কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীর সঙ্গে প্রেম হতেই পারে। সেই প্রেম বিয়ে পর্যন্তও গড়ানোর উদাহরণও কম নয়। বলিউডে তেমনই প্রেম ক্যাটরিনা কইফ এবং ভিকি কৌশলের। তাঁদের আগে-পরে বলিউডের বহু নায়ক-নায়িকার প্রেম হয়েছে। বিয়েও হয়েছে। তা সত্ত্বেও ভিকি-ক্যাটরিনার বিয়ের খবর জানতে পেরে খানিক চমকে গিয়েছিল মুম্বইয়ের টিনসেল টাউন। এক জন বলিউডের সেই সময়ের নায়িকাদের মধ্যে শীর্ষে। পর্দায় তিনি আছেন জানলেই হলে ভিড় হয়। অন্য জন অভিনেতা হিসাবে প্রশংসিত হলেও তারকা হয়ে উঠতে পারেননি তখনও। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, সেই প্রেম কী ভাবে হল? কেমন ছিল তাঁদের পথ চলা? ভিকি বা ক্যাটরিনা, কেউই তাঁদের প্রেমের গল্প নিয়ে খুব বেশি কথা বলেননি আগে। সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে ক্যাটরিনার প্রেমের গল্প শোনালেন ভিকি। বললেন, ‘‘ওর সঙ্গে প্রথম কথাবার্তা হয়েছিল পুরস্কার মঞ্চের আড়ালে। কে জানত, সেখান থেকে আজ আমরা এই জায়গা পৌঁছব!’’
ক্যাটরিনার সঙ্গে যে ভিকির বিয়ে হতে পারে, তা সম্ভবত ভাবেননি দু’জনের ভক্তেরাও। কী করেই বা ভাববেন, ভিকির চতুর্থ ছবি 'মাসান'-এ তাঁর অভিনয় নিয়ে যখন সবে আলোচনা শুরু হয়েছে, তখন ক্যাটরিনার ঝুলিতে ৩০টি ছবি। তার অনেকগুলিই হিট। কোনও কোনওটি ব্লকবাস্টার। 'ধুম থ্রি', 'রাজনীতি', 'আজ়ব প্রেম কি গজ়ব কহানি', 'জিন্দগি না মিলেগি দোবারা', 'জব তক হ্যায় জাঁ', 'এক থা টাইগার' করা হয়ে গিয়েছে। ক্যাটরিনা তখন বলিউডের তারকা। সলমন খানের প্রেমিকা ছিলেন, প্রেম ভাঙার পরেও বন্ধুত্বে চিড় ধরেনি। রণবীর কপূরের সঙ্গে সম্পর্কে রয়েছেন। সেই সময়েই পুরস্কারের মঞ্চে মুখোমুখি দেখা ভিকি আর ক্যাটের। ভিকি বলেছেন, ‘‘একটি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে আমি সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলাম। ক্যাটরিনার সঙ্গে মঞ্চে আমার কিছু কথোপকথন ছিল। অবশ্য পুরোটাই পূর্বপরিকল্পিত। আমরা কী বলব, কী করব পুরোটাই ইযারপিসে বলে দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু তার আগে মঞ্চের আড়ালে আমাদের প্রথম একে অপরের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের মধ্যে প্রথম কথা হয়। কে জানত...!’’

ভিকি এবং ক্যাটরিনা তখন জমিয়ে প্রেম করছেন। বলিউডের নজর এড়িয়ে এক সঙ্গে প্রায়ই বেড়াতে যাচ্ছেন দু’জনে। ছবি: সংগৃহীত।
সালটা ছিল ২০১৯। তার ঠিক দু’বছর পরে ভিকির সঙ্গে বিয়ে হয় ক্যাটরিনার। সেই দু’বছরে কী ভাবে এগিয়েছিল দু’জনের প্রেম? ভিকি জানাচ্ছেন, ‘‘এর পরে আমাদের মাঝেমধ্যে কথাবার্তা হত। হঠাৎই আবার দেখা হয়ে গেল। একটি ফিল্ম বিষয়ক পত্রিকার আয়োজিত বিশেষ সাক্ষাৎকারে দেখা হল দু’জনের।’’ বিয়ের তিন বছর পরে সেই সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকে ধন্যবাদও দিয়েছিলেন ভিকি-ক্যাটরিনা। তবে কি সেখান থেকেই প্রেমের শুরু। ভিকি জানিয়েছেন, প্রেম শুরু না হলেও একটা ভাল বন্ধুত্বের শুরু বলাই যায়। যা ক্রমে একটা নতুন মাত্রা পেতে শুরু করে। এক বছর পরে ভিকি এবং ক্যাটরিনা একসঙ্গে আমন্ত্রিত ছিলেন ইশা অম্বানীর হোলির পার্টিতে। সেই পার্টির ঝলক দেখা গিয়েছিল ক্যাটরিনার সমাজমাধ্যমে। হলুদ টি-শার্ট পরা কোনও ব্যক্তির বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছেন তিনি। পরে ভিকিকে একই রঙের পোশাক পরে দেখা যায়। দু’য়ে দু’য়ে চার করতে অসুবিধা হয়নি ভক্তদের। এ-ও বোঝা গিয়েছিল, দু’জনের প্রেম গড়িয়েছে অনেকটাই। ভিকি এবং ক্যাটরিনা তখন জমিয়ে প্রেম করছেন। বলিউডের নজর এড়িয়ে এক সঙ্গে প্রায়ই বেড়াতে যাচ্ছেন দু’জনে। আলিবাগে গিয়ে দু’জনেই ইনস্টাগ্রামে আলাদা আলাদা ভাবে একই জায়গার ছবি দিয়ে ফেললেন। ব্যস। আর যান কোথায়! যেটুকু সন্দেহ ছিল, তারও নিরসন হল। ফলে রাজস্থানে ভিকি এবং ক্যাটরিনার বিয়ের খবর কাউকে না জানানো সত্ত্বেও সেখানে উপচে পড়েছিল ছবিশিকারিদের ভিড়।

সহকর্মীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হলে লুকিয়ে রাখার থেকে বরং কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা ভাল। —ফাইল চিত্র।
অনেকেরই প্রশ্ন, ভিকি আর ক্যাটরিনা তাঁদের সম্পর্ককে লুকিয়েছিলেন কেন? সে প্রশ্নের উত্তর ভিকি দেননি। তবে মনোবিদেরা বলছেন, সহকর্মীর সঙ্গে প্রেমে অনেক ক্ষেত্রেই লুকিয়ে রাখার একটা স্বাভাবিক প্রবণতা তৈরি হয়। তাঁদের পরামর্শ, সহকর্মীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হলে লুকিয়ে রাখার থেকে বরং কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা ভাল।
১। যে সংস্থায় কাজ করছেন, তাদের নীতি সম্পর্কে আগে অবগত হোন। সহকর্মীদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হওয়া নিয়ে কি সংস্থার কোনও বিধিনিষেধ আছে। যদি কোনও নিয়ম থাকে, তবে তা অনুসরণ করে চলাই হবে বাঞ্ছনীয়।
২। দু’জনের স্বার্থের মধ্যে বিরোধ ঘটার কোনও সম্ভাবনা আছে কি? যদি কর্মক্ষেত্রে দু’জনের সম্পর্ক একে অপরের স্বার্থের উপর প্রভাব বিস্তার করার সম্ভাবনা থাকে, তবে সম্পর্কের কথা আড়ালে না রাখাই ভাল।
৩। সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে জানিয়ে দিলেও কর্মক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব বজায় রাখাই উচিত। ব্যক্তিগত সম্পর্ক আর পেশাদার সম্পর্কের সীমারেখা যেন পরস্পরকে অতিক্রম না করে।
৪। সম্পর্ককে আড়ালে রাখতে চাইলে মাথায় রাখতে হবে, সামান্য সন্দেহও কিন্তু গুজবের জন্ম দিতে পারে। যা দু’জনের কারও পক্ষেই সম্মানজনক নয়।
৫। তবে সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্কের শুরুতেই তা প্রকাশ্যে আনা জরুরি বলে মনে করেন না মনোবিদেরা। তাঁদের মতে, সম্পর্কের শুরুতে, যখন একে অপরকে জানতে এবং চিনতে শুরু করেছেন, তখনই বিষয়টি সবাইকে না জানানোর সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন। আবার যদি সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চিত হন, তা হলেও তা প্রচার না করতে চাইতে পারেন।