Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
ট্রপিক্যাল

কর্ড ব্লাড ব্যাঙ্কই হয়নি, দূর অস্ত্ প্রশিক্ষণ-চিকিৎসা

তিন বছর আগে ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে ‘স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন’-এ ঘটা করে চালু হয়েছিল ‘রিজেনারেটিভ মেডিসিন ও ট্রান্সলেশনাল সায়েন্সেস’ বিভাগ। গবেষণার পাশাপাশি সেখানে ‘কর্ড ব্লাড’-এর স্টেম সেল দিয়ে চিকিৎসার পরিকল্পনাও ছিল। এর জন্য দু’খেপে সাড়ে বারো লক্ষ এবং পঁচিশ লক্ষ টাকা অনুমোদন করে রাজ্য। রোগীদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল দশটি ফ্রি শয্যা।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৪৬
Share: Save:

তিন বছর আগে ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে ‘স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন’-এ ঘটা করে চালু হয়েছিল ‘রিজেনারেটিভ মেডিসিন ও ট্রান্সলেশনাল সায়েন্সেস’ বিভাগ। গবেষণার পাশাপাশি সেখানে ‘কর্ড ব্লাড’-এর স্টেম সেল দিয়ে চিকিৎসার পরিকল্পনাও ছিল। এর জন্য দু’খেপে সাড়ে বারো লক্ষ এবং পঁচিশ লক্ষ টাকা অনুমোদন করে রাজ্য। রোগীদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল দশটি ফ্রি শয্যা।

কিন্তু সরকারি কাজে দীর্ঘসূত্রতার ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ রেখে তিন বছরেও কর্ড ব্লাড ব্যাঙ্ক গড়তে পারেননি ট্রপিক্যাল কর্তৃপক্ষ। এমনকী, ব্যাঙ্কের জন্য ড্রাগ কন্ট্রোলের অনুমোদন পেতে আবেদনটুকুও করা হয়নি। আনা হয়নি প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি।

কেন এই দেরি? বিভাগীয় প্রধান নীরঞ্জন ভট্টাচার্যের জবাব, ‘‘বড় বড় কাজে দেরি হয়। আপনারা বুঝবেন না।’’ আর স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কেউ বসে নেই, কাজ চলছে। ঠিক হয়ে যাবে। আপনাদের ভাবতে হবে না।’’

ব্যাঙ্ক খুলতে না পেরে অন্তত বিভাগের মুখরক্ষায় পঠনপাঠন উন্নত করতে ৩ লক্ষ ১১ হাজার টাকা বেতন দিয়ে বোস্টন থেকে স্টেম সেল বিশেষজ্ঞ কার্টিস সেট্রুলোকে অধ্যাপক করে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। সেই ইচ্ছাও পূরণ হয়নি। সুশান্তবাবুই জানান, সম্প্রতি খবর এসেছে সেট্রুলো আসছেন না। ফলে আবার নতুন করে বিজ্ঞাপন দিয়ে লোক খুঁজতে বেরোতে হবে স্বাস্থ্যকর্তাদের।

অর্থাৎ, এখানকার ছাত্রছাত্রীরা হাতেকলমে ব্যাঙ্কে কর্ড ব্লাড জীবাণুমুক্ত করে সংরক্ষণ ও তার থেকে স্টেম সেল তৈরি করে প্রয়োগের প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তার উপরে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কোনও গবেষকের কাছে কবে পাঠ নিতে পারবেন, সে বিষয়েও ঘোর অনিশ্চয়তা। এখানেই শেষ নয়। এত টাকা খরচ করে বিভাগ শুরু হলেও নিজস্ব কর্ড ব্লাড ব্যাঙ্ক না থাকায় বেশি সংখ্যক রোগীও ভর্তি নেওয়া যাচ্ছে না।

এই চিকিৎসা নিয়ে আবার অন্য বিতর্কও তৈরি হয়েছে। মা ও মায়ের গর্ভে থাকা বাচ্চার সংযোগকারী আম্বেলিক্যাল কর্ড সংগ্রহের জন্য ট্রপিক্যালের এই রিজেনারেটিভ মেডিসিন বিভাগের সঙ্গে কলকাতা মেডিক্যাল, পিজি, ন্যাশনাল মে়ডিক্যালের স্ত্রীরোগ বিভাগকে যুক্ত করা হয়েছিল। ট্রপিক্যাল সূত্রের খবর, ২০১২ সাল থেকেই ওই সব হাসপাতাল থেকে সংগৃহীত আম্বেলিক্যাল কর্ডের রক্ত এবং প্ল্যাসেন্টার বাইরের আবরণ (মেমব্রেন) কিছু রোগীর ক্ষতে ও দেহের পোড়া অংশে প্রয়োগ করা হয়েছে। ট্রপিক্যালের ওয়েবসাইটে রিজেনারেটিভ মেডিসিনের পাতাতেও এমন কিছু রোগীর ছবি দেওয়া রয়েছে। যে সব বিষয়ে ওই বিভাগে গবেষণা হচ্ছে বলে ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, তার মধ্যে প্রায় সবগুলিই কর্ড ব্লাড সম্পর্কিত। প্রশ্ন উঠেছে, যখন ট্রপিক্যালে কর্ড ব্লাড ব্যাঙ্কই নেই, তখন ওই সংগৃহীত কর্ড ব্লাড রোগীদের দেহে প্রয়োগের আগে বা ল্যাবরেটরিতে ব্যবহারের আগে পরিস্রুত ও সংরক্ষিত করা হচ্ছে কোথায়?

ট্রপিক্যালের রিজেনারেটিভ মেডিসিনের একাধিক চিকিৎসকই অভিযোগ করেছেন, অপরিস্রুত কর্ড ব্লাডই নিয়ম বহির্ভূত ভাবে রোগীদের দেহে প্রয়োগ করা হচ্ছে। কিছু দিন আগেও দু’জন রোগী এই চিকিৎসা নিয়ে গিয়েছেন। নীরঞ্জনবাবু এ ব্যাপারে বলেন, ‘‘যা বলার স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তাকে বলেছি। ওঁর থেকে জেনে নিন।’’ স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তার জবাব, ‘‘না-না। ওই বিভাগে কর্ড ব্লাড দিয়ে কোনও চিকিৎসাই হয় না।’’

তা হলে সেখানকার চিকিৎসকেরা কেন বলছেন, ২০১২ সাল থেকে অনেক রোগীর দেহে ওই রক্ত প্রয়োগ করা হয়েছে? কর্ড ব্লাড দিয়ে বিভিন্ন গবেষণার কথা তাদের ওয়েবসাইটে রয়েছে। এ ছাড়াও ওয়েবসাইটে কর্ডব্লাড ও প্ল্যাসেন্টা-মেমব্রেন দিয়ে রোগীদের চিকিৎসার ছবি রয়েছে। সেটা কী করে হয়? ‘‘কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে,’’ বলে ফোন নামিয়ে দেন স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE