Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
urine infection

জল কম খান? প্রায়ই তলপেটে ব্যথা? কিডনিতে পাথর জমছে না তো?

নানা কাজে বাইরে বেরোতে হলেও মুখ ঢাকা থাকে মাস্কে। ফলে বাইরে গেলে খাওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই, একই সঙ্গে জল খাওয়া কমে গিয়েছে। আর কম জল পান করলে অন্যান্য বেশ কিছু অসুবিধার সঙ্গে সঙ্গে মাথা চাড়া ওঠে কিডনি স্টোন।

কিডনিতে পাথর জমলে কোমরের পিছন দিক থেকে তলপেট পর্যন্ত  তীব্র ব্যথা হতে পারে। ফাইল ছবি।

কিডনিতে পাথর জমলে কোমরের পিছন দিক থেকে তলপেট পর্যন্ত  তীব্র ব্যথা হতে পারে। ফাইল ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৯:৫৪
Share: Save:

নিউ নর্মাল জীবনে নভেল করোনাকে সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে। তারই মধ্যে অফিস, পড়াশোনা বা পুজোর বাজার সবই শুরু হয়েছে। তাও একটা কিন্তু থেকেই যায়। নানা কাজে বাইরে বেরোতে হলেও মুখ ঢাকা থাকে মাস্কে। ফলে বাইরে গেলে খাওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই, একই সঙ্গে জল খাওয়া কমে গিয়েছে। আর কম জল পান করলে অন্যান্য বেশ কিছু অসুবিধার সঙ্গে সঙ্গে মাথা চাড়া ওঠে কিডনি স্টোন।

কিডনিতে পাথর জমলে এবং তাকে বিদায় করতে না পারলে ঘোর বিপদে পড়তে হয় বললেন ইউরোলজিস্ট অমিত ঘোষ। বারবার মূত্রনালি সংক্রমণ কিংবা তলপেটে ব্যথা হলে বুঝতে হবে পাথর বসে আছে কিডনিতে। তবে বেশিরভাগ সময়ে স্টোনের উল্লেখযোগ্য কোনও উপসর্গই থাকে না। অনেক সময় সময় স্টোন নিঃশব্দ ঘাতকের মতো মত চুপচাপ বসে থাকতে পারে। যদি কিডনি থেকে বেরিয়ে পড়ে ইউরেথ্রা বা মূত্রনালিতে গিয়ে আটকে যায়, তবে চট করে ধরে ফেলা যায় এই গুপ্ত শত্রুকে, বললেন অমিত ঘোষ।

এনসিবিআই বা ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশনের হিসেব অনুযায়ী আমাদের দেশের প্রায় ১২ শতাংশ মানুষের জীবনের কোনও না কোনও সময় কিডনিতে পাথর হয়। এঁদের মধ্যে ৫০% ক্ষেত্রে অসুখটা গ্রাহ্য না করায় কিডনি খারাপ হয়ে যায়। তাই প্রস্রাব সংক্রান্ত কোনও সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তার দেখানো উচিত।

আরও পড়ুন: ১৫ কোটি মানুষ জেরবার দেশে, হাঁটুর ব্যথা জব্দ করুন পেশীর শক্তি বাড়িয়ে​

অমিত বাবু জানালেন, ক্যালশিয়াম অক্সালেট, ক্যালশিয়াম ফসফেট, ইউরিক অ্যাসিড স্টোন সহ নানান ধরণের পাথর কিডনিতে জমতে পারে। স্টোন হওয়ায় অন্যতম কারণ শরীরে প্রয়োজনীয় জলের অভাব। এছাড়া অক্সালেট জাতীয় স্টোনের ক্ষেত্রে অক্সালেট যুক্ত খাবার অনেক সময় স্টোনের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে। যারা বাড়তি নুন খান তাঁদেরও কিডনিতে স্টোন জমার ঝুঁকি বেশি। এছাড়া বাড়তি ওজন, টাইপ -২ ডায়াবিটিস, গেঁটে বাত, হাইপার থাইরয়েডিজম সহ কিছু অসুখের কারণেও কিডনিতে পাথর জমতে পারে। আবার কোনও কোনও ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও কিডনি স্টোনের ঝুঁকি বাড়ে। বেশির ভাগ সময়েই কিডনিতে পাথর জমলে তা বোঝা যায় না। কিন্তু যদি পাথরের আকার কিছুটা বড় হয় বা প্রস্রাব নালিতে এসে আটকে যায় তখন প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কিডনিতে পাথর জমলে কোমরের পিছন দিক থেকে তলপেট পর্যন্ত তীব্র ব্যথা হতে পারে। এছাড়া প্রস্রাবের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।

অক্সালেট যুক্ত খাবার অনেক সময় কিডনিতে পাথর জমার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে। ফাইল ছবি।

মূত্রনালিতে সংক্রমণ হলে বারে বারে শৌচাগারে হয়। প্রস্রাব চাপার চেষ্টা করলে ব্যথা ও অস্বস্তি শুরু হয়। প্রস্রাব শুরু করার সময় প্রচণ্ড ব্যথা করে। কখনও কখনও প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তও বেরতে পারে। সামগ্রিক ভাবে দুর্বল লাগে। আবার অনেকসময় খাবারে অরুচি হয়। অমিত ঘোষের পরামর্শ এই ধরনের উপসর্গ দেখা গেলে ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধ কিনে খেলে বিপদে পড়ার ঝুঁকি থাকে। চিকিৎসক যদি কিডনি স্টোনের আশঙ্কা করেন তবে অ্যাবডোমিনাল এক্সরে ও প্রয়োজনে সিটি স্ক্যান করতে হতে পারে। এছাড়া রক্তের কয়েকটি রুটিন পরীক্ষা করানো দরকার হতে পারে।

আরও পড়ুন: যাতায়াত গণপরিবহণে, ভিড় রাস্তাতে, কী করবেন কী করবেন না​

অসুখ সম্পর্কে নিশ্চিত হলে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করা হয়। কিডনি স্টোনের আকার যদি খুব ছোট হয় তবে অনেক সময় প্রর্যাপ্ত জলপান করলে প্রস্রাবের সঙ্গে বেরোতে পারে আবার নাও পারে। লিথোট্রিপসি নামে এক বিশেষ পদ্ধতিতে কোনও রকম কাটা ছেঁড়া ছাড়াই শক ওয়েভের সাহায্যে কিডনি স্টোন গুঁড়ো করে দেওয়া হয়। এরপর প্রচুর জল ও কমলালেবুর রস খেলে ইউরিন দিয়ে গুঁড়িয়ে যাওয়া স্টোন বাইরে বেরিয়ে যায়। ১ সেন্টিমিটারের থেকে বড় স্টোন যদি পেলভিক অঞ্চলে থাকে সেক্ষেত্রে পারকিউটেনিয়াস নেফ্রোলিথোটমির (সংক্ষেপে পিসিএনএল) সাহায্যে ছোট্ট একটা ছিদ্রের সাহায্যে স্টোন বার করে দেওয়া হয়। পিসিএনএল করে স্টোন বের দেওয়া সব থেকে কার্যকর চিকিৎসা।

আরও পড়ুন: হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন খাবেন কি খাবেন না, ডাক্তারের উপর ছাড়ুন​

যাঁদের কিডনিতে ২ সেন্টিমিটার আকৃতির স্টোন আছে এবং এর থেকে শরীরের বিভিন্ন অংশে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি আছে সেক্ষেত্রে ছোট্ট সার্জারির সাহায্যে পাথর বের করাই সঠিক চিকিৎসা। কোমরের পিছনে ছোট ছিদ্র করে টেলিস্কোপ ও অত্যাধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে পাথরবের করে দেওয়া হয়। দিন দুয়েক হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়। বাড়িতে ফিরে কয়েক দিনের বিশ্রামের পর স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যায় সহজেই। করোনা ভাইরাসের ভয়ে কোনও শারীরিক অসুবিধা ফেলে না রেখে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। পর্যাপ্ত জল পান করুন, বাইরে গেলে জল সঙ্গে নিয়ে বেরতে ভুলবেন না। পরিচ্ছন্নতা মেনে চলুন, ভাল থাকুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE