Advertisement
E-Paper

মেয়ের জন্য পাত্র খুঁজবেন বাবা, এ তো আমাদের সংস্কৃতি, কে কী বলল, বয়েই গেছে: পিসি সরকার

জাদুকরের বড় মেয়ে মানেকা সরকার পেশাদার জাদুশিল্পী। মেজো মেয়ে মৌবনী সরকার এবং ছোট মেয়ে মুমতাজ সরকার টলিউডের অভিনেত্রী। তাঁদের জন্যই পাত্র চেয়ে কাগজের পাত্র-পাত্রী কলামে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন জাদুকর।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০১
তিন কন্যা মুমতাজ (বাঁ দিকে), মানেকা (ডান দিক থেকে দ্বিতীয়) এবং মৌবনীর (ডান দিকে শেষে) সঙ্গে সস্ত্রীক পিসি সরকার জুনিয়র।

তিন কন্যা মুমতাজ (বাঁ দিকে), মানেকা (ডান দিক থেকে দ্বিতীয়) এবং মৌবনীর (ডান দিকে শেষে) সঙ্গে সস্ত্রীক পিসি সরকার জুনিয়র। ছবি: আনন্দবাজার অর্কাইভ।

স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের সম্বন্ধ করে বিয়ে হয়েছিল। মাধুরী দীক্ষিতেরও তা-ই। তবে সে সব আগের কথা। এখন সুপ্রতিষ্ঠিত মেয়েদের ‘দেখেশুনে’ বিয়ে দেওয়ার চল খানিকটা কমেছে। যদি বা সম্বন্ধ দেখা হয়, তা হলেও পাত্র-পাত্রীর বিজ্ঞাপন দেওয়ার বিষয়ে অনেকে বাবা-মা বেশ খুঁতখুঁতে। নিজের মতো করে জীবনসঙ্গীকে বেছে নিতে বলার চল হয়েছে বাবা-মায়েদের মধ্যে। জাদুকর পিসি সরকার সে চলের বাইরে যাওয়ায় হইচইও হয়েছে। কিন্তু চল কী, প্রথা-ই বা কী! তাতে কী বা যায় আসে, প্রশ্ন তুলছেন জাদুকর।

মৌবনী সরকার।

মৌবনী সরকার। ছবি: সংগৃহীত।

‘ট্রেন্ড’-এর পরোয়া না করেই তিন কন্যাকে পাত্রস্থ করার জন্য কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন জাদুকর পিসি সরকার (জুনিয়র)। তাতে লেখা হয়েছে, ‘‘জাদুশিল্পী পিসি সরকার জুনিয়র এবং জয়শ্রী সরকারের কন্যাদের জন্য জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে ৩৮-৪৫ উপযুক্ত, সুদর্শন, দীর্ঘাঙ্গ, সুপ্রতিষ্ঠিত পাত্র চাই।’’ তা নিয়েই হইচই। তবে জাদুকরের তাতে কিছু যায়-আসে না। হেসে বলেন, ‘‘আমি তো বরং বলব পুজোর বাজার একটা দোকান থেকে না করে গোটা বাজারটাই দেখে নিচ্ছি।’’ প্রথা আবার কী? তা ঠিক করে কে? প্রশ্ন তাঁর।

কন্যারা কিন্তু যে-সে নন। জাদুশিল্পীর মতো তাঁর তিন কন্যাও তারকা। দু’জন অভিনেত্রী, আর এক জন পিতার মতোই জাদুকর। রীতিমতো পরিচিত। তাঁদের পাত্রস্থ করতে হঠাৎ অন্য পথে হাঁটলেন কেন বাবা-মা? এ কি তবে নতুন করে তৈরি হওয়া এই ‘প্রথা’ ভাঙার ইচ্ছা? জাদুকরের বড় মেয়ে মানেকা সরকার পেশাদার জাদুশিল্পী। মেজো মেয়ে মৌবনী সরকার এবং ছোট মেয়ে মুমতাজ সরকার টলিউডের অভিনেত্রী। তাঁরা বাবা-মায়ের ওই সিদ্ধান্তকে কেমন ভাবে দেখছেন? মৌবনীর জবাব, ‘‘এক জন বাবা তাঁর মেয়েদের বিয়ের জন্য কাগজে বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন। এ তো যে কোনও বাবা-মা দিতেই পারেন। আমার বাবা-মাও আমাদের তিন বোনের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। এটা তো খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। এটা নিয়ে এত হইচই করার কিছু নেই।’’ অর্থাৎ, কাগজে বিজ্ঞাপন দেওয়াকে কোনও ভাবেই আধুনিকতা বিরোধী বলে মনে করছেন না মৌবনী। বরং বাবা যে তাঁদের জন্য এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা ভেবে তাঁর ভালই লাগছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বাবা-মা যদি আপনার ভবিষ্যতের দায়িত্ব নেন, তার থেকে ভাল আর কী হতে পারে!’’

পিসি সরকার জুনিয়র।

পিসি সরকার জুনিয়র। ছবি: সংগৃহীত।

কিন্তু যে কোনও বাবা-মা আর তিন কন্যার পিতা তারকা জাদুকর তো এক নন। সাধারণ মানুষ যা করেন, তা তো তারকারা অনুসরণ করেন না। বরং তারকারা যা করেন, তা-ই অনুকরণ করার চেষ্টা করেন সাধারণ মানুষ। তবে জাদুকরের বক্তব্য, কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন মেয়েদের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করতেই। তাতে তিনি অনেক পাত্রের মধ্যে থেকে মেয়েদের জন্য সেরা পাত্রকে বেছে নিতে পারবেন। চেনাজানার মধ্যে সেই সুযোগ থাকবে কম। জাদুশিল্পীর কথায়, ‘‘আমার বাবাও (পিসি সরকার) দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে। আনন্দবাজার পত্রিকাতেই বেরিয়েছিল সেই বিজ্ঞাপন। তখন পাত্র-পাত্রীর বিজ্ঞাপনে বক্স নম্বর থাকত। কই তখন তো এমন প্রশ্ন ওঠেনি! আমার দুই দিদি তো কম যোগ্য ছিলেন না। বড় দিদি সেই সময়ে পিএইচডি ছিলেন। আর আমার দুই জামাইবাবুই শিক্ষাগত এবং গুণগত যোগ্যতায় ছিলেন দারুণ। দু’জনেই উঁচু প্রশাসনিক পদে ছিলেন। কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে তো খারাপ কিছু হয়নি।’’


মানেকা সরকার।

মানেকা সরকার। ছবি: সংগৃহীত।

তিন কন্যার পিতার বক্তব্য, তাঁর কন্যাদের পছন্দের পাত্র থাকলে তিনি অবশ্যই তাঁদের মেনে নিতেন। কিন্তু তেমন যখন হয়নি, তখন দায়িত্ব নিয়েছেন তাঁরাই। এর সঙ্গে প্রথা মানা বা ভাঙার কোনও সম্পর্ক নেই। প্রথা মেনে বা ভেঙে যে ভাবেই মেয়েদের ভবিষ্যৎ তিনি সুনিশ্চিত করতে পারতেন, সেই পথেই হাঁটতেন। যদিও বড় মেয়ে জাদুশিল্পী মানেকা মনে করছেন, প্রথা মানা তাঁদের পরিবারের ধাতে নেই। তিনি বলছেন, ‘‘গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসানোর মনোভাব থাকলে আমদের পেশাটাই অন্য রকম হত। কিন্তু আমরা তা করিনি। আর আমিও মনে করি যদি অনেকের মধ্যে থেকে পছন্দের জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকে, তা হলে সেই সুযোগ হাতছাড়া করব কেন? বাবা-মা যদি তেমন কিছু করতে চান, তা হলে অবশ্যই সেই সুযোগ তাঁদের দেওয়া উচিত। আর ওঁরা যা করেছেন, তা আমাদের সম্মতিতেই করেছেন।’’ আর জাদুকর পিতা মনে করাচ্ছেন, সময়ে সময়ে চল বা ‘ট্রেন্ড’ বদলায়। কিন্তু নিজেদের সংস্কৃতি আলাদা। সেখানে বাবা-মা কন্যার জন্য পাত্র খোঁজেন। পিতা বলেন, ‘‘আমাদের যা সংস্কৃতি, তা নিয়ে আমি ভীষণ ভাবে গর্বিত। অন্যরা হয়তো লজ্জিত। কিন্তু তাতে আমার বয়েই গিয়েছে।’’

PC Sorcar Junior
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy