Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Gardening

Mental Health: মনের ভ্যাকসিন

আবার চলছে বিচ্ছিন্নবাস, অনলাইন ক্লাস, বাড়ি থেকে অফিস। করোনাকালের ঘরবন্দি জীবনে বিপুল স্ট্রেস জমছে মানবমনে। তারও তো প্রতিকার চাই।

বাড়িতেই বাগান করুন।

বাড়িতেই বাগান করুন।

চিরশ্রী মজুমদার 
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:০৬
Share: Save:

এই তৃতীয় স্রোতে কে কখন পজ়িটিভ হবেন— তার নিশ্চয়তা নেই। একদিকে যেমন সেই চিন্তা, তেমনই বয়স্ক মানুষদের নিয়ে রয়েছে বেশি দুশ্চিন্তা। টাইমলাইনেও বাড়ছে দুঃসংবাদ। মন ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে আবার। বিচ্ছিন্নবাসে আপনজনের স্নেহস্পর্শটুকুও নিষিদ্ধ। শরীরের যন্ত্রণা দ্বিগুণ করছে সেই মনোকষ্ট। ওয়ার্ক ফ্রম হোমে প্রোডাক্টিভিটি বজায় রাখতে নাজেহাল অনেকেই। ফিরেছে কর্মক্ষেত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তাও। ফল, একটুতেই মেজাজ হারানো, পারিবারিক অশান্তি। লাগাতার অনলাইন স্কুলিংয়ে বাচ্চারাও অধৈর্য, অমনোযোগী হয়ে পড়ছে। মানসিক স্বাস্থ্যের যে ক্ষতি করছে অতিমারি, তার থেকে রেহাই মিলবে কী করে? বিশেষজ্ঞরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন ঠিকই, তবে অতিমারিজাত প্রবল মানসিক ক্লান্তি, স্ট্রেসকে মোকাবিলার উপায়গুলো কিন্তু একটু নিজেদেরই জোগাড় করে নিতে হবে। সেই রাস্তায় আপনাকে কিছুটা এগিয়ে দিতে পারি।

বইয়ের মতো বন্ধু সংক্রমণ কত, মৃত্যু কত বাড়ল— শুধু সেই হিসেব করবেন না। সংক্রমণের হার কমছে কি না, কত জন সুস্থ হলেন, সেই খবরও রাখুন। এই বিপদে বইয়ের জগতে ডুব দিলে, মনটা অন্য দিকে ঘুরবে। ফিকশন, রান্নার বই, হাল্কা ম্যাগাজ়িন, কবিতা— যা ভাল লাগে পড়তে শুরু করুন। টিনটিন, অ্যাসটেরিক্স, নন্টে ফন্টে— কমিকস পড়ুন। বুকের পাথরটা হালকা হবে। বিচ্ছিন্নবাসে বই কাছে রাখলে দিনগুলো ঝড়ের গতিতে কেটে যাবে। বই পড়ার অভ্যেস মস্তিষ্কের কোষগুলিকে উজ্জীবিত করে। মনঃসংযোগ, সৃষ্টিশীলতার অনুশীলন হয়। এ সবই মনের ভাল গুণ বা শক্তি। সেই মনের জোরই বিষাদকে আপনা হতেই ঠেলে সরিয়ে দেবে। শান্ত মনে কাজও ভাল হয়।

নিজেকে প্যাম্পার করুন ইউটিউব দেখে রান্না করুন। রান্নার পদ্ধতিতে ইন্দ্রিয়গুলি সজাগ আর চনমনে হয়ে যায়। ফলে স্ট্রেস কমে। রোজ নতুন রেসিপি ট্রাই করার এনার্জি না থাকলে, মাঝেমধ্যে নতুন সস বা স্প্রেড ব্যবহার করুন। ডেলিভারি অ্যাপের মাধ্যমে কাছের মানুষদের আপনার রান্না প্যাক করে পাঠিয়েও দিন। একসঙ্গে বসে পাত পেড়ে খাওয়ার সুখটুকুর পরশ পাবেন। খাবার আনিয়ে রেস্তরাঁর আবহ তৈরি করে পরিপাটি টেবিল সাজিয়ে খেতে বসে যান। মেনু পাল্টালেই মুডও বদলাবে।
মন ভাল না থাকলে সাজগোজের ইচ্ছে হয় না। বিষয়টাকে উল্টে দিন। বাড়িতে একটা সুন্দর পোশাক পরুন। নখ ফাইল করুন, নেলপলিশ বদলান। শীতে পা ফাটছে কি না, খেয়াল রাখুন। পেডিকিয়োর কিট আনিয়ে বাথসল্ট দিয়ে পা ঘষে পরিষ্কার রাখুন। সুদৃশ্য, পেলব হাত-পা, কেতায় রঞ্জিত নখ, হালকা লিপস্টিক, সুগন্ধী— এ সব দেখলে মন খারাপ কাছে ঘেঁষবে না। রোজকার যাপনে বৈচিত্র রাখুন। নতুন বেডশিট পাতুন বা কার্পেটটা বদলে ফেলুন। গাছের টব রং করে দেখুন, এইটুকুতেও মন কতখানি উজ্জ্বল হয়! এ সব কাজে শরীরও সচল এবং সুস্থ থাকবে।

জীবনটাকেও সাজান রোজ শারীরচর্চা করুন। খোলামেলা জায়গায়, মাঠে জোরে হাঁটুন। আধ ঘণ্টা ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করুন। ঘরেই যোগাভ্যাস করুন। রক্তসঞ্চালন হলে ‘গুড হরমোন’ও নিঃসরণ হবে। গান শুনুন। মন মুহূর্তে ঝলমলে হবে। বাড়ির মধ্যেই গানের সঙ্গে একটু নাচও চলতে পারে। ইচ্ছে হলে, রিল বানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে দিন। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়বেন না। অবসরের সময়টা গঠনমূলক কাজে, নিজের শখের জন্য সরিয়ে রাখতে পরামর্শ দিচ্ছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সুজিত সরখেল। গিটার শেখা, নতুন ভাষা, ফোটোগ্রাফি, আঁকা, পেপারক্রাফ্ট— দৈনন্দিন দৌড়ঝাঁপে যে শখগুলো পূর্ণ হত না, সে দিকে নজর দিন। করোনা হলে কী হবে— ভাবার বদলে, লড়াইয়ের নকশা আগেভাগে গুছিয়ে রাখা ভাল। বয়স্কদের প্রেশার, সুগার ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে আছে কি না খেয়াল রাখুন। আপৎকালীন ব্যবস্থা, ওষুধের দোকানের নম্বর হাতের কাছে রাখুন।

সামান্যতম উপসর্গ দেখা দিলে, শীতের সময়ে ঠান্ডা লেগেছে ভেবে এড়িয়ে যাবেন না। ক’দিন নজর রাখুন নিজের শরীরের উপরে। আপনার থেকে কেউ সংক্রমিত হয়েছে জানলে অপরাধবোধ আসতে পারে। সেটা ঘটতে দেবেন না। সাত দিনের বিচ্ছিন্নবাস শেষ হলেই আগের কর্মশক্তি ফিরে পাবেন— আশা না করাই ভাল। এতেও স্ট্রেস বাড়বে। কাশি, দুর্বলতা সারবে ধীরে। সেই সব খেয়াল রেখেই অফিস ও বাড়ির কাজকর্ম শুরু করুন।

হৃদয়ের উষ্ণতার খোঁজে সংবেদনশীলতা, হৃদয়বৃত্তির অনুশীলন করুন। নিজের উপরে, অন্যের প্রতি বিরক্তি কমবে। ওয়ার্ক ফ্রম হোম মহিলা বা পুরুষ কারও জন্যই সহজ নয়। উভয়ে দায়িত্ব ভাগ করে নিলে ঘরের কাজটা অন্তত তাড়াতাড়ি শেষ হবে। বাড়তি সময়টুকু একসঙ্গে সিনেমা-সিরিজ় দেখুন, কফির কাপ হাতে গল্প করুন। সম্পর্ক সুস্থ থাকলে মনের মেঘলা ভাব দ্রুত কেটে যাবে। সন্তানের সঙ্গে ক্রিকেট খেলুন, ম্যাচ দেখুন। ওর ডিজিটাল আসক্তি দূর হবে। ব্যাডমিন্টন, টেনিসে শারীরিক দূরত্ব থাকে। আবাসনের বা পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে পারেন। সময়টা ভুল থেকে শেখার, জীবনটাকে শুধরে নেওয়ার। অসহায় মানুষের পাশে থাকুন, বাগান করুন, পোষ্যের সঙ্গে সময় কাটান, শীতে কাতর আর্ত পথপশুর সহায় হোন। এ সবই জীবনের ‘পজ়িটিভিটি’ বাড়ায়। যেমন, বিজ়নেসউয়োম্যান সোমিনী সেন দুয়া শুরু করেছেন ‘মৃত্তিকা: আর্থলি টেলস’ নামের উদ্যোগ। প্রকৃতিবান্ধব উপায়ে বাঁচার পথের আলোচনা চলে এই প্ল্যাটফর্মে। শেখেন মৃৎশিল্প, মোমবাতি তৈরি। বাঁশের টুথব্রাশ বানিয়ে দেখান কেউ। ব্যক্তিগত সঙ্কটে সোমিনীর বুকের বল হয়েছে এই প্ল্যাটফর্ম। তাঁর কথায়, “যন্ত্রণা থেকেই তো আমরা শক্তির সন্ধান পেয়ে যাই।”

এই ক্রান্তিকালে দূরে থেকেও এ ভাবেই জুড়ে থাকুন মানুষের সঙ্গে। তবেই একলা ঘরে ডুকরে কাঁদতে ইচ্ছে করবে না। দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় অক্সিজেন নিয়ে অসুস্থের বাড়ি ছুটে যাওয়া, হোম ডেলিভারির ডাব্বায় গ্রিটিংস কার্ড আটকে এ ভাবেই নিজের ও অন্যের মনের কালি মুছে ফেলেছিলেন কত জন। এ বারে হয়তো সেই ভয়াবহতা নেই। তবু অন্ধকার ঘনিয়েছে। কেটেও যাবে ধীরে, কিংবা শিগগিরিই। তত দিন শরীরের সঙ্গেই, নিজের ও অন্যদের মনেরও যত্ন নিন। শুধু, এই ঢেউও মিলিয়ে যাবে যখন, মাস্ককে যেন ভুলবেন না!

মডেল: পিয়ান সরকার, শ্রীময়ী ঘোষ, মুনমুন রায়, শ্রীলগ্না বন্দ্যোপাধ্যায়, রাইমা
ছবি: অমিত দাস, জয়দীপ মণ্ডল, দেবর্ষি সরকার

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gardening Cooking Mental Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE