Advertisement
E-Paper

হৃদযন্ত্রের ভালভ প্রতিস্থাপন এখন থেকে সিকিভাগ খরচে

খুব ছোটবেলায় রিউম্যাটিক ফিভার হয়েছিল ঝর্না প্রধানের। সময়মতো যথাযথ চিকিৎসা হয়নি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাই হার্টের নানা সমস্যা শুরু হয়। চল্লিশ পেরোনোর পরে চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, হার্ট ভালভ প্রতিস্থাপন না করলেই নয়। কিন্তু করবেন কী ভাবে? সাধারণ নিম্নবিত্ত পরিবারের এই গৃহবধূ বেসরকারি হাসপাতালের দু’লক্ষের প্যাকেজের কথা শুনে ধরেই নিয়েছিলেন, তিল-তিল করে মৃত্যুর দিকে এগোনোই তাঁর ভবিতব্য। তা ছাড়া উপায় নেই।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৪ ০২:২৫

খুব ছোটবেলায় রিউম্যাটিক ফিভার হয়েছিল ঝর্না প্রধানের। সময়মতো যথাযথ চিকিৎসা হয়নি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাই হার্টের নানা সমস্যা শুরু হয়। চল্লিশ পেরোনোর পরে চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, হার্ট ভালভ প্রতিস্থাপন না করলেই নয়। কিন্তু করবেন কী ভাবে? সাধারণ নিম্নবিত্ত পরিবারের এই গৃহবধূ বেসরকারি হাসপাতালের দু’লক্ষের প্যাকেজের কথা শুনে ধরেই নিয়েছিলেন, তিল-তিল করে মৃত্যুর দিকে এগোনোই তাঁর ভবিতব্য। তা ছাড়া উপায় নেই।

কিন্তু ‘ভবিতব্য’ বদলাল এসএসকেএমে এসে। সেখানেই ৬৫ হাজার টাকায় হার্ট ভালভ প্রতিস্থাপন হল তাঁর। গত ১ অগস্ট রাজ্যের মধ্যে প্রথম সফল ভাবে ন্যায্য মূল্যে ‘হার্ট ভালভ রিপ্লেসমেন্ট’ করিয়ে তাঁর নামটিও ঢুকে গেল স্বাস্থ্য দফতরের রেকর্ডবুকে। স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, যে কোনও বেসরকারি হাসপাতালে এই ‘অ্যাডভান্স মেকানিক্যাল বাইলিফলেট মাইট্রাল ভালভ’ বসাতে দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকা ব্যয় হয়। এমনকী, সরকারি মেডিক্যাল কলেজেও এত দিন এ ধরনের অস্ত্রোপচার করাতে ৯০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকার মতো খরচ পড়ত। ন্যায্য মূল্যের অস্ত্রোপচারে তার থেকে প্রায় ৩০-৪০ হাজার টাকা কম লেগেছে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা ঝর্নাদেবী ভালভ বসানোর পরে ভাল আছেন।

ন্যায্য মূল্যে হার্ট ভালভ প্রতিস্থাপনের বিষয়টি ঠিক কেমন?

স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারি হাসপাতালে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে বাজারের থেকে অনেক কম দামে বিভিন্ন ওষুধ পাওয়া যায়। ঠিক তেমনই ‘ভালভ রিপ্লেসমেন্ট’ অস্ত্রোপচারের জন্য এ বার থেকে এসএসকেএমের ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে কৃত্রিম হার্ট ভালভ ও আনুষঙ্গিক বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রী কম দামে মিলছে। এতে পুরো অস্ত্রোপচারের খরচ এক ধাক্কায় অনেকটাই কমে যাবে। এত দিন পর্যন্ত ন্যায্য মূল্যের দোকানে ওষুধের পাশাপাশি কম দামে শুধু পেসমেকার ও স্টেন্ট পাওয়া যেত।

স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, এসএসকেএমে আর কিছু দিনের মধ্যে অনেক কম দামে ‘ওপেন হার্ট সার্জারি’র চিকিৎসা সামগ্রীর বিক্রিও শুরু হতে চলেছে। শুরু হতে চলেছে ন্যায্য মূল্যে ডায়ালিসিস। এতে ৪২০০ টাকার ডায়ালিসিস করা যাবে মাত্র ১৩৭৭ টাকায়।

কিন্তু এই সূত্রে প্রশ্ন উঠেছে, দামে এত ছাড় মিলছে কী করে? তা হলে কি নামী সংস্থাগুলি অপেক্ষাকৃত নিম্ন মানের ভালভ ও চিকিৎসা সামগ্রী দিচ্ছে? স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র সুমন বিশ্বাস বলেন, “একেবারেই নয়। আসলে এসএসকেএমের মতো হাসপাতালে এই ধরনের সামগ্রীর মাসিক বিক্রি এতটাই বেশি যে, সংস্থাগুলি মার্কেটিং, বিজ্ঞাপন, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ ইত্যাদির জন্য হওয়া খরচ বাদ দিয়ে জিনিস সরবরাহ করতে পারে। তাদেরও পুষিয়ে যায়, আবার দামও কমে যায়।”

এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ উদাহরণ দিয়ে জানান, যে পেসমেকারের দাম বাজারে ১ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকা, সেটি এসএসকেএমের ন্যায্য মূল্যের দোকানে মিলছে ৪৫ হাজার টাকায়। তা বলে কি তার মান খারাপ? এখনও পর্যন্ত এসএসকেএমে শতাধিক রোগীর দেহে তা বসানো হয়েছে। একটিও খারাপ রিপোর্ট আসেনি। হাসপাতালের অধ্যক্ষ প্রদীপ মিত্র বলেন, “বেসরকারি হাসপাতালে হার্ট ভালভ প্রতিস্থাপনের জন্য ভর্তি হয়েছেন, এমন রোগীর জন্যও ওই হার থেকে অনায়াসে এসএসকেএমের দোকান থেকে সস্তায় ভালভ ও অন্যান্য সামগ্রী কেনা যাবে। ফলে ওই রোগীদেরও আর্থিক সাশ্রয় হবে।”

প্রসঙ্গত, মৃতদেহ থেকে হার্ট ভালভ তুলে রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করতে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে রাজ্যের প্রথম ‘হার্ট ভালভ ব্যাঙ্ক’ খোলার প্রক্রিয়া ছ’বছর আগে শুরু হলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত করতে পারেনি স্বাস্থ্য দফতর। এক লক্ষ-দেড় লক্ষ টাকা দিয়ে হার্ট ভালভ কেনার সামর্থ্য না থাকায় তাই প্রয়োজন সত্ত্বেও ভালভ বসাতে পারছেন না অনেক মানুষ। এসএসকেএমে ন্যায্য মূল্যে হার্ট ভালভ প্রতিস্থাপন শুরু হওয়ায় তাঁদের একটা বড় অংশ উপকৃত হবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

heart valve parijat bandyopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy