Advertisement
E-Paper

নমুনা কম, কিট থাকতেও তাই থমকে পরীক্ষা

কিট ছিল না। তাই রক্ত বা সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড পরীক্ষা করা যাচ্ছিল না। কিট এল। তা সত্ত্বেও ওই সব পরীক্ষা হচ্ছে না! যন্ত্র আছে। তবু কেন যে রোগ নির্ণয় করা যাচ্ছে না, ভেবে পাচ্ছেন না এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে মালদহ হাসপাতালে ভর্তি থাকা চার রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়স্বজন। রোগটা কী, তা জানার জন্য চার দিন ধরে অপেক্ষা করে আছেন তাঁরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৩৪

কিট ছিল না। তাই রক্ত বা সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড পরীক্ষা করা যাচ্ছিল না। কিট এল। তা সত্ত্বেও ওই সব পরীক্ষা হচ্ছে না!

যন্ত্র আছে। তবু কেন যে রোগ নির্ণয় করা যাচ্ছে না, ভেবে পাচ্ছেন না এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে মালদহ হাসপাতালে ভর্তি থাকা চার রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়স্বজন। রোগটা কী, তা জানার জন্য চার দিন ধরে অপেক্ষা করে আছেন তাঁরা।

মালদহ মেডিক্যালে এক সময় এনসেফ্যালাইটিসের কিট ছিল। কিন্তু ব্যবহার না-করার ফলে সেগুলির মেয়াদ ফুরিয়ে যায়। তার পরে দীর্ঘ দিন ধরে ওই হাসপাতালে কিট নেই। অনেক টানাপড়েনের পরে গত বুধবার কলকাতা থেকে একটি কিট আসে। বৃহস্পতিবার এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি থাকা চার রোগীর রক্ত এবং সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইডের নমুনাও নেন হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ। তা সত্ত্বেও রবিবার পর্যন্ত রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়েরা নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পেলেন না কেন?

ওই হাসপাতালের অধ্যক্ষ শৈবাল মুখোপাধ্যায় যে-জবাব দিয়েছেন, তাতে দক্ষিণ দিনাজপুরের মুস্তাকিন খাতুন, মালদহের হবিবপুর ব্লকের কাদিরপুর গ্রামের কাশোবালো বর্মণ, কালিয়াচকের জালালপুরের সুরাতন বেওয়া এবং মালদহ শহরের মহেশমাটির নব্বো বিবির আত্মীয়েরা হতবাক। কী বলেছেন অধ্যক্ষ?

শৈবালবাবুর ব্যাখ্যা, “৯০ থেকে ৯৫ জনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ না-করা পর্যন্ত জাপানি এনসেফ্যালাইটিস কিটে রক্ত পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। অন্তত ৯০ জনের রক্ত পাওয়া যাক। তার পরে পরীক্ষা করা হবে।”

অর্থাৎ ৯৫ জনের মধ্যে ওই রোগের উপসর্গ এবং তাঁদের রক্ত ও ফ্লুইডের নমুনা না-পাওয়া পর্যন্ত ভর্তি থাকা রোগীদের নমুনা পরীক্ষা হবে না! এবং তাঁদের শরীরে যদি ওই মারণ রোগের জীবাণু বাসা বেঁধেও থাকে, নমুনা পরীক্ষা না-হওয়ায় চিকিৎসা আটকে থাকবে! চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ওই কিটের খিদে (৯০-৯৫টি নমুনা) মেটানোর মতো রোগী না-আসা পর্যন্ত!

হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের এমন ব্যাখ্যা মেনে নিতে পারছেন না রোগীর আত্মীয়েরা। সুরাতন বেওয়ার ছেলে আব্দুর রহিম বলেন, “মা এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত নাকি সাধারণ জ্বরে ভুগছেন, কিছুই জানতে পারছি না। কী চিকিৎসা হচ্ছে, বুঝতে পারছি না তা-ও।” নব্বো বিবিকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জ্বর নিয়ে ভর্তি করিয়েছিলেন ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর আশিস কুণ্ডু। কাউন্সিলর বলেন, “কবে রক্তপরীক্ষা হবে, তা জানার জন্য হাসপাতালের অধ্যক্ষকে ফোন করেছিলাম। উনিও কোনও নির্দিষ্ট দিনক্ষণ জানাতে পারেননি।” রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়স্বজন তো বটেই, শাসক দলের নেতারাও ধন্দে!

সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন।

বিষয়টি নিয়ে বিব্রত জেলা রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীও। তিনি বলেন, “যখন যাঁর রক্ত সংগ্রহ করা হবে, তখনই তাঁর নমুনা পরীক্ষা করতে হবে। কেন রক্ত পরীক্ষা করা হয়নি, খোঁজ নিচ্ছি।” জেলা কংগ্রেস বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনে নামার কথা ভাবছে। জেলা সংগ্রেস সভানেত্রী তথা সাংসদ মৌসম বেনজির নুর বলেন, “এটা কেমন নিয়ম? রক্তপরীক্ষা না-হলে এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত কি না, বোঝা যাবে কী ভাবে? এমন চললে আন্দোলনের কথা ভাবতে হবে।”

৯০-৯৬ জন জনের নমুনা সংগ্রহের আগে কি জীবাণু পরীক্ষা করা কোনও ভাবেই সম্ভব নয়?

রাজ্যের স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের পরীক্ষা ব্যয়বহুল। সেই জন্য একসঙ্গে কয়েক জনের রক্ত সংগ্রহ করার পরেই রক্ত পরীক্ষা করা হয়। “তবে সবই পরিস্থিতির উপরে নির্ভর করছে। প্রয়োজন হলে কিট ভাঙতে হবে। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি,” আশ্বাস দিয়েছেন ওই স্বাস্থ্যকর্তা।

স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তার বক্তব্য অনুযায়ী ওই কিট ভেঙেও নমুনা পরীক্ষার কাজ চালানো যায়। তা সত্ত্বেও মালদহ মেডিক্যালে মুস্তাকিন, কাশোবালা, সুরাতনদের রক্ত এবং সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইডের নমুনা অপরীক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে।

একই সমস্যা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও। এক বার কিট এলে নমুনা পরীক্ষার জন্য অন্তত চার দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কারণ, একসঙ্গে অন্তত ৯০-৯৫টি নমুনা জোগাড় না-হলে এনসেফ্যালাইটিসের পরীক্ষা করা হচ্ছে না। তাতে রোগীদের রিপোর্ট পেতে কিছুটা দেরি হচ্ছে বলে অভিযোগ। হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ অবশ্য কিটের ঘাটতির কথা মানতে রাজি নন। তাঁরা জানান, কিট সরবরাহ করা হচ্ছে। আরও কিট পাঠাতেও বলা হয়েছে। কিট নিয়ে এখন কোনও সমস্যা নেই।

encephalitis medical kit maldah medical
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy