সন্তান যদি অবাধ্য হয়, সে যদি বড়দের কথা না শোনে, তা হলে তাকে শিক্ষা দিতে ‘শাস্তি’ কাজে আসে। যুগ যুগ ধরে সারা বিশ্বে সন্তান প্রতিপালনের অংশ হিসেবেই তা বিবেচিত হয়ে এসেছে। কিন্তু সময় বদলেছে। প্রযুক্তি এবং সমাজজীবনের বিবর্তনে ছোটরাও এখন প্রতিবাদী। ফলে শাস্তি বা ভয় দেখিয়ে কিশোর বয়সিদের পথে ফেরানো সব সময় সহজ হয় না।
আরও পড়ুন:
সন্তানকে শাস্তি দেওয়ার যৌক্তিকতা বা গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা গবেষণা হয়েছে। মনোবিদদের একাংশের দাবি, বর্তমান সময়ে ছোটরা অনেক বেশি জেদি। সমাজমাধ্যমের দৌলতে তাদেরও নিজস্ব বক্তব্য রয়েছে। ফলে বকাবকি বা গায়ে হাত তোলা সব সময়ে অভিভাবকদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যপূরণ করতে সাহায্য না-ও করতে পারে। কখনও কখনও সাময়িক ভাবে কাজ হলেও তার কোনও সুদূরপ্রসারী ফল পাওয়া সম্ভব নয়। ২০০২ সালে ‘সাইকোলজিক্যাল বুলেটিন’-এ প্রকাশিত একটি সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে, সন্তানের গায়ে হাত তোলার ঘটনা বাবা-মায়েদের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের অবনতির অন্যতম কারণ।
সন্তানকে শাস্তি না দিয়ে তার পরিবর্তে বিকল্প একাধিক পদক্ষেপ করা যেতে পারে:
১) সন্তানকে শুরু থেকেই দায়িত্ব এবং ঘটনাক্রমের গুরুত্ব বোঝাতে পারলে আর শাস্তির প্রয়োজন হয় না। কড়া অভিভাবক হওয়া ভাল। তবে যে কোনও সিদ্ধান্তের নেপথ্য কারণ ছোটদের ব্যখ্যা করতে পারলে তারাও বুঝতে পারবে। ফলে শাস্তির প্রয়োজন হবে না।
২) অনেক সময়ে সন্তান বাধ্য হলে কোনও পুরস্কার (যেমন খেলনা, খাবার) দেওয়ার মাধ্যমে তাকে খুশি করা সম্ভব। তার ফলে ওই একই কাজ পরবর্তী সময়ে সে খুশি মনেই করবে। তবে পুরস্কারের অভ্যাস বেশি না বাড়ানোই ভাল।
৩) সন্তান যদি কোনও ভুল করে বা কথা না শোনে, তা হলে তার ফল তাকে ভোগ করতে দেওয়া উচিত। তা হলেও অনেক সময়ে সে পথে ফিরে আসে। যেমন ধরা যাক, কেউ খাবার খেতে চাইছে না। তাকে উপোস করে থাকতে দেওয়া উচিত। তার ফলে নিজের ভুল এক সময়ে সে নিজেই বুঝবে এবং খাবার খাবে।
৪) সন্তানের মনের অবস্থা বুঝতে পারলে বহু সমস্যার সমাধান হতে পারে। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে অনেক সময়েই বড়রা তাদের জন্য সময় বার করতে পারেন না। তাই নিয়মিত সময় করে (অন্তত ১ ঘণ্টা) তাদের সঙ্গে খোলা মনে কথা বলা উচিত। ছোটরা তাদের সমস্যার কথা বললে নতুন করে সমস্যা তৈরি হবে না। তারা আরও বেশি সুরক্ষিত বোধ করবে।
৫) সন্তান যদি কোনও কারণে রাগ করে, তা হলে তাকে জোর করা উচিত নয়। অন্যথায় পরিস্থিতি বিগড়ে যেতে পারে। বরং কিছু ক্ষণ তাকে নিজের সঙ্গে সময় কাটাতে দেওয়া উচিত। তার পর তার সঙ্গে কথা বলা উচিত। একা সময় কাটানোর জন্য বাড়িতে তার জন্য কোনও নিরিবিলি জায়গা তৈরি করা যেতে পারে।