শিশুকে ডায়াপার পরিয়ে রেখে নিশ্চিন্ত থাকেন বাবা-মায়েরা। কিন্তু দীর্ঘ সময় টানা ডায়াপার পরে থাকলে শিশুর ত্বকের কতটা ক্ষতি হয়, সে ব্যাপারে জানা আছে কি? অনেক মা-বাবাই প্রায় তিন বছর বয়স পর্যন্ত সন্তানকে ডায়াপার পরিয়ে রাখেন। কিন্তু এটি ব্যবহারের সময়, নিয়ম ও পদ্ধতি না জানার কারণে শিশুর অস্বস্তি তো হয়ই, তা ছাড়া তার ত্বকও জ্বালা করে। বর্ষার সময়ে ভিজে, স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে ডায়াপার থেকে ত্বকে র্যাশও হয় শিশুর। সেখানে জীবাণু সংক্রমণও ঘটে।
ডায়াপার থেকে কী ধরনের ত্বকের সমস্যা হতে পারে?
শিশুর ত্বকে যদি ধারাবাহিক ভাবে ফুসকুড়ি, চুলকানির সমস্যা চলতেই থাকে, তা হলে গুরুত্ব নিয়ে দেখা প্রয়োজন।
১-৫ বছর বয়সের মধ্যে থাকা শিশুদের মধ্যে এগজিমা দেখা দিতে পারে। র্যাশ, ফুসকুড়ি, লালচে ফোঁড়ার মতো হতে পারে।
আরও এক ধরনের র্যাশ হয়, যাকে বলে আরটিকেরিয়া। ২ থেকে ৩ বছরের শিশুদের এমন অ্যালার্জি হতে পারে ত্বকে।
বাবা-মায়েরা যা যা খেয়াল রাখবেন
ডায়াপার কেনার আগে অবশ্যই ভাল করে দেখে নিন এর কাপড়, কথা বলে নিন চিকিৎসকের সঙ্গে। নরম সুতির কাপড়ের ডায়াপারই কিনবেন।
আরও পড়ুন:
বাইরে বেরোনোর সময়ে ডায়াপার পরালে, কিছু সময় অন্তর তা পরীক্ষা করুন। ভিজে গেলে সঙ্গে সঙ্গে ডায়াপার বদলে দিন।
রাতভর শিশুকে ডায়াপার পরাবেন না। এতে শিশুর স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়।
একটানা ডায়াপার পরিয়ে রাখেন অনেক অভিভাবকই, এতে ত্বকে ঘষা লেগে র্যাশ, অ্যালার্জি হয়। ত্বক লালচে হয়ে ফুলে যায়, জ্বালা করে শিশুর।
ডায়াপার থেকে যে র্যাশ হয়, তাকে চিকিৎসার ভাষায় বলে ‘ডায়াপার ডার্মাটাইটিস’। অনেক সময়েই সেখানে ছত্রাকের সংক্রমণও হয়। তা ছাড়া ডায়াপারের জায়গায় লালচে দাগ দেখা দেয় অনেক শিশুর। একে বলে 'সেবোরিক ডার্মাটাইটিস'। এমন লক্ষণ দেখা দিলে, সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
শিশুর ত্বকের যত্ন নেবেন কী ভাবে?
শিশুর ত্বকের জন্য বড়দের সাবান কখনওই নয়। কম ক্ষারযুক্ত, ঠিক পিএইচ ব্যালান্স (৫.৫) রয়েছে, এমন সাবানই ব্যবহার করুন শিশুর জন্য।
শরীরের ভাঁজযুক্ত জায়গা, অর্থাৎ কুঁচকি, বাহুমূল, নিতম্বে প্রত্যেক দিন সাবান দিতেই হবে। সপ্তাহে দু’-তিন দিন সারা গায়ে ভাল করে সাবান মেখে স্নান করাতে হবে।
সাবানের পরিবর্তে লিকুইড সোপ (জেল বা ক্রিম) ব্যবহার করা আরও ভাল। এর পিএইচ ব্যালান্স শিশুদের ত্বকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই তৈরি করা হয়।
গরমের দেশে ঘন ক্রিমের দরকার কমই পড়ে। সে ক্ষেত্রে ভাল কাজ করে বডি লোশন। তা হালকা অথচ ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
স্নানের আগে শিশুদের তেল মালিশ করার চল চিরকালীন। এতে পেশির গড়ন, রক্ত চলাচলে সাহায্য করার মতো একাধিক উপকার রয়েছে। নারকেল তেল ও অলিভ তেলই শিশুর ত্বকের জন্য বেশি ভাল।
আগে বলা হত, জন্মের পরে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত তেল না মাখাতে, স্নান না করাতে। মায়ের প্লাসেন্টা থেকে বেরোনোর পরে সদ্যোজাতের ত্বকে ভারনিক্স স্কেসিওসা বলে একটা স্তর থাকে। সেই জন্যই তেল-সাবান মাখাতে বারণ করা হত। কিন্তু এখন ধারণা বদলেছে। বরং শিশুকে তেল, সাবান মাখিয়ে স্নান করানোরই পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। কারণ, পরিচ্ছন্নতাই চর্মরোগকে দূরে রাখার অন্যতম উপায়।