Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Jaipur Literature Festival

Neena Gupta: মানসিক স্বাস্থ্যের যত্নের জন্য সত্যি কথা বলতে পারা জরুরি: নীনা গুপ্ত

নিজের জীবন দিয়ে নীনা গুপ্ত দেখেছেন, সত্য গোপন করা অনেক কঠিন। মনের উপর অঢেল চাপ পড়ে। তার চেয়ে মনে যা আছে, তা বলে ফেলাই ভাল।

নীনা গুপ্ত।

নীনা গুপ্ত। নিজস্ব চিত্র।

সুচন্দ্রা ঘটক
জয়পুর শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২২ ১৯:০৪
Share: Save:

সমাজ, সম্পর্ক নিয়ে অকপট তিনি। সত্যি বলতে বাধে না? যাঁরা অভিনেত্রী নীনা গুপ্তের সাক্ষাৎকার কিংবা ইনস্টাগ্রামের পাতায় নিয়মিত চোখ রাখেন, তাঁদের অনেকেরই এমন কথা মনে হতে পারে। হয়ও!
শুক্রবার ‘জয়পুর লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল’-এ নিজের প্রথম বই ‘সচ কহুঁ তো’ নিয়ে আলোচনা করতে এসে তেমনই কিছু প্রশ্নের জবাব দিলেন নীনা। জানালেন, নিজের জীবন দিয়ে দেখেছেন, সত্য গোপন করা অনেক কঠিন। মনের উপর অঢেল চাপ পড়ে। তার চেয়ে মনে যা আছে, তা বলে ফেলাই ভাল। নীনার বক্তব্য, ‘‘মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য সত্যি কথা বলার বিকল্প হয় না। আমি কম বয়সে বেশ লাজুক ছিলাম। নিজের যা মনে হচ্ছে, তা বলতে লজ্জা পেতাম। কিন্তু তাতে কার লাভ হত? কারও নয়। উল্টে আমার মন খারাপ বাড়ত। দুঃখ হত। একা একা কাঁদতাম। আর নিজেই খারাপ থাকতাম। অন্যকে দুঃখ না দিয়ে যদি মনের কথা স্পষ্ট ভাবে বলা যায়, তার চেয়ে ভাল আর কিছুই হয় না।’’ আর নিজের প্রথম বইয়ে সে কাজটিই করেছেন নীনা।

নিজেকে ভাল রাখার জন্য আর কী করা যেতে পারে বলে মনে করেন অভিনেত্রী? আনন্দবাজার অনলাইনকে নীনা বললেন, ‘‘ভাল থাকার জন্য কাজ করায় বিশ্বাসী আমি। আর কাজ করার জন্য নিজেকে সুস্থ রাখা জরুরি। নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য আবার সত্যি বলা জরুরি।’’

নিজের জীবনের নতুন অধ্যায় নিয়ে উৎসাহী অভিজ্ঞ অভিনেত্রী। নীনা যে ইতিমধ্যে হয়ে উঠেছেন নানা বয়সের বহু ভারতীয় মহিলার নিজেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার অনুপ্রেরণা, সে বিষয়ে সচেতন নীনা। তাঁদের উদ্দেশে অভিনেত্রীর পরামর্শ, ‘‘নিজের যা ভাল লাগে, তা করার সুযোগ খুঁজতে হবে। আমার বিয়ের পরে অনেকে ধরে নিয়েছিলেন, আমি আর কাজ করব না। বয়স হয়ে গিয়েছে। বিয়ে করেছি। সংসার করছি। আবার কাজ করব নাকি! তাই কেউ কাজ দিতেন না। কিন্তু আমি কাজ করলে ভাল থাকি।’’

নতুন ভাবে যে কাজ করতে শুরু করেছেন নীনা, তা বিয়ের পরেই। সেই কাজ পেতে কষ্টও করতে হয়েছে। নীনা বলেন, ‘‘আমাদের সমাজে মেয়েদের খুব সমস্যা। আমরা সামাজিক অনুপ্রেরণায় লাজুক হই। নিজের শরীর খারাপ হলেই বলতে পারি না। মনে করি না, তা বলা উচিত কারও কাছে। আর কাজ চাওয়া কি সহজ না কি!’’ তবে নিজের জীবন আগের তুলনায় সহজ করে তুলতে, কঠিন পদক্ষেপ করেছেন নীনা। বছর কয়েক আগে তাঁর মতো নামী অভিনেত্রীকে দেখা যায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় কাজ চআইছেন। সে কাজ সহজ ছিল না, জয়পুরে এসে সকলের সামনে বলেন নীনা। রীতিমতো নিজের সঙ্গে নিজেকে লড়াই করতে হয়েছিল তার জন্য। তবে সেই লড়াই তাঁকে নতুন ভাবে বাঁচার রসদ জুগিয়েছে। তাই এখনকার মেয়েদের জন্য তাঁর পরামর্শ, ‘‘নিজের মধ্যে সব কথা চেপে রেখে ভাল থাকা যায় না। নিজের কথা বলতে হবে। লজ্জা কাটিয়ে বাঁচতে হবে। আমি অনেক দেরিতে শিখেছি। কিন্তু যে যত আগে শিখবেন, মানসিক ভাবে তত চাপমুক্ত থাকবেন।’’

নীনা যে একাই নিজের মেয়ে মাসাবাকে বড় করেছেন, সে কথা জানে গোটা দুনিয়া। তাঁর লড়াইও পরিচিত অনেকের কাছে। কিন্তু এমন লড়াই নতুন নয়, মনে করাচ্ছেন নীনা। সমাজের নানা স্তরে, বিভিন্ন মেয়েকে লড়তে হয়। বইয়ে নিজের মায়ের কথা লিখেছেন নীনা। তাঁর বাবার দু’টি সংসার ছিল। সে কথা উল্লেখ করেছেন। তাই সম্পর্কের জটিলতা মানসিক স্বাস্থ্যের উপর কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, জীবনের শুরু থেকেই জেনে এসেছেন অভিনেত্রী। এখন নীনা বলেন, ‘‘আমিও পারতাম নিজের মায়ের মতো চুপ করে থাকতে। বাবার কথা বইয়ে না লিখতে। কিন্তু চুপ করে থাকিনি। মাকে দেখেছি সারা জীবন মানসিক চাপে থাকতে। কারণ মা বাবার দ্বিতীয় পরিবারের কথা লুকোতে চাইতেন। আমি চাই না। সত্যি লুকিয়ে চলতে গেলে অনেকটা বেশি কষ্ট করতে হয়।’’

সত্যি বলতে গেলে কি কষ্ট করতে হয় না? অবশ্যই হয়! নীনার উত্তর। ‘‘কিন্তু আখেরে সুস্থ থাকা যায়। আমি আমার মায়ের চেয়ে কম কষ্টে আছি। আমি চাই অন্য মেয়েরাও সে কথা বুঝুন। নিজেকে ভাল রাখার চেষ্টা করুক মেয়েরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE