স্কুল থেকে রোজ বকুনি খেয়ে ফেরে শিশু। পরীক্ষায় নম্বরও কম আসছে। মাঝেমধ্যেই অভিযোগ জানাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। নিত্যদিন এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন অনেক অভিভাবকই। অনেকেই বলেন, সন্তানের পড়ায় মন নেই। শান্ত হয়ে এক জায়গায় বসতেই চায় না। বকাবকি করেও লাভ হয় না। যদি বা বসল, কিছু ক্ষণ পর পরই বিভিন্ন অজুহাতে উঠে যায়। বেশি বকাঝকা করলে চিৎকার, কান্নাকাটি শুরু করে। তখন জেদ করে আর পড়তে বসতেই চায় না। এমন সমস্যা যদি রোজ হয়, তা হলে কড়া শাসনে পরিস্থিতি আরও বিগড়ে যাবে। তার চেয়ে শিশুর ধৈর্য ও মনোযোগ বাড়াতে জাপানিদের মতো ৫ কৌশল প্রয়োগ করে দেখতে পারেন।
অমনোযোগী শিশুকে বকাবকি করেন না জাপানিরা। বরং শিশুর একাগ্রতা বাড়াতে তাঁরা বিশেষ কিছু কাজ করেন। এতে ফল হয় খুব দ্রুত। কী কী সেই টোটকা, জেনে নিন।
শিসা কঙ্কো
প্রায় ১০০ বছরের পুরনো জাপানি পদ্ধতি। এক সময়ে জাপানের ট্রেনের চালকেরা এই পদ্ধতি অনুসরণ করতেন দুর্ঘটনা এড়াতে। ট্রেন আসার সময়ে খুব জোরে চেঁচিয়ে এবং সঙ্কেত দেখিয়ে সতর্ক করা হত, যাতে ওই সময়ে লাইন পারাপার কেউ না করেন। জাপানি ভাষায় এর অর্থ হল ‘পয়েন্টিং অ্যান্ড কলিং’। মনোযোগ বাড়াতে এই পদ্ধতির প্রয়োগ করেন অনেক জাপানি মা। শিশুদের বলা হয়, তারা যা পড়বে তা যেন চেঁচিয়ে ও স্পষ্ট উচ্চারণে পড়ে। প্রতিটি লাইন জোরে জোরে পড়লে তা কানেও যাবে এবং মুখস্থও হবে দ্রুত। আর জোরে পড়ার সময়ে অন্য কোনও দিকে মন যাবে না। এতে একাগ্রতাও বাড়বে।
আরও পড়ুন:
জানশিন
কোনও একটি বিষয়েই মন দিতে হবে। যখন পড়ার বই পড়বে, তখন সেই নির্দিষ্ট বিষয়বস্তুটি নিয়ে পড়তে ও ভাবতেও হবে। গল্পের বই পড়ার সময়েও তাই। ওই সময়ে অন্য কোনও কাজ করা যাবে না। মার্শাল আর্টের ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতির প্রয়োগ করেন জাপানিরা। এতে চারদিকে সূক্ষ্ম নজর রাখতে হয় এবং সব সময় সতর্ক থাকতে হয়। ছোট থেকে শিশুদের জানশিন পদ্ধতি শেখানোর চেষ্টা করেন জাপানি মায়েরা।
নাইকান
আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর পদ্ধতি। জাপানের অনেক স্কুলে নাইকান শেখানোর চেষ্টা করা হয় শিশুদের। প্রতি দিন নিয়ম করে তাদের আত্মবিশ্লেষণ করতে বলা হয়, যেমন— সারা দিন কেমন কাটল, সে কী কী করল, কতজনকে আনন্দ দিল, কার কার উপকার করল, তা তালিকা ধরে বলতে হবে। সেই অনুযায়ী নম্বরও দেওয়া হবে।
চৌরেই
চৌরেই-এর অর্থ ‘মর্নিং মিটিং’। রোজ সকালে মা বা বাবার সঙ্গে অন্তত ১৫-২০ মিনিট সময় কাটাতে হবে। ওই সময়ে শিশুকে বলতে হবে তার সারা দিনের রুটিন কী, তার লক্ষ্য কী, গোটা দিনটা সে কেমন ভাবে কাটাতে চায় ইত্যাদি। প্রতি দিনের কাজের রুটিন ভেবে নিতে হবে শিশুকে।
কাকেইবো
লেখার পদ্ধতি। প্রতি দিন শিশু যা যা করবে বা করেছে, তা লিখে ফেলতে হবে। কী ভাবে লিখবে তারও পদ্ধতি রয়েছে। ঠিক গল্পের মতো করে বা পয়েন্ট করে লিখতে হবে শিশুকে। ভাষা যেন সুন্দর ও ব্যকরণগত ভাবে সঠিক হয়। সেই লেখার উপরেও থাকবে নম্বর বা উপহার দেওয়ার ব্যবস্থা। জাপানিরা মনে করেন, এতে শিশুর ধৈর্য, মনোযোগ বাড়বে। পড়া এবং লেখার কৌশলও আয়ত্ত হবে।