রূপটানের ক্ষেত্রে এখন জনপ্রিয়তা বাড়ছে মাল্টিপার্পাস প্রসাধন সামগ্রীর। একটাই মেকআপ প্রডাক্টে সাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।
বর্তমান জীবনধারার আদর্শ
চটজলদি তৈরি হওয়া কিংবা ‘মিনিমালিস্ট’, ‘ডিক্লাটারিং’ ট্রেন্ডের অংশ হওয়া— সবেতেই বেশ কাজের মাল্টিপার্পাস মেকআপ। এই ধরনের প্রসাধন সামগ্রীর বৈশিষ্ট্য হল, কোনও একটি প্রসাধনীর সাহায্যেই রূপটানের একাধিক ধাপ করে ফেলা যায়। যেমন লিপ টিন্টের সাহায্যে ব্লাশ কিংবা আই শ্যাডো। অল্প সংখ্যক প্রসাধন সামগ্রী কিনলে যেমন খরচ কিছুটা কমে, তেমনই ঘরেবাইরে তা গুছিয়ে রাখতেও বেশ সুবিধা হয়। কোথাও ঘুরতে গেলে বা কলেজ-কর্মক্ষেত্রে টাচআপের জন্য আদর্শ এই মাল্টিপার্পাস মেকআপ। এতে ‘কার্বন ফুটপ্রিন্ট’ কমে বলে পরিবেশ-সচেতন মানুষদের কাছেও প্রিয় এই প্রডাক্ট।
রূপটানে যা লাগে
রূপসজ্জাকে নিখুঁত করে তুলতে বেশ কয়েকটি ধাপের দিকে নজর দিতে হয়। এর মধ্যে অন্যতম হল ত্বককে প্রস্তুত করা, মুখের দাগ-ছোপ ঢেকে ‘ইভন স্কিনটোন’ আনা ও ত্বকের লাবণ্য বাড়ানো। এ ক্ষেত্রে প্রডাক্ট বাছাইয়ের সময়ে জরুরি হল নিজের ত্বকের ধরন বুঝে পছন্দমতো জিনিস কেনা। কোন প্রসাধনী কী ভাবে ব্যবহার করাযায়, তা নিয়েও নানা পরীক্ষানিরীক্ষা করা যায়।
টিন্টে জাদু
ক্রিম, তরল, স্টিক কিংবা জেলি— টিন্টের সাহায্যে সহজেই রাঙিয়ে তোলা যায় গালের ত্বক, ঠোঁট ও চোখের পাতা। আঙুলে অল্প টিন্ট নিয়ে তা চোখের পাতায় ব্যবহার করা যায়। লিপস্টিকের বিকল্প হিসেবেও কাজে লাগে টিন্ট। আর মুখের জেল্লা বাড়ানোর জন্য যদি ব্লাশের প্রয়োজন হয়, তা হলেও অল্প একটু টিন্ট গালে লাগিয়ে ব্লেন্ড করে নিলেই বাজিমাত।
তবে মনে রাখা জরুরি, লিপ-চিক টিন্টের নানা ধরন রয়েছে। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য জেল বা ওয়াটারবেসড টিন্ট আদর্শ। রুক্ষ ত্বকের ক্ষেত্রে আবার ক্রিমের মতো টিন্টই বেশি কাজে দেয়। কম্বিনেশন ত্বকের ক্ষেত্রে আবার মিলিয়েমিশিয়ে ব্যবহার করা যায় টিন্টগুলি। সে ক্ষেত্রে তৈলাক্ত জায়গায় জেল এবং রুক্ষ অংশে ক্রিম টিন্ট ব্যবহার করা যায়। বাজারে ইতিমধ্যে রয়েছে লাল, গোলাপি, কোরাল, পিচ, মভের মতো নানা টিন্ট।
জেল্লা বাড়াতে
রূপটানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হল ফাউন্ডেশন, কনসিলিং, কন্টুরিং, হাইলাইটিং, সেটিং। তার আগে ময়শ্চারাইজ়ার, প্রাইমার ব্যবহার করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এই সবের বিকল্প হিসেবে সহজেই ব্যবহার করা যায় স্ট্রোব ক্রিম কিংবা লুমি ক্রিম। এতে বেস এবং হাইলাইটিং, দুই-ই সম্ভব একসঙ্গে। ময়শ্চরাইজ়ার বা তরল ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যদি স্ট্রোব বা লুমি ক্রিম মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়, তা হলে ত্বক বেশ উজ্জ্বল দেখায়। একই ভাবে, ব্লাশ বা আইশ্যাডোর সঙ্গে হাইলাইটার মেশালেও বেশ ‘ডিউয়ি ফিনিশ’ আসে রূপটানে। এ ক্ষেত্রে যদিও ক্রিম বা তরল হাইলাইটার মেশালে ভাল বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
এখন নানা ধরনের ‘মেকআপ স্টিক’ও এসেছে বাজারে। একটি স্টিক ব্যবহার করেই ফাউন্ডেশন, কনসিলারের কাজ হয়ে যায়। কিছু ফোর-ইন-ওয়ান স্টিকে আবার ফাউন্ডেশন, কনসিলার, ব্রনজ়ার, হাইলাইটার, একসঙ্গে থাকে। ফলে খাটনি আরও কম।
রোজকারের জন্য বেশি প্রডাক্ট ব্যবহার করতে ইচ্ছা না করলে টিন্টেড সানস্ক্রিন, ক্রিম, বিবি বা সিসি ক্রিম ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ ছাড়াও, লিপস্টিক লাগানোর পরে ক্রিম বা পাউডার হাইলাইটার হালকা করে লাগিয়ে নেওয়া যায় ঠোঁটে। এতে শিমারি ফিনিশ পাওয়া যাবে।
আইশ্যাডো প্যালেটের সোনালি বা রুপোলি রংগুলি হাইলাইটার-ব্রনজ়ার হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
লাইনারের জাদু
রূপটান শিল্পী অভিজিৎ চন্দ জানাচ্ছেন, লিপস্টিক নিয়ে নানা রকমের পরীক্ষা করাই যায়। আর পছন্দমতো কিছু লিপলাইনার সঙ্গে রাখলে তা আরও কাজে লাগে। কন্টুর করার জন্য যেমন ব্রাউন লিপ লাইনার কাজে দিতে পারে। একই ভাবে, কালো কাজল দিয়ে ঠোঁট লাইন করে তার উপরে যদি লাল লিপস্টিক ব্যবহার করা যায়, তা হলেও অত্যন্ত আকর্ষক চেরি লাল থেকে গাঢ় লাল রং আনা সম্ভব ঠোঁটে। পছন্দ মতো লাইনার দিয়ে ঠোঁট এঁকে নিয়ে যদি জামা বা লুকের সঙ্গে মানানসই আইশ্যাডোর রংটি ঠোঁটে দেওয়া যায়, তা হলে তা-ও লিপস্টিকের বিকল্প হিসেবে কাজ করে।
শেষ কথা
আসলে রূপসজ্জার মাধ্যমে নিজের সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তোলাই যখন লক্ষ্য হয়, তখন প্রডাক্টের চেয়েও বেশি জরুরি হয়ে যায় সেটির ব্যবহার পদ্ধতি। মোনোক্রোম্যাটিক, স্কিনিমালিস্টিক লুকের যুগে মাল্টিপার্পাস মেকআপ এখন জায়গা করে নিচ্ছে ফ্যাশনিস্তাদের প্রসাধনী তালিকায়।
মডেল: দর্শনা বণিক, মেকআপ: উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়; ছবি: অমিত দাস
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)