Advertisement
E-Paper

ছেঁড়া গদি, দেখলেন স্বাস্থ্য-কর্তা

মানসিক হাসপাতাল কেমন চলছে, খোঁজ নিতে পুরুলিয়ায় এসেছিলেন কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্বাস্থ দফতরের কর্তারা। কিন্তু রাঢ়বঙ্গের এই হাসপাতাল যে রোগী থাকলেও চিকিৎসকের অভাব, মেশিন থাকলেও যে চালানোর লোক নেই, তা দেখেই তাঁদের ফিরতে হল। তবে তাঁদের পরিদর্শনের মাঝে, শিকলে বাঁধা এক রোগীকে ভর্তি করা হয়। রোগীর বাড়ির লোকেদের অভিযোগ, এতদিন বারবার ফিরিয়ে দেওয়া হলেও এ দিন তাঁকে ভর্তি করিয়ে নেওয়া হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৫ ০২:১০
পুরুলিয়া মানসিক হাসপাতালে স্বাস্থ্য-কর্তাদের পরিদর্শনের সময় ভর্তি করা হয় শিকলে বাঁধা এই রোগীকে। —নিজস্ব চিত্র।

পুরুলিয়া মানসিক হাসপাতালে স্বাস্থ্য-কর্তাদের পরিদর্শনের সময় ভর্তি করা হয় শিকলে বাঁধা এই রোগীকে। —নিজস্ব চিত্র।

মানসিক হাসপাতাল কেমন চলছে, খোঁজ নিতে পুরুলিয়ায় এসেছিলেন কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্বাস্থ দফতরের কর্তারা। কিন্তু রাঢ়বঙ্গের এই হাসপাতাল যে রোগী থাকলেও চিকিৎসকের অভাব, মেশিন থাকলেও যে চালানোর লোক নেই, তা দেখেই তাঁদের ফিরতে হল। তবে তাঁদের পরিদর্শনের মাঝে, শিকলে বাঁধা এক রোগীকে ভর্তি করা হয়। রোগীর বাড়ির লোকেদের অভিযোগ, এতদিন বারবার ফিরিয়ে দেওয়া হলেও এ দিন তাঁকে ভর্তি করিয়ে নেওয়া হয়।

উত্তরপ্রদেশের এক চিকিৎসকের দায়ের করা জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট দেশের মানসিক হাসপাতালগুলির অবস্থা খতিয়ে দেখে রিপোর্ট চেয়েছে। সেই প্রেক্ষিতেই বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শন চলছে। পুরুলিয়ায় বৃহস্পতিবার হাল দেখতে আসেন কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য দফতরের যুগ্ম সচিব ধরিত্রী পান্ডা, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী, কমিটির সদস্য রাজ্য আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সদস্য সচিব অভিজিৎ সোম, রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের সদস্য সচিব লিংডো এবং দুই চিকিৎসক প্রদীপ সাহা ও দিব্যেন্দুগোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিলেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মানবেন্দ্র ঘোষও।

এ দিন সকালে মহিলা সংশোধনাগারের পাশে মানসিক হাসপাতালে গিয়ে প্রথমে বহির্বিভাগে যান ধরিত্রীদেবী। ফার্মাসি বিভাগে গিয়ে তিনি রোগীদের ওষুধপত্র খুঁটিয়ে দেখেন। সেখান থেকে বেরিয়ে তাঁর নজরে পড়ে যায় একটা টেবিলের উপরে ছেঁড়া গদি পাতা রয়েছে। ধরিত্রীদেবী জানতে চান টেবিল কেন রাখা রয়েছে। মানসিক হাসপাতালের সুপার রঞ্জিতকুমার কর বলেন, ‘‘এখানে রোগীরা বসেন।’’ কিন্তু টেবিলের অবস্থা এমন কেন, ধরিত্রীদেবী জানতে চান। বিশ্বরঞ্জনবাবু প্রশ্ন তোলেন, ‘‘রোগী কল্যাণ সমিতির তহবিল থেকে এটা সারানো হয়নি কেন?’’

জবাব মেলার আগেই তাঁরা চিকিৎসকদের ঘরে গিয়ে এখানে কত রোগী আসেন, কেমন পরিবেশে তাঁরা কাজ করেন, তা জানতে চান। রোগীরা হঠাৎ চিকিৎসা করাতে আসা বন্ধ করলে তাঁরা কি সেই রোগী সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন, এক চিকিৎসকের কাছে জানতে চান বিশ্বরঞ্জনবাবু। ওই চিকিৎসকের কাছে এ সদুত্তর অবশ্য মেলেনি। বহির্বিভাগে আসা রোগীদের বসার জায়গায় প্রচণ্ড গরম এবং মাথার উপরে যথেষ্ঠ সংখ্যায় পাখা না দেখে ধরিত্রীদেবী বিষয়টি কমিটির সদস্যদের নোট নিতে বলেন।

কমিটির সদস্যেরা হাসপাতালের অন্তর্বিভাগে গিয়ে রোগীদের কী ধরনের খাবার দেওয়া হয় তাও খতিয়ে দেখেন। সেখানে কমিটির সদস্যদের কাছে ঝাড়খণ্ডের পাকুড়ের বাসিন্দা ইন্দ্রাণী সাও আর্জি জানান, তাঁকে বাড়ির লোকজন নিয়ে যেতে চাইছেন না। কিন্তু তিনি বাড়ি ফিরতে চান। পরে ওই কমিটি ঝাড়খণ্ড সরকারের মাধ্যমে ওই মহিলাকে বাড়ি ফেরানোর চেষ্টা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

এই পরিদর্শনের উদ্দেশ্য নিয়ে ধরিত্রীদেবী জানান, দেশের সমস্ত মানসিক হাসপাতালগুলিকে নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার একটি তথ্যপঞ্জি (ডেটাবেস) তৈরি করছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা রোগীদের ওষুধপত্র থেকে খাবারের মান দেখছি। সে সব নিয়েই রিপোর্ট করা হবে।’’ ওই কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁরা এ দিন দেখেছেন, এই হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল সাইকোলোজিস্ট নেই। চিকিৎসকেরও অভাব রয়েছে। জেলার একমাত্র মানসিক হাসপাতালে এমডি সাইকিয়াটিস্ট নেই। রোগীদের চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত ইলেকট্রো কনভালসিভ থেরাপি যন্ত্র থাকলেও অ্যানাস্থেটিস্টের অভাবে তার ব্যবহারই হয়নি অনেকদিন। ধরিত্রীদেবী বলেন, ‘‘যে সব ঘাটতি আমাদের চোখে পড়েছে তা রিপোর্টে উল্লেখ থাকবে।’’ বিশ্বরঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘এখানে ১০০ জন চিকিৎসককে নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের মধ্যে ২৪ জন যোগ দিয়েছেন। আমরা তো জোর করে কাউকে কাজে যোগ দেওয়াতে পারি না। তবু আমরা চিকিৎসক পাঠানোর বিষয়টি দেখছি।’’

তাঁদের গাড়ি যখন হাসপাতালের ভিতরে ঢুকছিল, সেই সময় সদর দরজার বাইরে শিকলে বাঁধা অবস্থায় বসেছিলেন রানিবাঁধ থানা এলাকার ঠুঁটাশোল গ্রামের প্রায় ৩৬ বছরের যুবক রবিলোচন মাহাতো। পরে তাঁকে ভর্তি করিয়ে শিকল খুলে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাঁর সঙ্গে আসা আত্মীয়েরা অভিযোগ করেন, ‘‘আগে কয়েকবার চিকিৎসা করাতে নিয়ে এসেছি। কিন্তু প্রতিবার নানা কারণ দেখিয়ে ওঁরা ফিরিয়ে দিয়েছে। তবে এ দিন কী হল কে জানে, ওঁরা ভর্তি করিয়ে নিলেন।’’ ওই যুবকের বাবা পেশায় ক্ষুদ্র চাষি ভরত মাহাতো বলেন, ‘‘নবম শ্রেণি পর্যন্ত ছেলে পড়েছে। কলকাতায় কাজ করাতে গিয়ে ওর মাথা বিগড়ে গেল। মারধর করত বলে বাধ্য হয়ে বাড়িতে কয়েকমাস পায়ে শিকল বেঁধে রেখেছিলাম। কিন্তু আগে হাসপাতালে ভর্তি করছিল না। তবে এ দিন কপাল ভাল। ওকে ভর্তি করে নিল।’’

রোগীর ভর্তি নিয়ে টালবাহানার অভিযোগ সম্পর্কে হাসপাতালের সুপার বলেন, ‘‘হাসপাতালে ভর্তির জন্য কিছু বিধি মানতে হয়। সে সব না মানলে ভর্তি নেওয়া যায় না।’’ সব শুনে ধরিত্রীদেবী বলেন, ‘‘হয়রানি এড়াতে রোগী ভর্তির প্রক্রিয়ার আরও সরলীকরণ হওয়া প্রয়োজন বলে দাবি উঠছে। আমরা এই কথাটিও রিপোর্টে রাখব।’’

Health officer purulia mental hospital rape police petient
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy