Advertisement
E-Paper

প্রেম কেন বার বার হয়? ভালবাসার নানা কারণ, ভাল লাগার গুণাগুণ আছে নানা প্রকার

জীবনে প্রেম হয় একাধিক বার। কিছু প্রেম টিকে যায়, কিছু প্রেম টুকরো টুকরো স্মৃতির মতো মনের এক কোণে গেঁথে যায়। তবু কেন বার বার প্রেম আসে জীবনে?

কোন শূন্যতা মেটাতে প্রেম আসে জীবনে?

কোন শূন্যতা মেটাতে প্রেম আসে জীবনে? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

রিচা রায়

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৪ ০৯:৩০
Share
Save

প্রেমে পড়া বারণ! কিন্তু বারণ করলেই বা শুনছে কে? কারণে হোক কিংবা অকারণে ‘দো দিল’ পরস্পরের সঙ্গে ঠিক মিলে যায়। কোনও বাধা, বারণ কিছুই মানতে চায় না। হৃদয়ের কথা বলতে মন এত ব‍্যাকুল হয়ে পড়ে, যে তিস্তার জল যে দিকেই গড়াক, হুঁশ থাকে না। এমনকি, প্রেমে ধোঁকা, ছ্যাঁকা, ল্যাং— যাবতীয় সব কিছু খেয়েও ফের প্রেমের গলিতে পা বাড়ান। কিসের টানে? তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সংস্থিতা মণ্ডল বলেন, ‘‘বাকিদের কথা আমি জানি না। আমি এখনও পর্যন্ত তিন বার সম্পর্কে জড়িয়েছি। প্রতি সম্পর্কের মেয়াদ কয়েক মাসের হলেও, আমার কোনও তিক্ত অভিজ্ঞতা নেই। সম্পর্ক ভেঙেছে ঠিকই, কিন্তু যৌথতার দিনগুলি স্বপ্নের মতো ছিল। সেই স্বপ্নের দিন কাটাব বলেই ভালবাসার প্রতি বিশ্বাস উঠে যায়নি। নতুন করে ভালবেসেছি। ভালবাসা একটা অনুশীলন। সেটা মরে যেতে দিতে নেই। বাঁচিয়ে রাখতে হয়।’’

ভুবন জুড়ে প্রেমের ফাঁদ পাতা। সেই ফাঁদে কে, কত বার নিজেকে সমর্পণ করবেন, তার হিসাব প্রেমের দেবতার খাতা খুঁজলেও পাওয়া যাবে না। ভালবাসা এমন এক শব্দ বর্ণমালা যে, মায়ার নাগপাশে নিজেকে জড়াননি অথবা জড়িয়ে পড়েননি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। এক বার, দু’বার, তিন বার... জীবনে যত বারই প্রেম আসুক, কাছে-দূরে-জলে-স্থলে ভালবাসার সুরে ঠিক বেজে ওঠে বাঁশি। রুবি রায় থেকে বনলতা সেন, সেই সুর এড়িয়ে যেতে পারেন না কেউই। সহজ নয়। জীবনের বিভিন্ন বাঁকে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে দেখা হয়। প্রেমও হয় একাধিক বার। কিছু প্রেম টিকে যায়, কিছু প্রেম টুকরো টুকরো স্মৃতির মতো মনের এক কোণে গেঁথে যায়। আবার কোনও সম্পর্ক খারাপ অভিজ্ঞতার সামনে দাঁড় করায়। তবুও, জীবনে নানা ভাবে বার বার প্রেম খুঁজে নেন অনেকেই। ‘কী হবে অতীত নিয়ে?/ চলো পুনর্বার প্রেমে পড়ি’— অতীত পিছনে ফেলে এগিয়ে চলেন। কিন্তু প্রেম-সমুদ্রের ঢেউ কেন বার বার ভাসিয়ে নিয়ে যায় গভীরে? ভালবাসার গালিচায় প্রেমের ছায়াপথ ধরে কেন হাঁটতে মন চায়? কেন মনের মিনারে প্রেমের অনুভূতি বুদ্বুদ কাটে? মোদ্দা কথা, জীবনে প্রেম আসে কোন শূন্যতা মেটাতে?

হোক না সিনেমা, তবু তো প্রেম!

হোক না সিনেমা, তবু তো প্রেম! প্রতীকী ছবি।

মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ‍্যোপাধ‍্যায় বলেন, ‘‘পৃথিবীতে আসার পর আমরা মা এবং বাবা, এই দু’জনের সম্পর্কের মধ্যে এসে পড়ি। ফলত অনেক সময়ে আমার একার নিজস্ব একটা সম্পর্ক হবে, এর তাগিদ তৈরি হতে পারে। এক এক বয়সে এক এক ভাবে তার সংজ্ঞা নির্ধারিত হতে পারে। প্রেমের ক্ষেত্রে যে বোধ অত‍্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে, যে উল্টো দিকের মানুষটির সঙ্গে বিশেষ ভাবে জুড়ে গেলাম। প্রেমের এটা একটি দিক। সব সময়ে এমন না-ও হতে পারে। অনেকেই পলিঅ্যামোরাস সম্পর্কে আছেন। তাঁরা সম্পর্ককে অন‍্য ভাবে সংজ্ঞায়িত করছেন। সম্পর্ক, সাহচর্য, যৌথতার অর্থ প্রত‍্যেকের কাছে আলাদা। জীবনে প্রেম নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামাননি, এমন মানুষও তো আছেন। যিনি হয়তো প্রেমের সম্পর্কে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। আসল প্রেমের প্রয়োজন প্রত‍্যেকের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা ভাবে নির্মিত হয়।’’

‘আমরা দু’জন ভাসিয়া এসেছি, যুগল প্রেমের স্রোতে’

‘আমরা দু’জন ভাসিয়া এসেছি, যুগল প্রেমের স্রোতে’ প্রতীকী ছবি।

প্রত‍্যেকেই তাঁর প্রেমের সত্তাটিকে সংগোপনে বহন করেন নিজের মধ‍্যে। এর আলাদা করে কোনও সন-তারিখ-দিনক্ষণ-বয়ঃক্রমের প‍্রয়োজন পড়ে না। মনের চোখ ঠিক প্রাণের সখা-সখীকে খুঁজে নেয়। পাশের বাড়ির ‘চাঁদের টুকরো’ হোক কিংবা স্বপ্নে দেখা রাজকুমার— ভালবাসার ডাক ফেরাতে পারেন না কেউই। যতই পুরনো প্রেমের ক্ষত বুকের মাঝে দগদগে হয়ে থাকুক, কেউ যদি মনের সবটুকু আবেগ এক জায়গায় এনে দরাজ গলায় বলে ওঠে, ‘শুধু তোমাকেই চাই’— সেই চাওয়া অস্বীকার করার দুঃসাহস কারই বা আছে! প্রেম তো শুধু ভালবাসার প্রকাশ নয়, জীবনের প্রতিটি প্রেম প্রতি বারই এক অভিজ্ঞতার সামনে দাঁড় করায়। সেই নতুন নতুন অভিজ্ঞতায় নিজেকে জড়িয়ে নেওয়ার তাগিদ থেকেই কি প্রেম হয়?

সোহিনী সরকার এবং রণজয় বিষ্ণুর সম্পর্ক একটা সময় বেশ চর্চার বিষয় ছিল। তবে সে সব এখন অতীত। জীবনে নতুন করে প্রেম এসেছে কি না, সে বিষয়ে একেবারে ‘স্পিকটি নট’ রণজয়। প্রেমে পড়ার কারণ জানতে চাইলে একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি বলেন, ‘‘অভিজ্ঞতা তো আছেই, তবে অভ‍্যাস, বয়সের নিয়ম এবং তার সঙ্গে সিনেমার একটা বিপুল প্রভাব রয়েছে আমাদের জীবনে। একটা বয়সে এসে মনে হয় প্রেম হওয়াটা প্রয়োজন। ভুল প্রেম হয় যে কারণে। তবু প্রেম জীবন থেকে চলে যায় না। চারপাশের সম্পর্ক, সম্পর্ককে কেন্দ্র করে নানা ঘটনা ভাবায়, আনন্দ দেয়, সেই সঙ্গে একটা অনুভূতিও রয়েছে। প্রেমের ইচ্ছা খানিকটা সেখান থেকেই আসে। তবে এ সবই কম বয়সের কারণ। বড় হওয়ার পর প্রেমে পড়ার অভ‍্যন্তরীণ কারণগুলি খুঁজে পাওয়া যায়। একটি সঙ্গ দরকার হয়। যে সঙ্গ ভাল লাগার জন্ম দেয়। প্রেমে পড়ার বহু কারণ থাকতে পারে। প্রত‍্যেকের ক্ষেত্রে সেই কারণগুলি আলাদা।’’

এক জীবনে একাধিক বার প্রেমে পড়ার কারণগুলিও বদলে বদলে যায়। কারও সৌন্দর্য মন কেড়ে নেয়, কারও মেধা আবার মনের কোণে অনুভূতির জন্ম দেয়। কেউ আবার কথার প্রেমে পড়েন, কারও মনে গেঁথে যায় কাজলকালো গভীর চোখের ছবি। বাহ্যিক হলেও, প্রেমে পড়ার এগুলিও এক একটি কারণ। তবে বিদেশের বিভিন্ন নামী বিশ্ববিদ‍্যালয়ের গবেষকদের করা গবেষণাপত্র বলছে, প্রেমে পড়ার একটি বড় কারণ হল একাকিত্ব। একা থাকার উদ্‌যাপন সকলে করতে পারেন না। একাকিত্ব অনেকের কাছেই যন্ত্রণার, ভয়ের। শুধু ভালবাসায় ভর করে যোজনপথ হেঁটে ফেলতে পারেন যিনি, সঙ্গীহীনতা তাঁর কাছে দুঃস্বপ্নের মতো। তাই তো সেই ভরসার হাত ধরে পথ হাঁটার তাগিদ জাগে। আবেগ স্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়ে। প্রেমের কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে মন চায়। বইয়ের পাতার, সিনেমার পর্দার নায়ক-নায়িকার জায়গায় নিজেকে বসাতে ইচ্ছা করে। কোনও এক রূপকথার জগতে ভেসে যেতে মন চায়।

কিন্তু প্রেম মানেই কি হাসি, মজা, খেলা আর প্রমোদের মেলা? সে কথা মানতে নারাজ টলিপাড়ার অভিনেতা অম্বরীশ ভট্টাচার্য। তাঁর প্রেমজীবন নিয়ে বিশেষ চর্চা নেই। বিয়েও করেননি। অম্বরীশের এই চিরকুমার থেকে যাওয়ার কারণের আঁচ পাওয়া গেল তাঁর উত্তরে, ‘‘মানুষ বার বার প্রেমে পড়ে জীবনে একটু ঝামেলা ডেকে আনতে। আজ পর্যন্ত প্রেম করে কাউকে দীর্ঘ দিন শান্তিতে থাকতে দেখিনি। অশান্তি চলতেই থাকে। তবে এই অশান্তিই হয়তো ভাল লাগে। মানুষ যে শান্তিপূর্ণ জীবন চায়, সেটা নয়। কষ্ট-কষ্ট সুখ বলে একটা সুখ আছে, সেটাই পেতে চায়। আমার মনে হয় সেই কারণেই প্রেম হয়। প্রতি বারই প্রেম ভাঙলে মনে হয় আর সে পথে যাব না। কিন্তু তার পর কাউকে দেখে এমন একটা অনুভূতি জাগে যে, আবার একটা নতুন ঝামেলায় জড়িয়ে পড়তে হয়।’’

প্রেম হল মান-অভিমানের খেলা। রাগ থাকবে, অনুরাগ থাকবে, মন কষাকষি থাকবে, মুখ ঘুরিয়ে গোসাঘরে খিল দেওয়া থাকবে, মানভঞ্জন থাকবে। এগুলি ছাড়া তো প্রেম অসম্পূর্ণ। অম্বরীশের কাছে প্রেম ঝামেলার হলেও, প্রেম করার কিছু স্বাস্থ্যগত উপকারিতা আছে, জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদ এবং যাপন সহায়ক অনন‍্যা ভৌমিক। কারণ যা-ই হোক, প্রেম করলে নাকি গ‍্যাসের সমস‍্যা খানিকটা হলেও নিয়ন্ত্রণে থাকে। অনন্যা বলেন, ‘‘প্রেম করলে অক্সিটোসিন, ডোপামিন, এন্ডোরফিন নামক ‘হ‍্যাপি হরমোন’ নিঃসরণ হয়। এগুলি যত বেশি নিঃসরণ হবে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে, ঘুম ভাল হবে সেই সঙ্গে বাড়বে বিপাকহারও। ভালবাসা বা ইতিবাচক অনুভূতির কারণে এই হরমোনগুলির নিঃসরণ হয়। এই ধরনের হরমোন খাবার হজম করাতে দারুণ সাহায‍্য করে। মানসিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে বিপাকক্রিয়া চলে। যাকে আমরা ভালবাসি, তাকে দেখা মাত্রই এই হরমোনগুলির নিঃসরণ ঘটে। আর এই হরমোন যত বেশি নিঃসরণ হবে, হজম প্রক্রিয়াও অনেক বেশি সহজ হবে।’’

‘তোমার-আমার মাঝে তেমনই প্রেমের নদী’

‘তোমার-আমার মাঝে তেমনই প্রেমের নদী’ প্রতীকী ছবি।

বার বার কেন প্রেমের জোয়ারে ভেসে যেতে ইচ্ছে করে, তার যে নির্দিষ্ট কারণ হতে পারে না, সেটা স্পষ্ট। কার মনে কে ধরা দেবে কিংবা কে প্রথম কাছে আসবে সে সব বোঝাও শক্ত। অঙ্কের চেয়েও কঠিন। তবে তার চেয়েও কঠিন প্রেম-ভালবাসার আসল সংজ্ঞা বোঝা। নচেৎ রবীন্দ্রনাথ কেন লিখবেন, ‘সখী, ভালোবাসা কারে কয়’?

love Relation Prem

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

Best Value
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।