Advertisement
E-Paper

সৈকত না গিয়েই সমুদ্রের স্বাদ! মাছে-ভাতে বাঙালিকে পাতে মানস ভ্রমণ করাতে দুয়ারে উপকূল

স্বাদ এমনই জিনিস, যা জিভের কোরক দিয়ে মস্তিষ্কের সেই অংশে গিয়ে টোকা দেয়, যেখানে জমে থাকে স্মৃতি। যেখান থেকে উড়ান পায় কল্পনা। সেই একই অঙ্ক মেনে খাবারের পালে ভর করে এই আলতো শীতের হাওয়া মেখে বেড়িয়ে আসা যায় বাংলার উপকূলেও।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৫ ১৭:৪৫
মৌরলা মাছের ফিশ অ্যান্ড চিপস।

মৌরলা মাছের ফিশ অ্যান্ড চিপস। — নিজস্ব চিত্র।

নরম রোদ গায়ে মেখে বালিতে পা ডুবিয়ে সমুদ্র সৈকতে একটা শনি কিংবা রবিবার। সামনে ঢেউ, মাথায় খড়ের টুপি আর হাতে নুন লেবু ছড়ানো ঝলসানো মাছের থালা। কিংবা কোনও জেলে দম্পতির হোগলা ছাওয়া দোকানঘরে সমুদ্র দেখতে দেখতে টাটকা মাছ কিংবা কাঁকড়ার ঝাল দিয়ে মধ্যাহ্ণভোজ। সঙ্গে হয়তো চেয়ে নিলেন মুচমুচে করে ভাজা ছোট মাছ। বা আগের দিন জালে ধরা পড়া ইলিশ মাছ শিলেবাটা মশলা আর কাঁচালঙ্কা দিয়ে ভেজে আনলেন জেলেবউ। নভেম্বরের শেষ কিংবা ডিসেম্বরের শুরুর সপ্তাহে উপকূলে এমন একটা কি দু’টো দিন পাওয়া গেলে, আগামী বেশ কয়েক মাসের জন্য মন তাজা হয়ে যায়। ব্যস্ত জীবনে তেমন ছুটি নিয়ে সৈকতে যাওয়ার অবকাশ কম। তবে চাইলে বাংলার উপকূলের মেজাজ এই নভেম্বরে মিলতে পারে কলকাতায় বসেই।

স্বাদ এমনই জিনিস, যা জিভের কোরক দিয়ে মস্তিষ্কের সেই অংশে গিয়ে টোকা দেয়, যেখানে জমে থাকে স্মৃতি। যেখান থেকে উড়ান পায় কল্পনা। হয়তো সে জন্যই অনেক দিন পরে ছোটবেলার কোনও খাবার খেলে মন জুড়ে ভিড় করে পুরনো স্মৃতি। সেই একই অঙ্ক মেনে খাবারের পালে ভর করে এই আলতো শীতের হাওয়া গায়ে মেখে বেড়িয়ে আসা যায় বাংলার সমুদ্রোপকূলেও। যার টিকিট দিচ্ছে মধ্য কলকাতার এক রেস্তরাঁ ‘দি অ্যাস্টর’।

ধনেপাতা বাটা ভেটকির সঙ্গে কলমিশাকের ছেঁচকি, সর্ষেবাটা গ্রেভি আর নারকেল দিয়ে তুলাই পাঞ্জি চালের ভাত।

ধনেপাতা বাটা ভেটকির সঙ্গে কলমিশাকের ছেঁচকি, সর্ষেবাটা গ্রেভি আর নারকেল দিয়ে তুলাই পাঞ্জি চালের ভাত। — নিজস্ব চিত্র।

বাংলার উপকূলের খাবার মানে নানা রকমের মাছ, চিংড়ি আর কাঁকড়া। যা শুধু সমুদ্র উপকূলে নয়, বাংলা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নদ-নদীর তীরেও তার নানা পদের সন্ধান মেলে। তবে বাংলার সাগরতীরের মাছ রান্নার একটি বিশেষত্ব আছে। এখানে মাছকে অনেক রকম মশলা দিয়ে ভারি করে তোলা হয় না। অল্প মশলা আর তাজা মাছের স্বাদ। এটিই বাংলার উপকূলের রান্নার মূল কথা। মাছ রান্নায় এখানে বড়জোর কোনও একটি বা দু’টি মশলাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। সেটা সর্ষেবাটা হতে পারে, সাধারণ হলুদ আর জিরেবাটা হতে পারে, লঙ্কাবাটা কিংবা নারকেলের দুধও হতে পারে। মধ্য কলকাতার ওই রেস্তরাঁর এগজ়িকিউটিভ রন্ধনশিল্পী আজ়াদ আরিফ সে কথা মাথায় রেখেই সাজিয়েছেন প্রাক্‌-শীতের মাছের উৎসবের মেনু। তবে চেনা রান্নাকে তিনি দিয়েছেন অচেনা ট্যুইস্ট।

প্রন ইন বেলডাঙা গ্রিন চিলি মালাইকারি।

প্রন ইন বেলডাঙা গ্রিন চিলি মালাইকারি। — নিজস্ব চিত্র।

যেমন চিংড়ির মালাইকারিতে রয়েছে সবুজ রঙের গ্রেভি। দেখে মনে হতে পারে, তাইল্যান্ডের গ্রিন কারি। কিন্তু তা নয়। আসলে লাল লঙ্কার বদলে ওই ঝোল তৈরি করা হয়েছে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার লঙ্কাবাটা দিয়ে। যে লঙ্কার গন্ধ এবং ঝালের আলাদা খ্যাতি রয়েছে। চিংড়ির সেই পদ পাতে আসে রাঙাআলুর ম্যুজ় সহযোগে। আবার সর্ষেবাটা দিয়ে পাতুরির বদলে এখানে ভেটকিকে মাখানো হয় ধনেপাতাবাটায়। ঝাঁজালো সর্ষের কারির উপর আলগোছে সেই মশলা মাখানো সবুজ ভেটকির পাশে সাজিয়ে দেওয়া হয় শুকনো লঙ্কা দিয়ে ভাজা কলমিশাকের ছেঁচকি। পাশে নারকেলের গন্ধ মাখা তুলাইপাঞ্জি চালের ভাত। মাছের উপর সাজানো থাকে রাঙাআলু ভাজা। পুরোদস্তুর প্ল্যাটার বলতে যা বোঝায়, তা-ই। সেখানে ভাত, ভাজা, গ্রেভি এবং প্রোটিন, সবই আছে। বাংলার উপকূলে তো এ ভাবেই পুকুরপাড় থেকে তুলে আনা কলমিশাক ভাজা, ভাত, সর্ষেবাটা মাছ, আলুভাজা, ডাল দিয়ে মধ্যাহ্ণভোজ সারেন কত মানুষ! সেই ভাবটুকু নিয়েই তাকে অন্য ভাবে সাজিয়েছেন রন্ধনশিল্পী।

অর্ধেক রুই মাছের পাতুরির সঙ্গে গার্লিক ব্রেড!

অর্ধেক রুই মাছের পাতুরির সঙ্গে গার্লিক ব্রেড! — নিজস্ব চিত্র।

মেনুতে এমন আরও নানা চেনা অচেনা স্বাদের মিশ্রণ রয়েছে। কোথাও লাউ চিংড়ি পরিবেশন করা হচ্ছে কুমড়োর রিসোতো দিয়ে। আবার কোথাও বোরোলি মাছের সঙ্গে থাকছে ধনেপাতার গন্ধমাখা গোবিন্দভোগ চালের ভাত আর অ্যাসপারাগাসের ঝাল। মৌরলা মাছের ‘ফিশ অ্যান্ড চিপস’, কাঁকড়ার কাটলেট, অর্ধেক রুই মাছের পাতুরিও মিলবে। সোজা কথায়, মাছে ভাতে বাঙালিকে পাতে উপকূল ভ্রমণ করানোর ব্যবস্থা। যা ১৪ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে গিয়েছে। চলবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত।

Bengal coastal food coastal cuisine Sea Food Festival Sea Food
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy