Advertisement
০১ মে ২০২৪
Mental Health

ব্যস্ততার জন্য মায়ের ফোন ধরছেন না? শরীর-মনে কী প্রভাব পড়ছে, জানাচ্ছে সমীক্ষা

মায়েরা দু’বাহুর মধ্যে সন্তানকে জড়িয়ে ধরে আদর করলে, তাদের যেমন নিশ্চিন্ত লাগে, ফোনে মায়ের গলার আওয়াজ শুনলেও ঠিক একই রকম সুখানুভূতি হয়।

Mother’s phone call as comfortable as hug, says oxytocin study.

তোমায় ছাড়া ঘুম আসে না মা। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নিউ ইয়র্ক শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:৫৭
Share: Save:

মায়ের গায়ের গন্ধ চেনে সদ্যোজাত শিশুরা। বাড়িতে তো বটেই, স্কুলে কিংবা খেলার মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে বেকায়দায় পড়লেই মায়ের আঁচলের আড়ালে আশ্রয় নিতে হয়। মায়ের বুকে মুখ গুঁজে অনেক না পাওয়াকেও ভুলে থাকতে চেষ্টা করে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছনো ছেলেমেয়েরা। কিন্তু নিজের শহর ছেড়ে দূরে কোথাও পড়তে বা চাকরি করতে যাওয়া ছেলেমেয়েদের কাছে মায়ের ফোনই সম্বল। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ফোনের ওপার থেকে মায়ের কণ্ঠ দূরে থাকা ছেলেমেয়েদের কাছে বুকে জড়িয়ে রাখার মতোই আরামদায়ক। আমেরিকার এক দল গবেষক বিশ্বাস করেন, মায়েরা দু’বাহুর মধ্যে সন্তানকে জড়িয়ে ধরে আদর করলে, তাদের যেমন নিশ্চিন্ত লাগে, ফোনে মায়ের গলার আওয়াজ শুনলেও ঠিক একই রকম সুখানুভূতি হয়।

গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মা-মেয়ের যে বন্ধন তা অক্সিটোসিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে তোলে। কন্যা সন্তানদের ক্ষেত্রে সামনে থেকে তো বটেই ফোনের ওপার থেকে মায়ের গলা শুনে একই রকম লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে। ‘প্রসিডিংস ইফ দ্য রয়্যাল সোসাইটি বি’ জার্নালে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে গবেষকেরা তুলে ধরেছেন ৬১ জন মেয়ের কথা। যাদের প্রত্যেকেরই বয়স ৭ থেকে ১২-র মধ্যে। তাদের প্রত্যেককেই একেবারে অচেনা কোনও ব্যক্তির সামনে অঙ্ক কষতে দেওয়া হয়েছিল। তাদের মধ্যে থেকেই বেশ কিছু জনকে একেবারে অজানা কোনও একটি বিষয়ের উপর বক্তৃতা করতে বলা হয়েছিল। এমন অযাচিত পরিস্থিতিতে পড়ে মুহূর্তের মধ্যে তাদের হৃদ্‌স্পন্দন বেড়ে গিয়েছিল। মানসিক চাপ এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, তাদের সকলের শরীরে কর্টিজ়ল হরমোন ক্ষরণ হতে শুরু করেছিল অত্যধিক মাত্রায়। পুরুষদের চেয়ে মেয়েদের শরীরে অক্সিটোসিন হরমোনের পরিমাণ সাধারণত বেশি থাকে, তাই এই গবেষণায় মেয়েরাই গুরুত্ব পেয়েছে।

এই বিষয়ে বিশদে জানার জন্যে সমীক্ষায় অংশ নেওয়ার মেয়েদের তিনটি দলে ভাগ করে দিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। একদলকে রাখা হয়েছিল তাদের মায়েদের সঙ্গে। শারীরিক ভাবে তারা মায়ের স্পর্শ অনুভব করতে পারত। অন্য একটি দলকে রাখা হয়েছিল মায়েদের থেকে দূরে। কিন্তু তাদের প্রত্যেককেই মায়েদের সঙ্গে নিয়মিত ফোনে যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছিল। তৃতীয় দলটিকে বলা হয়েছিল সিনেমা দেখে নিজের আবেগ, অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করতে। সমীক্ষা শেষে শরীরে অক্সিটোসিন হরমোন ক্ষরণের পরিমাণ যাচাই করার জন্যে প্রত্যেকের মূত্র এবং লালা পরীক্ষা করে দেখা হয়। সেখানে দেখা যায়, প্রথম এবং দ্বিতীয় দলটিতে থাকা মেয়েদের শরীরে অক্সিটোসিন অর্থাৎ ‘হ্যাপি’ হরমোন ক্ষরণের পরিমাণ মোটামুটি এক। কর্টিজ়ল বা মানসিক চাপ বাড়িয়ে দিতে পারে যে হরমোন, তার অস্তিত্ব প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু তৃতীয় দলটির ক্ষেত্রে এমন কোনও পরিবর্তনই গবেষকদের চোখে পড়েনি। উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, গবেষক লেসলি সেলজ়া বলেন, “শুধু ফোনে কথা বলাই নয়, ভার্চুয়ালি মাকে দেখতে পেলেও সন্তানদের একই রকম অনুভূতি হয়। মায়ের সঙ্গে সন্তানের শারীরিক নৈকট্য তাদের মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু ফোনে কথা বললেও যে রকম প্রভাব পড়ে তা এই সমস্ত গবেষণা থেকেই স্পষ্ট।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Phone Call Mental Health New York Mother
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE