২০১৯ সালে এভারেস্টে ভিড়। পর্বতারোহী নির্মল পুরজার তোলা ছবি।
এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনের মাটিতে চলছে রাশিয়ার হামলা। তার আঁচ এ বার পৌঁছল পাহাড়েও। এই যুদ্ধ পরিস্থিতির জেরেই চলতি মরসুমে এভারেস্ট (৮৮৪৮ মিটার) অভিযান করতে নেপালে যাওয়া পর্বতারোহীর সংখ্যা গত বারের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে কমতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
অতিমারির কারণে ২০২০ সালে নেপালে অভিযান বন্ধ থাকলেও গত বছর থেকে তা খুলে দেওয়া হয়েছে। এ দিকে বিদেশিদের সামনে এখনও বন্ধ চিনের দরজা। ফলে মরসুমের শুরুতে অভিযানে যেতে ক্রমেই নেপালে ভিড় জমাতে শুরু করেছেন পর্বতারোহীরা। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এভারেস্টের পথে ‘ফুটফল’ বেশ খানিকটা কম হতে চলেছে বলে অনুমান। পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর শুধু এভারেস্টের জন্যই চারশোরও বেশি বিদেশি অভিযাত্রীকে অনুমতিপত্র দিয়েছিল নেপাল। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এ বার সেই সংখ্যা বেশ খানিকটা কম হতে পারে। নেপাল পর্যটন দফতরের ৩ এপ্রিলের তালিকা অনুযায়ী, আট, সাত ও ছ’হাজারি একাধিক শৃঙ্গ মিলিয়ে মোট ৩১টি দলের ২৫২ জন অভিযাত্রী এখনও পর্যন্ত অনুমতি পেয়েছেন। যাঁদের মধ্যে এভারেস্ট যাওয়ার ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮৫ জন। নেপালের আয়োজক সংস্থাগুলি জানাচ্ছে, ইউক্রেনীয় পর্বতারোহীরা এভারেস্ট-সহ বিভিন্ন শৃঙ্গ অভিযানের জন্য আগেই বুকিং করলেও যুদ্ধের কারণে তা বাতিল করেছেন।
হিমালয়ান ডেটাবেসের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরে এভারেস্ট-সহ একাধিক আট হাজারি শৃঙ্গে অভিযান করতে নেপাল গিয়েছিলেন রাশিয়ার ৪৯ জন এবং ইউক্রেনের ১৯ জন পর্বতারোহী। তাঁদের মধ্যে রাশিয়ার ১৪ জন এবং ইউক্রেনের ৬ জন গিয়েছিলেন এভারেস্টে। কিন্তু এ বারের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে যুদ্ধ। নেপাল পর্যটন দফতর সূত্রের খবর, এ বছর রাশিয়ার কোনও পর্বতারোহী দল নেপালে আসছে না। তবে রাশিয়ার তিন পর্বতারোহীকে ইতিমধ্যেই পারমিট দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে এক জন অন্নপূর্ণা শৃঙ্গে ও বাকি দু’জন আট হাজারের চেয়ে কম উচ্চতার শৃঙ্গে অভিযানে যাবেন। আসছেন না ইউক্রেনের কোনও পর্বতারোহীও।
পর্বতারোহণে নেপালের সবচেয়ে বড় আয়োজক সংস্থা সেভেন সামিটের কর্ণধার মিংমা শেরপা বলছেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে এভারেস্ট ও অন্নপূর্ণা অভিযান করার কথা ছিল, এমন ২০ জন ইউক্রেনীয় পর্বতারোহী বুকিং বাতিল করেছেন। এখনও পর্যন্ত আমাদের কোনও দলে রাশিয়ার অভিযাত্রী নেই। ইউরোপের অন্য দেশ থেকে আসা অভিযাত্রীদের সংখ্যাও আগের থেকে তুলনায় কম।’’ নেপালের অন্য আয়োজক সংস্থা ‘পায়োনিয়ার অ্যাডভেঞ্চার’-এর মালিক পাসাং শেরপা কাঠমাণ্ডু থেকে ফোনে জানালেন, তাঁদের সঙ্গে অন্নপূর্ণা-মাকালু অভিযানে যাওয়ার কথা ছিল ইউক্রেনের সাত জনের একটি দলের। দলটি অভিযান বাতিল করেছে। ওই সংস্থার সঙ্গে এভারেস্ট বেসক্যাম্প-সহ অন্য রুটে ট্রেকিং করতে আসার কথা ছিল ৪৮ জন ইউক্রেনীয়ের। বাতিল হয়েছে সেগুলিও। পাসাংয়ের কথায়, ‘‘যুদ্ধের জন্য পর পর বুকিং বাতিল হওয়ায় লোকসানে পড়ছি। বিশেষত নেপালের ছোট ছোট আয়োজক সংস্থাগুলির ক্ষতির পরিমাণ তুলনায় অনেকটাই বেশি।’’
যুদ্ধের আবহে পাহাড়ি পথে রাশিয়ার পর্বতারোহীদের ঢুকতে না দেওয়ার আর্জি জানিয়েছে ইউক্রেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘নো পিস নো ক্লাইম্ব’ আওয়াজ তুলেছেন ইউক্রেনের পর্বতারোহীদের কেউ কেউ। নয়াদিল্লির ইউক্রেনের দূতাবাস থেকে নেপালের দূতাবাসকে লেখা একটি চিঠি সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে, যেখানে যুদ্ধ বন্ধ না হলে রাশিয়ার পর্বতারোহীদের নেপালে ঢুকতে না দেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে। তবে নেপাল পর্যটন দফতরের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানাচ্ছেন, এখনও পর্যন্ত এমন কোনও চিঠি পায়নি নেপাল সরকার। দফতরের কাছেও সরকারি তরফে এ সংক্রান্ত কোনও নির্দেশ আসেনি। তবে কোনও বিদেশি পর্বতারোহীর সামনে পাহাড়ের পথ বন্ধ করার রেওয়াজ নেই নেপালের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy