হোমওয়ার্ক করতে বললে শিশু কার্টুন দেখে? স্কুল থেকে ফিরে পড়তে বসতেই চায় না? এই অভিযোগ অনেক মায়েরই। সন্তান অমনোযোগী হয়ে উঠছে, এমন অভিযোগও নতুন নয়। সকলের থেকে আগে থাকবে তাঁরই সন্তান, এমন প্রতিযোগিতায় মা-বাবারাই ঠেলে দিচ্ছেন শিশুদের। কড়া শাসনে রাখতে গিয়ে আদতে ক্ষতিই হচ্ছে। শিশুর বয়স কত, তার উপরে নির্ভর করবে তার মনোযোগ। ৪-৫ বছরের শিশু ও ৮-১০ বছরের শিশুর মনোযোগ এক রকম হবে না। কোন বয়সের শিশু কখন পড়তে বসবে, ঠিক কত ক্ষণ পড়বে, তারও নিয়ম আছে। সে নিয়ে রইল কিছু পরামর্শ।
পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট পারমিতা মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, স্কুল সময় ও শিশুর বয়স অনুযায়ী তার পড়াশোনা করার সময় ঠিক করতে হবে মা-বাবাকে। শুধু পড়লেই হবে না, সেই সঙ্গে খেলাধূলা করা, ছবি আঁকা বা গান শেখা অথবা যে কোনও পছন্দের কাজ করার সময়ও দরকার। রোজ অন্তত এক ঘণ্টা ছোটাছুটি করে খেলার জন্য বরাদ্দ করতে হবে। এতে ঘাম ঝরবে। ফলে শরীরে এন্ডরফিন হরমোনের ক্ষরণ বেশি হবে। এর পরে শিশুকে পড়াতে বসালে প্রথম ঘণ্টাখানেকের পড়ায় ওর পুরো মনোযোগ থাকবে।
আরও পড়ুন:
কোন বয়সের শিশু কত ক্ষণ পড়বে?
১) ৫ থেকে ৭ বছর (লোয়ার প্রাইমারি)
এই বয়সে খেলার ছলেই পড়া হবে। ২০ মিনিটের বেশি শিশুকে বসিয়ে রাখা ঠিক নয়। বরং ঘুরেফিরে খেলতে খেলতেই ছোট ছোট জিনিস শেখাতে হবে। পারলে ছবি এঁকে বোঝান, তাতে শিশুর সহজেই মনে থাকবে। সকালে মিনিট পনেরো ও বিকেলে ৬টা থেকে সাড়ে ৬টা অবধি সময়ই এই বয়সের শিশুর পড়ার জন্য ভাল। এর পরের সময়টা খেলা ও পছন্দের কাজের জন্য রাখতে হবে।
২) ৮ থেকে ১০ বছর
স্কুলের হোমওয়ার্কের তালিকা ধীরে ধীরে বাড়বে। কাজেই ঘণ্টা দুয়েক পড়তে বসালেই হবে। একটানা নয়, বরং বিরতি নিয়ে পড়ান। এতে একঘেয়েমি আসবে না। পড়তে বসার সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৮টা হওয়া ভাল। মাঝে আধ ঘণ্টার বিরতি দিন। অথবা পড়ার মাঝে ১০ মিনিট করে ৩০ মিনিটের বিরতি দিতে পারেন। ছুটির দিনে একটু ছাড় দেওয়া যেতে পারে। সে দিন সকাল ৯টা থেকে ১০টা অবধিই পড়ার জন্য রাখুন।
আরও পড়ুন:
৩) ১১ থেকে ১২ বছর
স্কুল থেকে ফিরেই পড়তে বসাবেন না। বিশ্রাম নিয়ে এক ঘণ্টা সময়ে বাইরে গিয়ে খেলার জন্য দিন। না হলে ঘরেই শরীরচর্চা বা যোগাসন অভ্যাস করান। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৮টা অবধি পড়াশোনার জন্য রাখুন। প্রতি ২০ মিনিট অন্তর বিরতি দিন। সেই সময়ে মোবাইল হাতে দেবেন না। সন্তান যেন টিভি দেখতে বসে না যায়, সে খেয়াল রাখতে হবে। বিরতির সময়ে গল্প করুন। স্কুলের পড়া যদি বেশি থাকে বা পরীক্ষা থাকে, তা হলে রাতের খাওয়া সেরে ২০ মিনিটের জন্য পড়া দেখে নিতে পারেন। প্রস্তুতি কতটা হয়েছে, তা ওই সময়ে দেখবেন।
সকালে পৌনে ৬টা থেকে সোয়া ৭টা অবধি পড়া দেখার জন্য রাখতে পারেন। যদি রাতেই পড়া তৈরি থাকে, তা হলে ওই সময়টা মেডিটেশন ও যোগাভ্যাসের জন্য রাখুন।
৪) ১৪ থেকে ১৬ বছর
স্কুলের সময় দেখে প্রতি দিন ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা সময় রাখতেই হবে। প্রতিটি বিষয়ের জন্য অন্তত ৪০ মিনিট করে সময় দিন। পরীক্ষার সময় চলে এলে তা আরও বাড়তে পারে। সকালে ৬ থেকে ৭টা অবধি সময় পড়া মুখস্থ করার জন্য রাখলে ভাল।
এই বয়সের ছেলেমেয়েদের একটানা পড়তে বসালে হবে না। প্রতি ২০ মিনিট অন্তর বিরতি দিতে হবে। কঠিন বিষয়গুলি বিরতির পরে অভ্যাস করালেই ভাল। রাত জেগে পড়ার অভ্যাস না করাই ভাল। বরং রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে সকালে উঠে পড়তে বসাতে পারেন। প্রতি দিন অন্তত আধ ঘণ্টা সময় রাখতে হবে শরীরচর্চার জন্য। এতে মন ভাল থাকবে, পড়াও তাড়াতাড়ি মুখস্থ হবে।