Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ছোঁয়াচের ভয়ও বাধা বাড়ি ফেরাতে

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা ঠিক মতো হচ্ছে কি না, এখন সেই সংশয়ে ভুগছেন পরিজনেরা। রোগ সম্পর্কে সরকার মানুষকে যথাযথ সচেতন করছে কি না, সে প্রশ্নও প্রকট হচ্ছে দিন দিন। গত চব্বিশ ঘণ্টায় খিঁচুনি-জ্বরে ওখানে আরও তিন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এক জনের রক্তে মিলেছে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস।

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে প্রভাতচন্দ্র রায়। চিকিৎসকেরা বাড়ি নিয়ে যেতে বললেও পড়শিরা বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে প্রভাতচন্দ্র রায়। চিকিৎসকেরা বাড়ি নিয়ে যেতে বললেও পড়শিরা বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৪ ০২:৫৮
Share: Save:

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা ঠিক মতো হচ্ছে কি না, এখন সেই সংশয়ে ভুগছেন পরিজনেরা। রোগ সম্পর্কে সরকার মানুষকে যথাযথ সচেতন করছে কি না, সে প্রশ্নও প্রকট হচ্ছে দিন দিন। গত চব্বিশ ঘণ্টায় খিঁচুনি-জ্বরে ওখানে আরও তিন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এক জনের রক্তে মিলেছে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস।

উত্তরবঙ্গে চিকিৎসা-পরিকাঠামোর উন্নতির তাগিদে রাজ্য প্রশাসন দু’দফায় চার স্বাস্থ্য-কর্তাকে সাসপেন্ড করেছেন। এক জনকে বদলি। তাতে পরিস্থিতি বিশেষ বদলায়নি বলে অভিযোগ। আর যদি বদলেও থাকে, তা হলে জ্বর পুরো সারার আগেই কেন রোগীদের বাড়ি ফেরাতে ‘চাপ’ দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে সরব হয়েছেন অনেকে। যার জেরে তৈরি হয়েছে অন্য সংশয় জাপানি এনসেফ্যালাইটিস বা এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ (এইএস) সম্পর্কে স্বাস্থ্য দফতর গ্রামে গ্রামে কতটা প্রচার চালিয়েছে?

অভিযোগ, কাজটা ঠিকঠাক হয়নি। তাই বিপন্মুক্ত অনেককেও পুরো সুস্থ না-করে বাড়ি ফেরাতে ভয় পাচ্ছেন পরিজনেরা। কিছু ক্ষেত্রে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কায় পাড়া-পড়শিও অন্তরায় হচ্ছেন। গ্রাম-গঞ্জে চিকিৎসা পরিষেবার অভাবও অনেককে দ্বিধায় ফেলেছে।

যেমন ফালাকাটার জটেশ্বর-১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রভাতচন্দ্র রায়ের পরিবার। জুলাইয়ের মাঝামাঝি ওঁকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়। জাপানি এনসেফ্যালাইটিস ধরা পড়ে। আপাতত স্যালাইন লাগছে না, শুধু এক বেলা করে ইঞ্জেকশন। ডাক্তারবাবুরা ওঁকে বাড়ি নিয়ে যেতে বলায় পরিবার বিপাকে পড়েছে। “উনি পুরো সুস্থ নন। আমাদের ওখানে ভাল চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। যদি বিপদ হয়?” প্রশ্ন ছেলে অনুপমের। আশঙ্কা, এখন বাবাকে গ্রামে নিয়ে গেলে গ্রামবাসীরা বাধা দেবেন।

এমনটা কি বাঞ্ছনীয়?

প্রভাতবাবুর কিছু পড়শি স্বাস্থ্য দফতরকেই দুষছেন। ওঁদের বক্তব্য, প্রচার না-হওয়ায় গুজব ছড়াচ্ছে। স্বাস্থ্য-প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, “এ সব যাঁরা করছেন, ঠিক করছেন না।” মন্ত্রীর দাবি, প্রচারে খামতি নেই।

শচীমোহন সরকারের মৃত্যু-পরবর্তী ঘটনা অবশ্য অন্য কথা বলছে। জলপাইগুড়ির কচুয়া বোয়ালমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানপাড়ার বাসিন্দা ওই বৃদ্ধ রবিবার জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে মারা যান জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে। গ্রামবাসীদের একাংশের আপত্তিতে দেহ গ্রামে নেওয়া যায়নি। জলপাইগুড়ি শ্মশানে শেষকৃত্য হয়। মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের সুপার সব্যসাচী দাস বলেন, “জাপানি এনসেফ্যালাইটিস ছোঁয়াচে নয়। সচেতনতা না-থাকায় প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ তা-ই ভাবেন।” সব্যসাচীবাবুও মনে করছেন, প্রচারই সুরাহার একমাত্র পথ। “বয়স্ক রোগীর শরীরে অন্যান্য রোগীর সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা বেশি। তাই ওঁরা মোটামুটি সুস্থ হলে বাড়ি নিয়ে যাওয়া অনেক ক্ষেত্রে শ্রেয়।” যুক্তি সুপারের।

এ দিকে সোমবার রাত থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে আরও তিন জন এইএস-রোগীর মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে একটি শিশু, তার রক্তে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের ভাইরাস মিলেছে। বাকি দু’জনের রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট বাড়ির লোক এখনও পাননি।

রাজ্যে আসতে পারেন হর্ষবর্ধন

নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি

এনসেফ্যালাইটিসের প্রকোপ দেখতে পশ্চিমবঙ্গে যেতে পারেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন। আজ পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সভাপতি রাহুল সিংহ হর্ষবর্ধনের সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ করেন, উত্তরবঙ্গে এনসেফ্যালাইটিস মহামারির আকার ধারণ করেছে। হর্ষবর্ধন তাঁকে বলেছেন, রাজ্যের আবেদনের আগেই কেন্দ্রীয় সরকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। প্রয়োজনে আরও করবে। সংসদের অধিবেশনের পরে যদি এই অবস্থা বহাল থাকে, তা হলে পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখবেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE