছেন রমেনবাবু। লালচে রঙ। সাধারণ পোলট্রির ডিমের চেয়ে আকারে বেশ বড়। দামও অনেকটাই কম।

সৌভিক চক্রবর্তী, তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৮:৪৪

ডিম কিনে ‘মুরগি’ হয়েছেন রমেনবাবু।

লালচে রঙ। সাধারণ পোলট্রির ডিমের চেয়ে আকারে বেশ বড়। দামও অনেকটাই কম। অফিস খেকে বাড়ি ফেরার সময় লোভে পড়ে বেশ কয়েকটা লাল ডিম কিনে ফেলেছিলেন হাজরার বাসিন্দা রমেন দাস। ডিমবিক্রেতা বলে দিয়েছিল, ‘‘অমলেট করে খাবেন। এই ডিম সেদ্ধ হয় না। এগুলো অমলেট স্পেশাল।’’ বাড়ি ফিরে ফ্রিজে ঢোকাতে ভুলে গিয়েছিলেন ডিমের ঠোঙা। পরদিন সকালে উঠে চক্ষু চড়কগাছ। পাঁচটির মধ্যে দুটি ডিম ফাটিয়ে বেরিয়ে এসেছে সদ্যোজাত মুরগিছানা।

শীতকালে বাজারে ডিমের দাম অনেকটা বেড়ে গেলেও এই লাল রঙের ডিম খুব সস্তায় বিক্রি করেন কিছু ডিম ব্যবসায়ী। আর মূল্যবৃদ্ধির বাজারে সস্তার জিনিসের লোভটা ছাড়তে না পেরে রমেনবাবুর মত ‘মুরগি’ হয়েছেন অনেকেই।

পোলট্রি বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বাজারে দু’রকমের পোলট্রির ডিম পাওয়া যায়। সাদা ও লাল রংয়ের। তাঁদের মতে, সাদা ডিমগুলি ফুটে বাচ্চা হওয়ার কোন সম্ভাবনাই থাকে না। এদেরকে বলা হয় ‘নন হ্যাচ’। কিন্তু লাল ডিমগুলি পোলট্রিতে বাচ্চা হওয়ানোর জন্যই ব্যবহার করা হয়। তাই এই ধরনের ডিমকে চলতি কথায় ‘হ্যাচারি ডিম’ বলে। এই ডিমগুলি থেকে বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে শতকরা আশি শতাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, ৯৯.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ও ৫০ শতাংশ আদ্রতায় ২১ দিন ধরে লাল ডিমগুলিকে ইনকিউবেটারে রাখা হয়। ২১ দিন রাখার পর ডিমগুলি ফুটে বাচ্চা বেরোতে শুরু করে।

পোলট্রি ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, ১৮ থেকে ২০ দিনের মাথায় বোঝা যায় কোন ডিমগুলি থেকে বাচ্চা হবে না। তখন সেই ডিমগুলিকে আলাদা করে দেওয়া হয়। আর এই ডিমগুলিই বিক্রির জন্য চলে আসে বাজারে।

কিন্তু পোলট্রি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৮ থেকে ২০ দিন ইনকিউবেটারে থাকার ফলে এই বাতিল ডিমগুলিতেও অনেক সময়ই ভ্রুণ তৈরি হয়ে যায়।পাশাপাশি প্রচুর গরমে থাকার জন্য হ্যাচারির ডিমের কুসুম নষ্ট হয়ে যায়। তাই এই লাল ডিম সেদ্ধ বা পোচ করা যায় না। সাধারণ মানুষ বুঝতে না পেরে অনেক সময়ই এই ডিম কেনেন যা শরীরের জন্য রীতিমতো ক্ষতিকারক।

শিয়ালদহ ডিমপট্টির ব্যবসায়ীদের একাংশ জানাচ্ছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী হ্যাচারির বাতিল ডিমগুলি এনে পাইকারি দরে বিক্রি করেন বাজারে। এক ব্যবসায়ীর দাবি, ফার্স্ট ফুডের দোকানে মূলত এই ডিম ব্যবহার করা হয়। যেহেতু ডিমগুলি আকারে বড় তাই দু’টো ডিমকে ভেঙে হামেশাই তিনটে করে নেওয়া যায়। আলোর সামনে ধরলেই দেখা যায় এই ডিমগুলোর ভেতরে কুসুম ভেঙে গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘খুচরো ডিম বিক্রেতাদের কাছে খুব বেশি থাকেনা হ্যাচারির ডিম। পাইকারি বাজারে এই ডিমের প্রচুর চাহিদা। ভাল পোলট্রির ডিমের দাম যেখানে চার টাকা-সাড়ে চার টাকা, সেখানে হ্যাচারি ডিমের দাম বড়জোর দেড় টাকা। তাই এই ডিম কেনা অনেক বেশি লাভজনক। আর তাতেই ফুলে ফেঁপে উঠছে অসাধু চক্র।’’

কিন্তু শরীরের পক্ষে কতটা ক্ষতিকারক এই ডিম?

ডায়েটিশিয়ান রোশনি রায়চৌধুরী জানাচ্ছেন, ইনকিউবেটারের গরমে ডিমের সাদা অংশ অর্থাৎ অ্যালবুমিন এবং কুসুম অর্থাৎ প্রোটিনের অনুপাত এলোমেলো হয়ে যায়। ফলে সাধারণ ডিমের যা পুষ্টিগুণ এ ক্ষেত্রে প্রায় তার উল্টো। ভিটামিন বি(১২) এবং কোলেস্টেরল-এর পরিমাণও পাল্টে যায়। ন্যাশ্যানাল এগ কো-অরডিনেশন কমিটি (এনইসিসি)-এর এক কর্তা জানাচ্ছেন, মানুষের খাওয়ার অযোগ্য হ্যাচারির ডিম। শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। এই ডিম রক্তে কোলেস্টেরল বাড়ায়, হাড়কে দুর্বল করে। এ ছাড়াও আরও নানা রকম পেটের সমস্যা দেখা যেতে পারে এই ডিম খাওয়ার জন্য। এই ধরনের ডিম বিক্রির বিরোধিতা করে তিনি বলেন, ‘‘শুধু ফার্স্ট ফুডের দোকানেই নয়, ছোট-বড়, নামী-অনামী বিভিন্ন কেক প্রস্তুতকারক সংস্থাও সস্তার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করেন হ্যাচারির ডিম। প্রতিদিন সকালেই বিভিন্ন কেক প্রস্তুতকারক সংস্থার গাড়িতে পেটি পেটি হ্যাচারির ডিম ওঠে। রোজ ঠকছেন সাধারণ মানুষ। এর ব্যবহার বন্ধ হওয়া দরকার।’’

যদিও শিয়ালদহ ডিমপট্টির সম্পাদক কাজল গুপ্ত জানাচ্ছেন,ভেতরে ভ্রূণ জন্মে যাওয়া হ্যাচারির ডিম ফেলে দেওয়া হয়। সেগুলো ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয় না ব্যবসায়ীদের। তবে হ্যাচারি ডিমের ভাল বাজার আছে স্বীকার করে নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘হ্যাচারি ডিম তো খারাপ না। আমরা সবসময় নজর রাখি কেউ খারাপ ডিম বিক্রি করছে কি না। এই বাজারে কোনওরকম অসাধু ব্যবসা হয়না।’’

তবে এনইসিসির ওই কর্তা বলেন, ‘‘সচেতনতার মধ্যে দিয়েই এই ডিম বাজারে বন্ধ হওয়া সম্ভব। বড় আকারের সস্তার ডিম দেখেই কেনা উচিত নয়।’’

keep away cheap reddish eggs
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy