লাল রংয়ের খালি ব্যাগটির চেন বন্ধ করে শূন্যে উপরে ছুড়ে দিয়ে মুহূর্তে লুফে নিলেন জাদুকর। ব্যাগ খুলতেই বেরিয়ে পড়ল রং বেরংয়ের বাহারি থোকা ফুল আর একটি সুদৃশ্য কাপড়ের ব্যানার! তাতে লেখা: ‘ম্যালেরিয়া হোক পরাজিত, ভবিষ্যত্ হোক সুরক্ষিত’। কীভাবে ম্যালেরিয়াকে পরাজিত করা যাবে? হেড-সেট মাইক্রোফোনে সে নিদানও দিচ্ছেন জাদুকর বৈদ্যনাথ ঘোষ। জাদুর জগতে অবশ্য ‘বি এন ঘোষ’ নামেই পরিচিত তিনি। রবিবার ছুটির সকালে ভিড়ে ঠাসা বিনপুরের দহিজুড়ি চকে এমন ম্যাজিক দেখে তাজ্জ্বব শেখ সাবের আলি, শেখ সাজ়িদ আলির মতো কৌতূহলিরা। তাঁদের মতো জমায়েত থেকে কেউ কেউ জানতে চান, ‘রাতে মশা মারার তেল জ্বালিয়ে ঘুমোই। তা হলেও কী মশারি টাঙাতে হবে?’ এবার জাদুর ভেল্কিতে খালি বাক্স থেকে বেরিয়ে পড়ল মশারি। রাতে ঘুমোনোর সময় মশারি টাঙানোর অপরিহার্যতা ব্যাখ্যা করে জাদুকরের জবাব, “ম্যালেরিয়া থেকে বাঁচার ম্যাজিক মশারিতেই আছে ভাই!” এরপরই তুড়ি মেরে ম্যলেরিয়া পরীক্ষার র্যাপিড টেস্টিং কিট হাতে নিয়ে জাদুকরের আবেদন, “সমস্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই কিট রয়েছে। জ্বর হলেই নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে বিনামূল্য রক্ত পরীক্ষা করান। আধ ঘন্টার মধ্যে জানতে পারবেন জ্বরটা ম্যালেরিয়ার কি-না। জ্বর হলে উপেক্ষা করবেন না।”
রবিবার দিনভর জঙ্গলমহলের বিভিন্ন এলাকায় চলল এমনই অভিনব ম্যালেরিয়া বিরোধী প্রচারাভিযান। এদিন দুপুরে বেলপাহাড়ির ইন্দিরা মোড়ের কাছে ম্যাজিক দেখানোর সময় বৈদ্যনাথবাবুর চোখে পড়ল, রাস্তার ধারে ডাবের খোলা পড়ে রয়েছে। উত্সাহী দর্শকদের উদ্দেশ্যে জাদুকর জানালেন, ‘‘এভাবে ডাবের খোলা ফেলে রাখলে বৃষ্টির জল জমে সেখানে ম্যালেরিয়ার জীবানু-বাহক মশা জন্মায়। ডাব খাওয়ার পরে সেটিকে কয়েক টুকরো করে দিন। যাতে জল জমতে না পারে। এটা ভাল জ্বালানিও হতে পারে।’’ বাস ধরার অপেক্ষায় থাকা কদমডিহার প্রৌঢ়া রেবতী সর্দার বললেন, “জ্বরে বছর বছর এলাকায় লোক তো মরছেই। সবাই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে চায় না। মশারি টাঙিয়ে ঘুমোনোর অভ্যাস নেই আমাদের। কিন্তু জাদুকর যা দেখালেন, এর পর মশারি টাঙাব।” বিকেলে জামবনির পড়িহাটি গ্রামের হাটচালায় ম্যাজিক দেখতে ভিড় করেছিলেন আবালবৃদ্ধবনিতা। প্রতিটি শো চলাকালীন, স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা পথচলতি মানুষজনকে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে ইতিকর্তব্যের প্রচারপত্রও বিলি করলেন।
পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম স্বাস্থ্য জেলার উদ্যোগে জঙ্গলমহলের পথেঘাটে জাদু প্রদর্শনীর মাধ্যমে আমজনতাকে ম্যালেরিয়া নিয়ে সচেতন করা হচ্ছে। গোটা জুন মাস জুড়ে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে নানা ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। তবে ম্যালেরিয়া প্রবণ বেলপাহাড়ি-সহ তিনটি ব্লকে আগামী ছ’মাস ধরে শতাধিক সচেতনতা-শিবির করা হবে। ম্যাজিক শো’র মাধ্যমে প্রচারাভিযানে ভাল সাড়া মিলেছে বলে দাবি স্বাস্থ্য কর্তাদের। কেন এই উদ্যোগ?