Advertisement
E-Paper

দৃষ্টান্ত দিল্লি, দেখেও রোগীর পাশে দাঁড়াচ্ছে না বাংলা

নিজেরা পারছে না। সোয়াইন ফ্লু পরিস্থিতির মোকাবিলায় অন্যান্য রাজ্য কী করছে, তা থেকেও শিক্ষা নেওয়ার কোনও লক্ষণ দেখাচ্ছে না পশ্চিমবঙ্গ!হাজারো প্রশ্ন, হাজারো সমালোচনা সত্ত্বেও সোয়াইন ফ্লু-র ব্যাপারে সতর্কতা-সচেতনতার প্রচারে গা নেই রাজ্য সরকারের। ওই মারণ রোগ নিয়ে মানুষের বিভ্রান্তি কী ভাবে দূর করা যায়, সেই বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের কোনও পরিকল্পনাই নেই। অন্যেরা কী ভাবে সেটা করছে, তা অনুসরণের চেষ্টাও নেই তাদের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৫ ০৩:৩৭

নিজেরা পারছে না। সোয়াইন ফ্লু পরিস্থিতির মোকাবিলায় অন্যান্য রাজ্য কী করছে, তা থেকেও শিক্ষা নেওয়ার কোনও লক্ষণ দেখাচ্ছে না পশ্চিমবঙ্গ!

হাজারো প্রশ্ন, হাজারো সমালোচনা সত্ত্বেও সোয়াইন ফ্লু-র ব্যাপারে সতর্কতা-সচেতনতার প্রচারে গা নেই রাজ্য সরকারের। ওই মারণ রোগ নিয়ে মানুষের বিভ্রান্তি কী ভাবে দূর করা যায়, সেই বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের কোনও পরিকল্পনাই নেই। অন্যেরা কী ভাবে সেটা করছে, তা অনুসরণের চেষ্টাও নেই তাদের। রাজ্যের চিকিৎসকদের অনেকেই একান্ত আলোচনায় স্বীকার করে নিচ্ছেন, দিল্লির সরকার সোয়াইন ফ্লু-র মোকাবিলায় কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা জেনে নিয়ে কাজে লাগালে মানুষের বিভ্রান্তি অনেকটাই দূর করা যেত।

কী করেছে দিল্লি প্রশাসন?

সোয়াইন ফ্লু কতটা মারাত্মক অসুখ, তার উপসর্গ কী দিল্লি এ-সব তো খুঁটিয়ে জানাচ্ছেই। সেই সঙ্গে এই রোগ নির্ণায়ক পরীক্ষা কোথায় হবে এবং ওষুধ কোথায় পাওয়া যাবে, তারও তালিকা প্রকাশ করেছে তারা। কিন্তু এ রাজ্যে এখনও গোটা বিষয়টি নিয়েই বিভ্রান্তি চরমে। রোগ পরীক্ষার জন্য কোথায় যেতে হবে, তাতে কত খরচ পড়বে, ক’দিনে বা কী ভাবে রিপোর্ট মিলবে সব ব্যাপারেই এখানকার সাধারণ মানুষ অন্ধকারে।

অথচ সব দিক থেকে রোগীদের পাশে দাঁড়িয়েছে দিল্লি। ১৯টি সরকারি এবং সাতটি বেসরকারি হাসপাতালের তালিকা প্রকাশ করেছে তারা। ওই সব হাসপাতালে সোয়াইন ফ্লু-র ভাইরাস এইচ১এন১ নির্ণয়ের পরীক্ষা হচ্ছে। মানুষ যাতে কোনও ভাবেই সমস্যায় না-পড়েন, সেই জন্য প্রচার করা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকের নাম এবং মোবাইল নম্বরও। শুধু শহর নয়, জেলার ক্ষেত্রেও প্রকাশ করা হয়েছে ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকদের যোগাযোগের নম্বর। একই সঙ্গে কোন কোন বেসরকারি হাসপাতালে রোগ পরীক্ষায় কত খরচ, সেটাও প্রকাশ করা হয়েছে।

আর কী করছে পশ্চিমবঙ্গ?

রাজ্যে নিখরচায় সোয়াইন ফ্লু-র ভাইরাস পরীক্ষার সরকারি প্রতিষ্ঠান বলতে বেলেঘাটার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজেজ বা নাইসেড। এই পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়েছে তিনটি বেসরকারি হাসপাতালকেও। কিন্তু সেই সব হাসপাতালের নাম কী এবং তাদের কে কত টাকায় নমুনা পরীক্ষা করে, সরকার তা ঘোষণা করা হয়নি। ফলে সাধারণ মানুষ এ ব্যাপারে অসহায় বোধ করছেন। স্বাস্থ্য দফতরের তরফে বেসরকারি হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে, যথাযথ উপসর্গ ছাড়াই নিছক বাণিজ্যিক কারণে বহু ক্ষেত্রেই রোগী ভর্তি এবং এইট১এন১ পরীক্ষা করা হচ্ছে। রোগী-স্বার্থে কাজ করে, এমন কিছু সংগঠন প্রশ্ন তুলেছে, কোন উপসর্গ যথাযথ আর কোনটা নয়, সেটা মানুষকে জানানোর জন্য সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে কি? স্বাস্থ্য দফতর বলছে, অনেক বেসরকারি হাসপাতাল অকারণে ভর্তি করিয়ে নিচ্ছে, রোগ পরীক্ষা করাচ্ছে। ওই সব হাসপাতাল যে ন্যায্য টাকাই নিচ্ছে, তার কোনও নিশ্চয়তা আছে কি? রোগ পরীক্ষার খরচ কত, সরকারের তরফে তো আমজনতাকে তা জানানোই হচ্ছে না।

স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষ কর্তাদের দাবি, যতটুকু জানানোর, তা তাঁরা দফতরের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানিয়েছেন। কিন্তু সেই ওয়েবসাইট কি আমজনতা দেখে? কেন তাদের জন্য প্রচারের ব্যবস্থা থাকবে না?

ওই দফতরের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, মূল সচেতনতাটা থাকা দরকার হাসপাতালগুলির এবং সেখানকার চিকিৎসকদের। তাঁরা ঠিক সময়েই সব কিছু জেনেছেন। কিন্তু তাঁদের অনেকে এই বিষয়ে সতর্ক হননি বলে ওই স্বাস্থ্যকর্তার অভিযোগ। “মানুষের যাতে সমস্যা না-হয়, সেই জন্য চিকিৎসকদের হুঁশিয়ার করেছি। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে শো-কজও করা হয়েছে। এই মুহূর্তে এর বেশি কিছু করার নেই। সোয়াইন ফ্লু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে,” বললেন ওই স্বাস্থ্যকর্তা।

পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণেই থাকবে, তা হলে রোজ রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে কী ভাবে? ওই স্বাস্থ্যকর্তার জবাব, “এই ধরনের যে-কোনও সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করলে তা নিয়ন্ত্রণে আসতে কিছুটা সময় লাগে। ম্যাজিকের মতো এক দিনে সব কিছু বদলে যায় না। আশা করা যায়, দিন কয়েকের মধ্যে পরিস্থিতি বদলাবে।”

পরিস্থিতি বদলের লক্ষণ অবশ্য রবিবারেও বিশেষ দেখা যায়নি। স্বাস্থ্যসচিব মলয় দে জানান, থুতু পরীক্ষায় এ দিন আরও ন’জনের শরীরে সোয়াইন ফ্লু-র ভাইরাস ধরা পড়েছে। এই নিয়ে রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৪৩৬। এই মুহূর্তে ৯৮ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে আছেন ৪৭ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালে ৫১ জন। চিকিৎসার পরে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন ৩১৪ জন।

অন্যান্য রাজ্যেও সোয়াইন ফ্লু-র দাপট অব্যাহত আছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় রাজস্থানে মৃত্যু হয়েছে আরও তিন জনের। এই নিয়ে ওই রাজ্যে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৪০০।

swine flu h1n1 virus west bengal healh department Health Depertment Hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy