Advertisement
E-Paper

বাড়ছে চোখে যক্ষ্মার ঝুঁকি

অফিসে কাজ করার ফাঁকেই চোখে ব্যথা অনুভব করেন বছর তিরিশের তিমির। বারবার জলের ঝাপটা দিয়েও ব্যথা কমে না। প্রথমে চশমার সমস্যা বলে সন্দেহ করেছিলেন চিকিৎসক।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৮ ০২:৩৭

বছর চল্লিশের মিতালি রায়ের চোখের সাদা অংশ মাঝে মধ্যেই লাল হয়ে যায়। ওষুধের দোকান থেকে কয়েক বার অ্যালার্জির ওষুধ কিনে খেয়েছিলেন তিনি। সমস্যা মেটেনি। উপরন্তু প্রায়ই তাঁর চোখে আশপাশের সব কিছু ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। অবশেষে জানতে পারেন, সমস্যার কারণ যক্ষ্মা।

অফিসে কাজ করার ফাঁকেই চোখে ব্যথা অনুভব করেন বছর তিরিশের তিমির। বারবার জলের ঝাপটা দিয়েও ব্যথা কমে না। প্রথমে চশমার সমস্যা বলে সন্দেহ করেছিলেন চিকিৎসক। কিন্তু বেশ কিছু পরীক্ষার পরে জানা যায় যক্ষ্মার জন্যই এই চোখে ব্যথা।

চিকিৎসকদের মতে, মিতালিদেবী বা তিমিরের মতোই বর্তমানে অনেকের চোখে এমন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে আসল কারণ দেরিতে সামনে আসে। ততদিনে পরিস্থিতি জটিল হয়ে যায়। অথচ যক্ষ্মা নিয়ে সচেতনতা আটকে রয়েছে শুধু ফুসফুসেই। এ দিকে আড়ালে বেড়ে চলেছে চোখে যক্ষ্মার ঝুঁকি। মোট যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীর প্রায় ১০ শতাংশের চোখে এই রোগ হয়। আর প্রতি তিনশো জন মানুষের এক জন চোখের যক্ষ্মায় ভোগেন। শনিবার বিশ্ব যক্ষ্মা দিবসে এক বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষা থেকে এমনই তথ্য সামনে এসেছে।

‘‘শরীরে যক্ষ্মার ব্যাক্টেরিয়া থাকলে তা চোখে দ্রুত প্রভাব ফেলতে শুরু করে। অথচ আক্রান্তের সেটা বুঝতেই অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়। এটাই এই রোগের অন্যতম সমস্যা’’, বলছেন চোখের এক বেসরকারি হাসপাতালের কর্তা, চিকিৎসক দেবাশিস ভট্টাচার্য। তিনি জানান, বারবার চোখের সাদা অংশ লাল হয়ে যাওয়া কিংবা লাগাতার চোখে ব্যথা যক্ষ্মার উপসর্গ। অথচ রোগীরা এই সমস্যাগুলো নিয়ে অবহেলা করেন। সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু না হলে দৃষ্টি চলে যাওয়ার ঝুঁকিও থাকে। দ্রুত চিকিৎসা শুরু হলে রোগ সম্পূর্ণ সেরে যায়।

চিকিৎসকদের মতে, ফুসফুস কিংবা হাড়ের যক্ষ্মাতেও চোখে প্রভাবের ঝুঁকি থাকে। এ দেশে অধিকাংশ যক্ষ্মা আক্রান্তের ধারাবাহিক চিকিৎসা না করানো রোগের একটা কারণ। যার জেরে সমস্যা ফিরে আসে। অনেক ক্ষেত্রে যক্ষ্মার চিকিৎসা করে সমস্যা মিটলেও চোখের সমস্যা শুরু হয়। তাই চিকিৎসকদের পরামর্শ, যক্ষ্মার চিকিৎসা শুরু হওয়ার পরে চোখে তার কী প্রভাব পড়ছে, সে দিকে নজরদারিও জরুরি। চোখের এক বেসরকারি হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধান দিব্য অশোকের কথায়, ‘‘বিশেষ করে মাইকোব্যাক্টেরিয়াম যক্ষ্মায় আক্রান্তদের চোখে কী প্রভাব পড়ছে সে দিকে বাড়তি নজর দেওয়া প্রয়োজন। কারণ, দেহের যে কোনও অংশে যক্ষ্মা হলে রক্তের মধ্যে দিয়ে ওই ব্যাক্টেরিয়া রেটিনায় প্রভাব ফেলে। যার জেরে দৃষ্টিহীন হওয়ার ঝুঁকি থাকে।’’

দ্রুত রোগের চিকিৎসা শুরু হলে, বড় বিপদ এড়ানো যায় বলে আশ্বাস দিচ্ছেন চক্ষু চিকিৎসক অর্ণব বিশ্বাস। তাঁর কথায়, ‘‘এই চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ওষুধ, ইঞ্জেকশন রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ সময়ে রোগী তা ব্যবহার করেন না। ধারাবাহিকভাবে ওষুধ ব্যবহার করলে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব।’’

কিন্তু এ শহরে চোখের যক্ষ্মার চিকিৎসার পরিকাঠামো কি সব জায়গায় রয়েছে? নাকি চিকিৎসা পরিষেবার জন্য বাড়ছে রোগী? চক্ষু চিকিৎসক শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অনেক সময়ে চোখের সমস্যা বোঝার পরেও মেডিসিন কিংবা বক্ষরোগ বিভাগে রোগীকে পরীক্ষার জন্য পাঠাতে হয়। কারণ চক্ষু বিভাগে সব ধরনের পরীক্ষা করার পরিকাঠামো নেই। তাই একাধিক বিভাগে ঘুরে সময় নষ্ট হয়। অথচ চিকিৎসা দ্রুত শুরু জরুরি। তাই অনেক ক্ষেত্রে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার উপরে জোর দিয়ে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে হয়।’’

eye tuberculosis tuberculosis
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy