নবজাতকের ঠিকমতো বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য জন্মের সময়কার ওজন (জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী, যে সব নবজাতকের ওজন আড়াই কিলোগ্রামের কম হয়, তাদের স্বল্প ওজনের শিশু (‘লো বার্থ ওয়েট বেবি’) বলা হয়। জন্মের সময় থেকে ১ বছর অবধি কোন মাসে ওজন কেমন হবে, সে নিয়ে ধারণা থাকা জরুরি। অনেক মায়েরাই ভাবেন, সদ্যোজাতের ওজন হয়তো কম। সে নিয়ে দুশ্চিন্তাও করেন। তাই শিশুর ওজন কেমন হলে তা স্বাভাবিক হবে, তার তালিকা রইল অভিভাবকদের জন্য।
নবজাতকের স্বল্প ওজন হওয়ার নেপথ্যে অনেক কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, সময়ের আগেই সন্তানের জন্ম হলে। গর্ভকাল পূর্ণ হওয়ার আগেই ২৮ থেকে ৩৭ সপ্তাহের মধ্যে কোনও শিশুর জন্ম হলে, তার ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয়। আবার অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মায়ের কোনও শারীরিক সমস্যা, অপুষ্টি থাকলে তখন নবজাতকের ওজন কম হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর তালিকা অনুযায়ী, নবজাতকের ওজন আড়াই থেকে সাড়ে তিন কেজি হলে তা স্বাভাবিক। কিছু ক্ষেত্রে তা সাড়ে চার কিলোগ্রাম অবধিও হতে পারে। তবে ছেলে ও মেয়ের মধ্যে ওজনের তফাত থাকে। নবজাতক যদি ছেলে হয়, তা হলে তার ওজন হতে হবে গড়ে ৩.৩ কিলোগ্রাম, মেয়ে হলে ৩.২ কিলোগ্রাম।
সাধারণত দেখা যায়, জন্মের সময়ে যে ওজন ছিল এক মাসের মধ্যে তা বাড়ে ৫০০ গ্রাম থেকে ১ কেজির মতো, ৬ মাসে গিয়ে তা হয় প্রায় দ্বিগুণ, আর এক বছরে গিয়ে প্রায় তিন গুণ।
আরও পড়ুন:
জন্মের সময় থেকে ১ বছর অবধি কোন মাসে ওজন কত হবে?
জন্মের সময়— মেয়ের ক্ষেত্রে ৩.২ কেজি, ছেলের ক্ষেত্রে ৩.৩ কেজি
জন্মের ১ মাস পরে— মেয়ের ক্ষেত্রে ওজন হবে ৪.২ কেজি, ছেলের ক্ষেত্রে ৪.৫ কেজি।
জন্মের ২ মাস পরে— মেয়ে হলে ওজন হওয়া উচিত ৫.১ কেজি, ছেলে হলে ৫.৬ কেজি।
জন্মের ৩ মাস পরে— মেয়ে হলে ওজন হওয়া উচিত ৫.৮ কেজি, ছেলে হলে ৬.৪ কেজি।
জন্মের ৪ মাস পরে— মেয়ে হলে ওজন হওয়া উচিত ৬.৪ কেজি, ছেলে হলে ৭ কেজি।
জন্মের ৫ মাস পরে— মেয়ের ক্ষেত্রে ওজন হবে প্রায় ৬.৯ কেজি, ছেলের ক্ষেত্রে ৭.৫ কেজি।
জন্মের ৬ মাস পরে— মেয়ের ক্ষেত্রে ওজন হবে প্রায় ৭.৩ কেজি, ছেলের ক্ষেত্রে ৭.৯ কেজি।
জন্মের ৭ মাস পরে— মেয়ে হলে ওজন হওয়া উচিত ৭.৬ কেজি, ছেলে হলে ৮.৩ কেজি।
জন্মের ৮ মাস পরে— মেয়ে হলে ওজন হওয়া উচিত ৭.৯ কেজি, ছেলে হলে ৮.৬ কেজি।
জন্মের ৯ মাস পরে— মেয়ে হলে ওজন হওয়া উচিত ৮.২ কেজি, ছেলে হলে ৮.৯ কেজি।
জন্মের ১০ মাস পরে— মেয়ে হলে ওজন হবে প্রায় ৮.৫ কেজি, ছেলে হলে ৯.২ কেজি।
জন্মের ১১ মাস পরে— মেয়ে হলে ওজন হওয়া উচিত ৮.৭ কেজি, ছেলে হলে ৯.৪ কেজি।
জন্মের ১২ মাস পরে— মেয়ে হলে ওজন হওয়া উচিত ৮.৯ কেজি, ছেলে হলে ৯.৬ কেজি।
জন্মের প্রথম ৬ মাস অবধি মায়ের দুধেই পুষ্টি পাবে শিশু। সেই সময়ে ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম হলে বা শিশুর ওজন কমতে থাকলে, চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি। এর পর থেকে ধীরে ধীরে তরল ও কঠিন খাবারে অভ্যস্ত হতে থাকে শিশু। যথাযথ পুষ্টি পাওয়ার জন্য শিশুর খাবারে যাতে প্রোটিন, ভিটামিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেটের মতো উপাদানগুলি থাকে, সেটা দেখে নেওয়া প্রয়োজন। এখন এই উপাদানগুলি কোনটি কী পরিমাণে শরীরে যাচ্ছে, সেটা তো আর দাঁড়িপাল্লায় মেপে দেখা যায় না। তবে রোজকার খাবার, অর্থাৎ ভাত, রুটি, ডাল, মরসুমি সব্জি, মাছ, মাংস বা ডিমের মধ্যে থেকেই প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে শিশু। সব সময়েই টাটকা খাবারই খাওয়াতে হবে শিশুকে।