ছবি প্রতীকী। তুলেছেন সুদীপ ভট্টাচার্য
প্রতিদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে কলকলিয়ে সারাদিনের যাবতীয় গল্প মাকে শুনিয়ে তবে ইউনিফর্ম ছাড়ত বিদিশা। সিক্সে পড়লে কি হবে। এখনও পোশাক বদল থেকে হাতমুখ ধোয়া, সবেতেই মাকে চাই তার। কিন্তু সে দিন ব্যাপারটা ঘটল অন্য রকম। যে মেয়ে গেট থেকে কথা বলতে-বলতে বাড়ি মাথায় করে তোলে সে বাড়ি ঢুকল নিঃশব্দে! মুখ থমথম করেছে। চুপচাপ নিজের ঘরে চলে গেল বিদিশা। খানিক ডাকাডাকির পর খেতে এল। খাবার টেবিলেও অস্বাভাবিক রকম চুপচাপ। মা বুঝেছেন কোথাও একটা বড়সড় গোলমাল হয়েছে। ঘরে গিয়ে আদর করে মেয়ের কাছে জানতে চাইলেন কী হয়েছে? কেন এমন করছিস? প্রথমে চাপতে চাইলেও কিছু ক্ষণের মধ্যেই মায়ের কোলে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে ওঠে বিদিশা। কাঁদতে-কাঁদতে মাকে জানায়, তার সঙ্গে ‘অসভ্যতা’ করেছে স্কুলেরই একজন। হুমকি দিয়েছে, কাউকে জানালে ফল খারাপ হবে।
স্কুলে, বাসেট্রামে, কোচিংয়ে এমনকি বাড়িতেও যৌন হেনস্থার শিকার শিশু-কিশোরের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। চার পাশে নজর বোলালে এবং সংবাদমাধ্যমে চোখ রাখলেই এই ধরনের ঘটনার কথা শোনা যায়। অনেক সময় শিশু বুঝতেই পারে না তার সঙ্গে ঠিক কী হচ্ছে। বা বুঝলেও ভয়ে কাউকে বলতে পারে না। ফলে দীর্ঘদিন ধরে অত্যাচারের শিকার হতে হয় তাদের। অনেক সময় বাড়ির লোকও সব জানার পরে লোকলজ্জার ভয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চায়। শিশু যৌন হেনস্থার কথা জানালেও অনেকে আবার শিশুর কথা বিশ্বাস করতে চান না। শিশুর সঙ্গে এমন কিছু ঘটলে শুরুতেই বিষয়টির নিষ্পত্তি করা জরুরি। না হলে এই ঘটনার প্রভাব শিশুর মনের উপর সারা জীবনের মতো নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এখন প্রশ্ন হল, একটি শিশু স্কুলে বা বাড়ির বাইরে অন্য কোথাও যৌন হেনস্থার শিকার হচ্ছে কি না তা কেমন করে বুঝবেন বাড়ির লোকেরা? এ ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ে অভিভাবকদের নজর রাখতে হবে। সাধারণ ভাবে দেখা গিয়েছে, এমন কিছু ঘটলে সবার আগে শিশু-কিশোরদের স্বাভাবিক আচরণে আমূল পরিবর্তন ঘটে যায়। খুব কথা বলা শিশু হয়তো একদম চুপ করে যায়। হয়তো খাওয়া বন্ধ করে দেয় বা পড়াশোনায় হঠাৎ করে খারাপ করতে থাকে বা সব সময় ভয় পেয়ে থাকে।
বাড়ির সকলের প্রিয় উচ্ছ্বল ছোট্ট মেয়েটি হঠাৎ করে যদি বাড়িতে একা-একা থাকতে শুরু করে বা যদি লোকজনের ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে চলতে চাইছে বলে মনে হয় কিংবা ঘরের মধ্যে একটু সিঁটিয়ে থাকে তা হলে খেয়াল রাখতে হবে। বাবা-মার কাছ থেকে একটু দূরে দূরে থাকলেও বিষয়টি নজরে রাখতে হবে। আরও একটি লক্ষণ হল, সে জামাকাপড় খুলতে চাইবে না। এমনিতে ছোটরা একটা বয়স পর্যন্ত পোশাক বদলাতে বড়দের সাহায্য নেয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সে মা-কেও পোশাক খুলতে দিতে চাইবে না। এমনও দেখা গিয়েছে, পরিধেয় পোশাক দ্রুত খুলে শিশু দলা পাকিয়ে সরিয়ে রেখেছে। কেউ কেউ আবার নিজের পোশাক, বিশেষ করে অন্তর্বাস নিজেই তাড়াতাড়ি ধুয়ে ফেলছে। আচরণে আরও কিছু পরিবর্তন নজর রাখতে হয়। যেমন খুব খিটখিটে বা ভিতু হয়ে গিয়েছে। কথায় কথায় রেগে যাচ্ছে বা সামান্য কথায় কেঁদে ফেলছে। দেখতে হবে তার শরীরে কোথাও কালসিটে, ক্ষত, ছ্যাঁকা, ছড়ে যাওয়া বা কামড়ে দেওয়ার দাগ আছে কিনা। দেখতে হবে, হাঁটাচলার মধ্যে কোনও অস্বভাবিকতা চোখে পড়ছে কিনা। মলমূত্র ত্যাগ করার সময় যন্ত্রণা হচ্ছে কিনা। যদি তেমন কিছু বড়রা বুঝতে পারেন তা হলে বিষয়টি জানার জন্য ছোটদের উপর চাপ দেওয়া বা তাড়াহুড়োর দরকার নেই। বরং গল্পের ছলে জানার চেষ্টা করুন। নিতান্ত মুখ না-খুললে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
অনুলিখন: দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy