দীর্ঘ এক অতিমারি পার হয়ে এসেছি আমরা। অতিমারিতে মোকাবিলা করতে হয়েছে এমন এক ভাইরাসের সঙ্গে, যা আমাদের ফুসফুসের কার্যক্ষমতা একেবারে কমিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। এর সঙ্গে রয়েছে বায়ুদূষণের কোপ। পাশাপাশি, বয়সজনিত কারণ, অ্যাজ়মা, সিওপিডির মতো অসুখ ও ধূমপানের মতো অভ্যেস তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার বহু কারণই রয়েছে।
আমাদের ফুসফুস যে পরিমাণ বাতাস ধরে রাখতে পারে, তাকে বলা হয় ফুসফুসের ক্ষমতা। এতে বোঝা যায় ফুসফুস কতটা সুস্থ রয়েছে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই ধারণক্ষমতা ও কার্যক্ষমতা কমতে থাকে। দূষণ, ধূমপান ও অসুখে তা আরও দ্রুত হয়। এই পুরো বিষয়টিকে রুখতেই দরকার ফুসফুসের যত্ন। তার অন্যতম পদক্ষেপ হল ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়াবে এমন ব্যায়ামের অভ্যেস।
শরীরের গঠন অনুসারে নারীর তুলনায় পুরুষের ফুসফুসের ধারণক্ষমতা বেশি। আবার নিয়মিত যত্ন ও অভ্যেসে নারীও ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়াতে পারে। সুতরাং, যত্নের প্রসঙ্গে উভয়কেই সচেতন হতে হবে। ফুসফুসের অ্যালভিওলাই ও পেশি যত শক্তিশালী হবে, ততই তার বাতাস ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়বে।
কী কী উপায়ে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব?
নিয়মমাফিক কিছু শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম করলে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তবে অবশ্যই ফিটনেস বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। ফিটনেস বিশেষজ্ঞ সৌমেন দাস বললেন, “ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়াতে ডায়াফ্র্যাগমেটিক ব্রিদিং, পার্সড লিপস ব্রিদিং ইত্যাদির সদর্থক ভূমিকা রয়েছে। ডায়াফ্র্যাগমেটিক ব্রিদিংয়ের আর এক নাম বেলি ব্রিদিং। এতে রিল্যাক্সড পজ়িশনে বসে বা শুয়ে এক হাত রাখতে হবে পেটের উপর। আর এক হাতে বুকে। তার পরে, নাক দিয়ে শ্বাসবায়ু টানতে হবে। বাতাস যেন তলপেটে পৌঁছয়, পেট ফুলে ওঠে। দু’সেকেন্ড পরে মুখ সরু করে নিঃশ্বাস ছাড়তে হবে। তখন হাত দিয়ে পেটে অল্প অল্প চাপ দিতে হবে।”
পার্সড লিপস ব্রিদিংয়ে বা ডিপ ব্রিদিংয়ে নাক দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাসবায়ু নিতে হবে। দু’সেকেন্ড পরে মুখ সরু করে ধীরে ধীরে সেই বাতাস ছেড়ে দিতে হবে। যতটা সময় নিয়ে শ্বাসগ্রহণ করা হচ্ছে, তার দ্বিগুণ সময় ধরে নিঃশ্বাস ছাড়তে হবে। সৌমেন আরও জানালেন, রিব স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ়েও ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
এ ছাড়া সিংহাসন বা ভৈরবাসন ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অত্যন্ত উপকারী আসন। এই আসনে হাঁটু মুড়ে গোড়ালির উপরে বসতে হবে। হাতের তালু রাখতে হবে হাঁটুর উপরে। তার পরে নাক দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাসত্যাগ করতে হবে। এ বার যতটা সম্ভব জিভ বার করে শ্বাসগ্রহণ বন্ধ করে দিতে হবে। চোখ থাকবে খোলা। এই অবস্থায় পাঁচ সেকেন্ড স্থির থাকতে হবে। ভুজঙ্গাসন, কপালভাতি প্রাণায়ামেও ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এর সঙ্গে নিয়মিত হাঁটা, দৌড়নো, সাইক্লিং জাতীয় কার্ডিয়ো এক্সারসাইজ় ফুসফুসের ক্ষমতা বৃদ্ধি করায় খুব উপযোগী। তবে সৌমেন জানালেন, শারীরিক কষ্ট হলে এগুলি বিরাম নিয়ে করা দরকার। এর পাশাপাশি অবশ্যই ফিটনেস বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে জলের ভূমিকাও অনস্বীকার্য। চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিয়মিত নিজের শরীরের প্রয়োজনীয় পরিমাণ জল খাওয়া উচিত।
মনে রাখবেন
ফুসফুসের সমস্যা দেখা গেলেই ধূমপান ছেড়ে দেওয়া সমীচীন। এর পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস করা ভাল। খেতে হবে প্রচুর জল, ফাইবার ও অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ খাবার। এর পাশাপাশি, ঘরের বায়ু শোধনের জন্য ইনডোর প্লান্ট, এয়ার ফিল্টার ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy