Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

করোনার পরে ‘লং কোভিড’ যন্ত্রণা

কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক তথা ফুসফুসের রোগ বিভাগের প্রধান ইন্দ্রনীল হালদার বলছেন, ‘‘করোনা মুক্ত হওয়ার পর রোগীদের মধ্যে নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। ফুসফুসের সমস্যাই উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

প্রতীকী চিত্র

প্রতীকী চিত্র

দিগন্ত মান্না
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২৩:২৩
Share: Save:

করোনার শিকার হচ্ছেন প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ। রোগ থেকে সুস্থ হওয়ার সংখ্যাও নেহাত কম নয়। কিন্তু সুস্থ হওয়া একাংশের শরীরের আরও নতুন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক মহল। বিভিন্ন মেডিক্যাল জার্নালেও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ হয়েছে। যে বিষয়টি চিকিৎসক এবং গবেষকদের ভাবাচ্ছে, তার নাম তাঁরা দিয়েছেন ‘লং কোভিড’।

‘লং কোভিড’ কী? চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, উপসর্গযুক্ত করোনা আক্রান্তের একাংশ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পরেও তাঁদের শরীরে নানা নতুন উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। যেমন, মাথা ব্যথা, ঘন ঘন জ্বর আসা, ফুসফুসের সমস্যা, চামড়ায় ফুসকুড়ির মতো কিছু হওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, মানসিক হতাশা ইত্যাদি। পশ্চিমবঙ্গেও সরকারি হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজগুলোয় এ ধরনের রোগীর সংখ্যা বেড়েছে বলে খবর। পরিসংখ্যান বলছে, এ রাজ্যে করোনা আক্রান্ত ৮০ শতাংশই উপসর্গহীন বা অল্প উপসর্গযুক্ত। বাকি ২০ শতাংশের মধ্যে নিউমোনিয়ার লক্ষ্মণ থাকে। এই ২০ শতাংশের মধ্যে চার থেকে পাঁচ শতাংশ রোগী মারা যাচ্ছেন। তবে দাবি, করোনা-নিউমোনিয়া আক্রান্ত ১৫ শতাংশ রোগী সুস্থ হয়ে ওঠার পর, তাঁদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে নানা ধরনের উপসর্গ। যার মধ্যে ফুসফুসের দীর্ঘ মেয়াদি সমস্যা সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ বাড়িয়েছে চিকিৎসকদের।

কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক তথা ফুসফুসের রোগ বিভাগের প্রধান ইন্দ্রনীল হালদার বলছেন, ‘‘করোনা মুক্ত হওয়ার পর রোগীদের মধ্যে নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। ফুসফুসের সমস্যাই উদ্বেগ বাড়িয়েছে। আমাদের একদল চিকিৎসক বিষয়টি নিয়ে স্টাডি গ্রুপ তৈরি করে পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে। মেডিক্যাল কলেজের এথিক্স কমিটির কাছে এই রোগের চিকিৎসার ব্যাপারে আবেদন জানানো হয়েছে।’’ ওই চিকিৎসকের কথায়, ‘‘এই বিষয়ে গবেষণা দরকার। গবেষণার কাজ শুরু করার জন্য রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে আবেদনের কথা ভাবা হচ্ছে।’’

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, করোনামুক্তি পরবর্তী ফুসফুসের সমস্যার সুনির্দিষ্ট কোনও ওষুধ আপাতত নেই। উপসর্গ দেখে ওষুধ প্রয়োগ করা হলেও তেমন সাড়া মিলছে না বলে দাবি। মেডিক্যাল জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট’ ও আমেরিকার ফিজিশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, বিষয়টি গবেষণা শুরু হয়েছে। সল্টলেকের একটি হাসপাতালের ফুসফুসের রোগের চিকিৎসক অংশুমান মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘করোনা সেরে গেলেও তার পর ফুসফুসের উপর যে ধরনের প্রভাব পড়ছে, তার কোনও চিকিৎসা আপাতত নেই। হাসপাতালের এথিক্স কমিটির কাছে আবেদন ভিত্তিতে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তা ফলপ্রসূ হচ্ছে না।’’ করোনা মুক্ত হওয়া শিশুদের মধ্যে ‘লং কোভিড’এর প্রভাব দেখা দিচ্ছে বলে জানাচ্ছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রবীর ভৌমিক। তিনি বলেন, ‘‘করোনা মুক্ত হয়ে ওঠার পর শিশুরা কিছুটা নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। দেখা দিচ্ছে মাথার যন্ত্রণা, ঘন ঘন পেট খারাপ ইত্যাদি। সত্যিই উদ্বেগের। এ নিয়ে গবেষণা দরকার।’’

১২ জুলাই কোভিড আক্রান্ত হয়েছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের বহিচাড় বিপিন শিক্ষানিকেতনের শিক্ষক মৌসম মজুমদার। সুস্থ হয়ে ১৮ জুলাই বাড়ি ফেরেন। কিন্তু নতুন কিছু রোগ বাসা বেঁধেছে এই শিক্ষকের শরীরের। মাঝেমধ্যে মাথার যন্ত্রণা তো হয়ই। তার সঙ্গেই উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিয়েছে মৌসমের। এই সমস্যা তাঁর আগে ছিল না বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘করোনা মুক্ত হয়ে আসার পর থেকে নিয়মিত প্রেসারের ওষুধ খেতে হচ্ছে। মাঝেমধ্যে মাথার যন্ত্রণা হয়। অল্প কিছুতেই আঁতকে উঠি। মনে সব সময় একটা ভীতি ভাব কাজ করছে।’’ পূর্ব মেদিনীপুর জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচরণ মণ্ডল বললেন, ‘‘কোভিড সেরে গেলেও রোগীর শরীরের তার জীবাণু বেশ কয়েক মাস পর্যন্ত থাকতে পারে। তার ফলে করোনা জয়ীদের শরীরে অনেক সময় নানা নতুন সমস্যা দেখা দেয়। তবে আমাদের জেলায় লং কোভিড নিয়ে এখনও কেউ সরকারি হাসপাতালে আসেননি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Covid19 Corona pandemic
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE