বিমল মিত্রের ‘সাহেব বিবি গোলাম’ উপন্যাস থেকে হিন্দি ছবি তৈরি করবেন। পরিচালক নিজে বাংলা বুঝতে পারেন, বলতেও পারেন। কিন্তু উপন্যাসের স্বত্ব নেওয়ার পর তা হিন্দিতে অনুবাদের দায়িত্ব দিলেন চিত্রনাট্যকার আব্রার আলভিকে। কাজের গতি ধীরে হবে বলে পরিচালক তৎকালীন বম্বের অদূরে খণ্ডালায় একটি বাংলো ভাড়া করলেন। সেখানেই বিমল মিত্র এবং আব্রারকে ডেকে নিলেন। একটানা দু’মাসে কাজ শেষ হয়। তার পর শুরু হয় ছবির শুটিং। সিনেমার প্রতি এতটাই নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন মানুষটি। পরিচালকের নাম গুরু দত্ত।
আরও পড়ুন:
মাত্র ৩৯ বছরের জীবনকাল। পরিচালিত ছবির সংখ্যা ৮। কিন্তু ভারতীয় চলচ্চিত্রে গুরু দত্তের অবদান আজও চর্চিত বিষয়। পরিচালনা থেকে অভিনয়, কারিগরি জ্ঞান থেকে লেখকসত্তা— বহুমুখী প্রতিভাধর মানুষটি সত্যিই বিরল ব্যক্তিত্ব। সব সময় বলতেন, ছবিতে সত্যের অন্বেষণই ছিল তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। আর সত্যের স্বাদ সব সময় তিক্ত।
চলতি বছর গুরু দত্তের জন্মশতবার্ষিকী। ৯ জুলাই ছিল তাঁর জন্মদিন। সেই উপলক্ষে প্রয়াত পরিচালকের জীবনকে ফিরে দেখার উদ্যোগ নিয়েছিল ‘কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটি’ (কেসিসি)। শুক্রবার সারা দিন ব্যাপী এক মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানে স্মরণ করা হল দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রনির্মাতা তথা অভিনেতাকে। অনুষ্ঠানের নাম ‘ইয়ে দুনিয়া অগর মিল ভি জায়ে তো: রিমেমবারিং গুরু দত্ত’।
গুরু দত্তের বিভিন্ন ছবির পোস্টারে সজ্জিত প্রদর্শনী। ছবি: সংগৃহীত।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই গুরু দত্তের কাজ নিয়ে বলেন অধ্যাপক ইরা ভাস্কর (জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস অ্যান্ড এস্থেটিক্স বিভাগের প্রাক্তন ডিন)। বিষয় ছিল, ‘‘কোরিয়োগ্রাফিং উইথ লাইট অ্যান্ড মুভমেন্ট অ্যান্ড মোলডিং উইথ মিউজ়িক: ফর্ম, এফেক্ট, ইডিয়োলজি ইন গুরু দত্ত’জ় সিনেমা।’’ ইরার মতে, হিন্দি ছবিতে ‘নয়ার’ ঘরানার অন্যতম পথপ্রদর্শক ছিলেন গুরু। ‘বাজ়ি’, ‘জাল’, ‘আর পার’ ছবিগুলি তার অন্যতম উদাহরণ। পাশাপাশি হিন্দি ছবিতে ‘মেলোড্রামা’কে অন্য স্তরে উন্নীত করেন তিনি।
‘পিয়াসা’, ‘কাগজ কে ফুল’ এবং ‘সাহেব বিবি অউর গুলাম’— তিনটি ছবিতে আলো, ক্লোজ় আপ এবং সঙ্গীতকে কী ভাবে ব্যবহার করেন গুরু, তা বিভিন্ন ভিডিয়ো ক্লিপিংয়ের সাহায্যে উপস্থিত শ্রোতাদের সামনে তুলে ধরেন ইরা। এই পর্বের পরে দেখানো হয়, গুরু দত্তকে নিয়ে তৈরি নাসরিন মুন্নি কবীরের তথ্যচিত্র ‘ইন সার্চ অফ গুরু দত্ত’।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বের সূচনা হয়, অধ্যাপক মধুজা মুখোপাধ্যায়ের বক্তৃতার মাধ্যমে। ‘পিয়াসা’ ছবিকে স্মরণ করে এই পর্বের বিষয় ছিল ‘পেপার ফ্লাওয়ার্স: কনজ়িউরিং আ বায়োগ্রাফি অফ ইন্ডিয়ান সিনেমা’। সন্ধ্যায় ‘পিয়াসা’ ছবিটির রেস্টোর্ড সংস্করণ প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানে গুরু দত্তের বিভিন্ন সিনেমার পোস্টার এবং ছবিতে সাজানো প্রদর্শনীটিও উপস্থিত দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।