Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Dental Care

দাঁত ও মুখের সুস্থতা বজায় রাখবে নিয়মিত স্কেলিং

শহরাঞ্চলে প্রতি ১০,০০০ জন পিছু মাত্র একজন ডেন্টাল সার্জন  ও গ্রামাঞ্চলে প্রতি ১,৫০,০০০ জন মানুষ পিছু মাত্র একজন ডেন্টাল সার্জন বরাদ্দ।

দাঁত ভাল রাখতে নিয়মিত যত্ন জরুরি।

দাঁত ভাল রাখতে নিয়মিত যত্ন জরুরি।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২১ ১৮:৩৮
Share: Save:

কথা বলতে গেলে মুখে চাপা দিতে হয়, দাঁতের কালো দাগ ছোপ আর নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ নিয়ে বিব্রত, অজস্র মানুষের কম বেশি একই অভিজ্ঞতা। নিকটজনেরাও এই নিয়ে অভিযোগ করেন। আসলে দাঁত আর মুখগহ্বরের যত্নের ব্যাপারে বেশির ভাগ মানুষ অত্যন্ত উদাসীন। ডেন্টাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার সহযোগিতায় ন্যাশনাল ওরাল হেলথ প্রোগ্রামের সমীক্ষায় জানা গেছে যে, আমাদের দেশের মাত্র ৫০ শতাংশ মানুষ টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত মাজেন। একই সঙ্গে এও জানা গেছে যে, ১৫ বছরের কম বয়সি বাচ্চাদের মধ্যে ৭০%-এর দাঁতের ক্ষয় অর্থাৎ ডেন্টাল কেরিস আছে। আর বয়স বাড়লে দাঁত হারিয়ে কৃত্রিম দাঁতের সাহায্য নিয়ে খাবার খেতে হয় কত মানুষকে, তার কোনও হিসেবই নেই। অথচ খাওয়ার পর ভাল করে কুলকুচি করা, চিবিয়ে খাবার খাওয়া, দু’বেলা ব্রাশ করার ব্যাপারটা সম্পর্কে জানা থাকলেও এখনও বেশির ভাগ মানুষ বিষয়টি গ্রাহ্যই করেন না, বললেন ডেন্টাল সার্জন শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।

এই সমস্যা শুধু যে আমাদের দেশের, তা নয়। বিশ্বের প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৯০ জন মানুষ মুখ আর দাঁতের সমস্যা নিয়ে কখনও না কখনও কষ্ট পান। ‘জার্নাল অব ন্যাচারাল সায়েন্স, বায়োলজি অ্যান্ড মেডিসিন’-এ প্রকাশিত ‘ইউটিলাইজেশন অব ডেন্টাল কেয়ার, অ্যান ইন্ডিয়ান আউটলুক’ শীর্ষক এক গবেষনাপত্র জানাচ্ছে, এ দেশের শহরাঞ্চলে প্রতি ১০,০০০ জন পিছু মাত্র একজন ডেন্টাল সার্জন ও গ্রামাঞ্চলে প্রতি ১,৫০,০০০ জন মানুষ পিছু মাত্র একজন ডেন্টাল সার্জন বরাদ্দ, জানালেন শুভঙ্কর। এক দিকে ওরাল হাইজিন সম্পর্কে সচেতনতার অভাব, অন্য দিকে ডাক্তারের কম সংখ্যা— দুইয়ে মিলে দাঁত ও মাড়ির সমস্যায় ভোগান্তি বাড়ছে। দাঁতের সমস্যার দু’টি মূল কারণ। এক, ঠিক ভাবে দাঁত ও মাড়ির যত্ন না নেওয়া আর দুই, পান-সুপুরি, খৈনি, গুটখা চিবনো সহ মদ্যপান এবং ধূমপানের নেশা। এ ছাড়া বারে বারে ধারালো দাঁতের আঘাত লেগে মুখগহ্বরের নানান সমস্যা হতে পারে, বললেন শুভঙ্কর।

সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করার অভ্যাস থাকলেও রাত্তিরে ঘুমনোর আগে অনেকেই ব্রাশ করতে চান না। আমাদের মুখের মধ্যে অনেক জীবাণু থাকে, রাত্তিরে ব্রাশ করে ভাল করে মুখ পরিষ্কার রাখলে এই জীবাণুদের সংক্রমণের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। নিয়ম করে সঠিক পদ্ধতিতে ব্রাশ করলেও খাবারের কণা দাঁতের ফাঁকে ও মাড়ির খাঁজে ঢুকে থাকে। জীবাণুরা এই সব খাবার পচিয়ে দেওয়ায় মুখে গন্ধ হয়। তা ছাড়া, হজমের গোলমাল থেকেও মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে ২৫–৩০ বছর বয়সের পর থেকে বছরে অন্তত এক বার স্কেলিং করিয়ে নেওয়া দরকার বলে পরামর্শ ডেন্টাল সার্জন ধীমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

স্কেলিং নিয়ে অনেকের মনে নানান ভুল ধারণা আছে। কেউ কেউ মনে করেন, স্কেলিং করালে দাঁতের এনামেলের সমস্যা হয়, দাঁত ও মাড়ির সংবেদনশীলতা বেড়ে গিয়ে জল বা খাবার লাগলে দাঁত শিরশির করে। আদতে কিন্তু এ রকম কিছুই হয় না। বরং দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা ক্যালকুলাস (ময়লা জমে পাথরের মতো শক্ত হয়ে যায়) বের করে দেওয়া হয়। ফলে দাঁত ও মাড়ি প্রাথমিক ভাবে আলগা মনে হতে পারে। ধীমানের ভাষায়, এটি একটি ফলস সেনসেশন। আসলে স্কেলিং এর ফলে দাঁত ও মাড়ির জমে থাকা ময়লা বেরিয়ে গিয়ে এ রকম অনুভূতি হয়। কয়েক দিনের মধ্যেই সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়, বললেন ধীমান বন্দ্যোপাধ্যায়।

খাবারের টুকরো ও লালায় থাকা জীবাণু এবং কিছু প্রোটিন দাঁত ও মাড়ির ফাঁকে জমতে জমতে শক্ত পাথরের মতো হয়ে যায়। মাড়ির নানা অসুখের মুলে আছে এই জমে থাকা পাথরের মতো প্লেক। নিয়মিত ব্রাশ ও ফ্লস করলেও প্লেক জমে যায়। এবড়ো খেবড়ো ও ফাঁকা দাঁতে বেশি প্লেক জমে যায়। আল্ট্রাসনিক বা লেসারের সাহায্যে স্কেলিং করা হয়। পদ্ধতিটি মোটেও বেদনাদায়ক নয়। যদি খুব বেশি দাঁত শিরশির করে, সেক্ষেত্রে বিশেষ টুথপেস্ট ও মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করলে কয়েক দিনের মধ্যেই আবার অনুভূতি স্বাভাবিক হয়ে যায়। তাই দাঁত ও মাড়ির সুস্থতা বজায় রাখতে বছরে অন্তত এক বার স্কেলিং করানো উচিত বলে দুই চিকিৎসকেরই অভিমত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

health Dental Care Doctors advice
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE