Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

#আমিও! যৌন নিগ্রহের কথা অকপটে ফেসবুকে

কিছু দিন ধরে শিরোনামে আসছিল হলিউডের নামী প্রযোজক হার্ভি ওয়াইনস্টেইনের কেলেঙ্কারির কথা। ৬৪ বছরের প্রৌঢ় লোকটি হলিউডে ধারাবাহিক ভাবে বিভিন্ন মহিলাকে যৌন হেনস্থা করে এসেছেন। এত দিন কেউ সে ভাবে মুখ খোলেননি।

অন্বেষা দত্ত
শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:০৮
Share: Save:

আমিও...! ‘মি টু’! টুইটার থেকে ফেসবুকের দেওয়াল ভরে গিয়েছে মাত্র এই দু’টি শব্দে। শব্দ দু’টি বুঝিয়ে দিচ্ছে, সারা বিশ্বে কত মহিলা এবং পুরুষ তাঁদের জীবনে কখনও না কখনও ঘটে যাওয়া যৌন হেনস্থার যন্ত্রণার পাহাড় বয়ে চলেন।

কিছু দিন ধরে শিরোনামে আসছিল হলিউডের নামী প্রযোজক হার্ভি ওয়াইনস্টেইনের কেলেঙ্কারির কথা। ৬৪ বছরের প্রৌঢ় লোকটি হলিউডে ধারাবাহিক ভাবে বিভিন্ন মহিলাকে যৌন হেনস্থা করে এসেছেন। এত দিন কেউ সে ভাবে মুখ খোলেননি। কিন্তু এক জন বলার পরে খুলে গিয়েছে প্যান্ডোরার বাক্স। নামী তারকা থেকে হার্ভির প্রযোজনা সংস্থায় কর্মরত মহিলা— একযোগে বলছেন, কোথায় কী ভাবে হার্ভির লালসার শিকার হয়েছেন তাঁরা। উঠছে ধর্ষণের অভিযোগও। অভিযোগের তোড়ে বাফটা, অস্কারের মতো ঐতিহ্যবাহী সংস্থার সদস্যপদ হারিয়েছেন হার্ভি। নিজের সংস্থাও তাঁকে ছেঁটে ফেলতে দ্বিধা করেনি। ছেড়ে গিয়েছেন স্ত্রী-ও।

এই ঘটনাপ্রবাহের সূত্রে রবিবার রাতে মার্কিন অভিনেত্রী অ্যালিসা মিলানোই প্রথম টুইটারে ছড়িয়ে দেন শব্দ দু’টো— ‘মি টু’! তিনি এক বন্ধুর কাছে জেনে টুইটারে লেখেন, ‘‘যে সব মহিলা যৌন হেনস্থা বা নির্যাতনের শিকার, তাঁরা সবাই যদি স্ট্যাটাসে ‘মি টু’ লেখেন, তা হলে বোঝা যাবে সমস্যাটার শিকড় কত গভীরে।’’ তার পর হ্যাশট্যাগে ‘#মি টু’ (আমিও) ছড়াতে থাকে। রবিবার অ্যালিসার টুইটের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অগুনতি মহিলা সরব হন। পুরুষরাও যৌন নিগ্রহের কথা বলেছেন অকপটে। সোমবার ভোর হতে হতেই টুইটারে ‘#মি টু’ ছুঁয়ে যায় দু’লক্ষ পোস্ট। ফেসবুকে সংখ্যাটা তখন ৮০ হাজার।

আমেরিকা থেকে ভারতে এসে ঢেউ ছুঁয়েছে কলকাতাকেও। এখানে যেন জমিটা তৈরিই ছিল। নাট্যপরিচালক প্রেমাংশু রায়ের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থা নিয়ে সম্প্রতি সরব হন অনেকে। তখন থেকে ফেসবুকে বিষয়টা নিয়ে আলোচনার কথা তুলছিলেন কেউ কেউ। অ্যালিসার টুইট মিলিয়ে দিল দুই পৃথিবীকে। কেউ শৈশবে পরিবারের মধ্যে, কেউ বড় হয়ে বাসে-ট্রামে, কেউ বা কর্মস্থলে— যৌন হেনস্থার ইতিবৃত্তও খুব এক রকম। চেনা কিছু অভিজ্ঞতাই ঘুরে ফিরে যেন এসেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এক জনের অভিজ্ঞতা পড়ে চমকে গিয়েছেন অন্য জন। এ যেন তাঁরই কথা!

এই সূত্রেই মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করালেন একটি জরুরি দিক। তাঁর কথায়, ‘‘যৌন নিগ্রহ নিয়ে আমাদের নিজস্ব কিছু সীমাবদ্ধতা সব সময় থাকে। আমরা আক্রান্তের নাম পর্যন্ত বলতে পারি না। সেই আড়ালটা ভাঙার প্রক্রিয়া মহিলারাই শুরু করেছেন, এটা সাধুবাদযোগ্য।’’ অনুত্তমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ আর একটি বিষয়— ‘‘প্রত্যেকের মনে হচ্ছে, আমি একা নই। একটা যেন কালেকটিভ ভেন্টিলেশন। সোশ্যাল মিডিয়া দিয়ে বলা শুরু হলেও এই প্রবণতা বাড়বে।’’ তবে তাঁর সতর্কবার্তা, ‘‘মি টু বলেই যেন কথা শেষ না হয়ে যায়। এমন আপত্তিকর কিছু ঘটলে বাস্তবেও গলাটা তুলতে হবে।’’

ফেসবুকের আলোড়নের সাক্ষী টলিউড অভিনেতা আবির চট্টোপাধ্যায়ও। এক কন্যার জনক বললেন, ‘‘এটা শুধু যৌন হেনস্থা ভাবলে ভুল হবে। এর সঙ্গে ক্ষমতার বড় সম্পর্ক রয়েছে। ফেসবুক দিয়ে বিষয়টাও যেন লঘু না হয়ে যায়।’’ অভিনয়ের দুনিয়ার কি এই ক্ষমতার প্রয়োগটা বেশি হয়? আবিরের মতে, ‘‘অন্য কর্মস্থলের তুলনায় অভিনয় জগৎ আলাদা। এখানে অনেক বেশি সময় দিতে হয়। তাই সতর্ক থাকা খুব দরকার।’’ বাড়ি, চেনা গন্ডিতেও সাবধান থাকতে বলে এই অভিনেতা বলছেন, ‘‘শিশুদের ক্ষেত্রে বিষয়টা স্পর্শকাতর। বোঝার আগেই ঘটে অনেক কিছু। বাবা-মা এখন যতটা বন্ধু হয়ে বোঝাতে পারেন, ততই ভাল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE