পুজো শুরু হল জ্বর দিয়ে। আমার পাঁচ বছরের ছেলে অদিত্য জে মুখোপাধ্যায় আর আমি এ ভাবেই পুজোকে স্বাগত জানালাম। আর সে জন্য বন্ধুদের সঙ্গে তৃতীয়া আর চতুর্থীর সমস্ত পরিকল্পনা ভেস্তে গিয়েছে। কিন্তু এ বার বহু বছর পর আমি কলকাতার পুজো দেখলাম। প্রায় ৩-৪ বছর পর। আর সেটাই আনন্দের। প্রতি বার দেশের বাইরে বাইরে অনুষ্ঠান করতে যেতে হয়। পুজোর আগে থেকেই পাড়ি দিতে হয়, সে ভাবেই সমস্ত পরিকল্পনা করা থাকে। তবে এ বার বাংলাতেই কয়েকটা অনুষ্ঠান ছিল।
ছোটবেলায় উত্তর কলকাতার বাগবাজার সর্বজনীন পুজোর মণ্ডপেই সময় কাটত। ওখানেই থাকতাম গোটা পুজোটায়। বাড়়ি আসতাম কেবল পোশাক বদল করতে। পঞ্চমী থেকে বিসর্জন পর্যন্ত ওই মাঠেই সময় কাটাতাম। বেলুন ফাটানো, স্টলে খাওয়াদাওয়া করা, হজমি কিনে কিনে খাওয়া, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে চরকি চড়া— কত যে সুন্দর স্মৃতি! ও ভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে সময় কাটানো আর নেই। স্বাভাবিক সেটা। পেশাগত কারণে গোটা পৃথিবা ঘুরে বেড়াতে হয়। অনেক দিন পর এ শহরে আছি। তবে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে ঠাকুর দেখিনি। ছেলেকে নিয়ে অত ভিড়ে যাওয়াটা মুশকিল ছিল। ছোটবেলায় পায়ে ফোস্কা পড়াটা মিস্ করি, কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সে সবের পাট আর নেই।
মেয়ের সঙ্গে জোজো। ছবি: সংগৃহীত।
আরও পড়ুন:
তবে আমার ছেলে এখন বুঝতে শিখছে। সে সময়ে জন্মস্থানে থেকে পুজো কাটানোর অভিজ্ঞতা দিতে পারছি ওকে, এটাতেই ভাল লাগছে। ওর স্মৃতিতে থেকে যাবে এ বছরটা। এ বছর কলকাতা শহরের বিভিন্ন আবাসনে, মেদিনীপুরে, পাঁশকুড়ায় অনুষ্ঠান করেছি। সেই সব জায়গায় পুজো দেখেছে, ঠাকুর দেখেছে ছেলে। কেবল নবমীর দিন হায়দরাবাদ যাচ্ছি একটা কাজে। তবে আমার মেয়ে মেহকা মুখোপাধ্যায় বড় হয়ে গিয়েছে। বেঙ্গালুরুতে একা একা থাকে। ও এ বার পুজোয় আসতেও পারেনি কাজের চাপে। ফোনে কথা বলার সময়টুকুও পাওয়া যায় না ওর সঙ্গে।
ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে মঞ্চ মাতাচ্ছেন জোজো। ছবি: সংগৃহীত।
পুজো মানেই যে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া, সময় কাটানো— সে বিষয়টা আমার জীবনে তেমন ভাবে নেই। সম্ভবত এই পেশার সকলের জীবনেই তেমন বন্ধুত্বের অস্তিত্ব নেই আর। ইন্ডাস্ট্রিতে হাতেগোনা ৫-৬ জন বন্ধু রয়েছে আমার। তাঁদের সঙ্গে আমার বাড়িতে আসর বসে তৃতীয়ায়, চতুর্থীতে। কিন্তু ওই যে বললাম, জ্বরে কাবু হয়ে এ বারের পরিকল্পনাগুলি সব ভেস্তে গিয়েছে। ছেলেও অসুস্থ ছিল। তবে যতটুকু সময় পেয়েছি, আনন্দ করে পুষিয়ে নিয়েছি।