মিথ্যা আর গোপনীয়তা সেই নিরিখে মারাত্মক জটিল দু’টি শব্দ। —ফাইল চিত্র
যে কোনও সম্পর্কই আসলে এক ধরনের রাজনীতি। দু’জন মানুষের, তাঁদের ব্যক্তিগত সমীকরণের। সেই সমীকরণ কারও কাছে খুবই সরল। অবলীলায় সঙ্গীর সামনে মেলে ধরতে পারেন নিজেকে। কারও মনে থেকে যায় সঙ্কোচ, কতটা বলবেন আর কতটা বলবেন না। এই সমীকরণের উপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে বিশ্বাসের নানা স্তর। মিথ্যা আর গোপনীয়তা সেই নিরিখে মারাত্মক জটিল দু’টি শব্দ। কিন্তু জটিল হলেও শব্দ দু’টি বিরল কি? মোটেও না।
মিথ্যার সংজ্ঞা
সত্যির মতো মিথ্যাও বহু ক্ষেত্রেই আপেক্ষিক একটি বিষয়। যেমন ধরা যাক, সন্তান যাতে ছবি আঁকায় অনুপ্রেরণা পায়, তার জন্য যখন বাবা-মা সন্তানের আঁকা অতি সাধারণ ছবিকেও ‘দারুণ’ বলেন, তখন তা কি মিথ্যা? আবার বহু ক্ষেত্রে মিলনের সময়ে শুধু মাত্র সঙ্গীকে আহত না করার জন্য অনেকে সুখানুভূতির অভিনয় করেন। এই ধরনের মিথ্যা সচেতন ভাবে বলা হলেও তার উদ্দেশ্য প্রিয়জনকে স্বস্তি দেওয়া। একই ভাবে উল্টো দিকটিও সত্যি। অনেকেই নিজের অপকীর্তি ঢাকতে মিথ্যা বলেন। অনেক সময়ে কোনও ভুল কাজ করে ফেলার পর অনুতাপ হয়। কিন্তু পাল্টানোর উপায় থাকে না। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও মিথ্যা বলতে হয়। গভীরতর হয় অনুতাপ।
গোপনীয়তা
মনোবিদরা বলছেন, অনেকেই নিজের জীবনের কিছু কিছু দিক, বিশেষত অতীতের ঘটনা লুকিয়ে যান সঙ্গীর থেকে। পুরোনো প্রেম, অতীতের যৌনতা নিয়ে কথা বলতে অনেকেই সাবলীল নন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অতীত যাতে বর্তমানের বিবাদ তৈরির কারণ না হয়ে ওঠে তার জন্য মানুষ ‘পুরানো সেই দিনের কথা’ গোপন করেন।
কোনটি বেশি ক্ষতিকর?
মিথ্যা বা গোপনীয়তা কোনওটিই অস্বাভাবিক নয়। নৈতিক দিক থেকে কোনটি ঠিক আর কোনটি ভুল, তা বিচার করা যায় না। ভাল উদ্দেশ্য নিয়ে বলা কোনও মিথ্যা এমনিতে খারাপ নয়। কিন্তু এই বিষয়টির মধ্যে দিয়ে অন্য একটি বিষয় প্রকাশ্যে চলে আসে। এতে প্রমাণিত হয়, আপনার আর আপনার সঙ্গীর মধ্যে কোথাও না কোথাও বিশ্বাস ও ভরসার অভাব রয়েছে। কোনও সত্যি যদি সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর বলে মনে হয়, তবে তা না বলাই অবচেতনের দস্তুর। কিন্তু খুঁজে দেখা দরকার কেন সত্যিটা বলার মতো জায়গা তৈরি হয়নি। অন্য দিকে গোপনীয়তার ক্ষেত্রে, দু’জনকেই বুঝতে হবে সব কথা সকলের জন্য নয়। সম্পর্কের সীমা নিয়ে দু’জনের বোঝাপড়া থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই ভাবেন, সম্পর্কে আছেন মানেই সঙ্গীর কোনও ব্যক্তিগত জায়গার দরকার নেই। মনে রাখা দরকার, প্রত্যেক মানুষের মানসিক গঠন আলাদা। কাজেই তাঁকে তাঁর প্রয়োজনের জায়গাটুকু দেওয়াই সুস্থ সম্পর্কের লক্ষণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy