Advertisement
E-Paper

রঙের রাসায়নিকে পুড়তে পারে কর্নিয়া, ক্ষতি ফুসফুসেরও, সাবধানে দোল খেলার পরামর্শ চিকিৎসকদের

দোল উৎসবকে আনন্দে ভরিয়ে দিতে হলে, নিজের ও কাছের মানুষদের সুস্থ থাকাটা খুব জরুরি। তাই সতর্ক হয়ে দোলের রং খেলারই পরামর্শ দিলেন কলকাতার বিশিষ্ট চিকিৎসকেরা।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৫ ১২:৪৪
Synthetic Holi colours can pose serious eye disease and can impact on lungs as well

রং খেলুন চোখ বাঁচিয়ে, পরামর্শ দিলেন চিকিৎসকেরা। ফাইল চিত্র।

আবির আর রঙে একে অপরকে রাঙিয়ে দিতে গিয়ে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হলে শরীরের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গেরই সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে— চোখ এবং ফুসফুস। রং যতই মর্মে লাগুক না কেন, চোখে না লাগলেই মঙ্গল। কথায় বলে, সাবধানের মার নেই। দোলের সময়ে ও পরে কলকাতা শহর ও আশপাশে এমন অনেক ঘটনাই প্রকাশ্যে আসে, যেখানে রং খেলার পরে লোকজনের চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়েছে অথবা দৃষ্টিশক্তি একেবারেই চলে গিয়েছে। শিশুদের ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা ঘটেছে। আবার দিনভর রং খেলার পরে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানির টানও দেখা দিয়েছে অনেকের। কাজেই উৎসবকে আনন্দে ভরিয়ে দিতে হলে, নিজের ও কাছের মানুষদের সুস্থ থাকাটা খুব জরুরি। তাই সতর্ক হয়ে রং খেলারই পরামর্শ দিলেন কলকাতার বিশিষ্ট চিকিৎসকেরা।

কর্নিয়া পুড়ে যেতে পারে রঙের প্রভাবে

লাল রঙে থাকা মার্কারির যৌগ চোখে গেলে ফুলে উঠে জল পড়ে, ভয়ানক ব্যথা করে। সবুজ রঙে থাকা কপার সালফেটের প্রভাবে চোখে ভয়ানক সংক্রমণ হতে পারে। উজ্জ্বল হলুদ রঙে থাকা লেডের মতো ভারী ধাতু চোখের স্নায়ু নষ্ট করে দিতে পারে। নীল রঙে আছে প্রাশিয়ান ব্লু, যে কারণে চোখ কড়কড় করে। তাই রং খেলার সময়ে খেয়াল রাখতে হবে, যাতে চোখ দু’টিতে রং বা আবিরের গুঁড়ো না ঢোকে। চক্ষুরোগ চিকিৎসক সৌমেন মণ্ডলের কথায়, “দোলের পরে চোখের বিভিন্ন অংশে কেমিক্যাল বার্নের ঘটনা ঘটে। জোরে ছোড়া বেলুন বা পিচকারি থেকে বেরোনো রং চোখে লাগলে, চোখের সংবেদনশীল অংশ ঝলসে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। অভ্র ও ভারী ধাতু মিশ্রিত রং বা আবিরের কারণে কর্নিয়ার ‘এপিথেলিয়াল টিস্যু’ উঠে যেতে পারে। তখন চোখ জ্বালা করবে, লাল হয়ে যাবে, অনবরত জল পড়তে থাকবে।”

সাবধানে রং খেলার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

সাবধানে রং খেলার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। ছবি: ফ্রিপিক।

ঝুঁকি থাকে কনজাঙ্কটিভাইটিসেরও

রঙের রাসায়নিক চোখে গেলে ও তার পরে চোখ কচলালে রেটিনা ছিঁড়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। প্রতি বছরই এমন কিছু ঘটনার কথা জানা যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলে ‘ট্রম্যাটিক ক্যাটারাক্ট’। এমনকি এ-ও দেখা গিয়েছে, শুকনো আবিরের মধ্যে থাকা অভ্র ও কাচের গুঁড়ো ঢুকে কর্নিয়ার চারপাশ ছড়ে যায়, ফুটোও হতে যেতে পারে। এই বিষয়ে সতর্ক করছেন গ্লকোমা কনসালট্যান্ট নিলয়কুমার মজুমদার। তাঁর কথায়, “দোলের রং লেগে কর্নিয়া ফেটে গিয়েছে, এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে। তখন দৃষ্টিশক্তি চলে যেতে পারে। তাই কেউ রং দিতে এলে বা রং মাখানোর সময়ে চোখ বুজে থাকাই ভাল। সানগ্লাস পরে থাকতে পারলে খুব ভাল হয়। তা ছাড়া রং থেকে কনজাঙ্কটিভাইটিসও হতে পারে।” রঙের ভারী ধাতুর কারণে কর্নিয়ায় ছোট ছোট দানা তৈরি হয়। যার ফলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়, চোখ দিয়ে অনবরত জল পড়তে থাকে, আঠালো তরল বার হয়, পিচুটি জমে যায় চোখে।

শ্বাসকষ্ট হলে সাবধান

শুকনো আবিরে অনেক সময়েই থাকে সিলিকা, যা থেকে ফুসফুসের প্রদাহ বা ‘সিলিকোসিস’ হতে পারে। রং তৈরির সময়ে এমন রাসায়নিক মেশানো হয়, যার টক্সিন ফুসফুসে গেলে বিষক্রিয়া হতে পারে। এই বিষয়ে চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের মত, ‘ব্রঙ্কিয়াল ইনফেকশন’-এর কারণে শুকনো কাশি, অ্যালার্জির সমস্যা বাড়তে পারে। রঙে থাকা লেড ও ক্রোমিয়ামের মতো ভারী ধাতু যদি বেশি পরিমাণে ফুসফুসে জমে যায়, তার থেকে হাঁপানি, সিওপিডি, এমনকি ফুসফুসের ক্যানসারেরও ঝুঁকি বাড়বে।

সাবধান থাকতে যা যা করণীয়

১) চোখে রং ঢুকলে সঙ্গে সঙ্গে জলের ঝাপটা দিতে হবে। চোখ কচলালেই বিপদ।

২) চোখ ধোয়ার আগে, ভাল করে হাত ধুয়ে নিতে হবে। হাতের রং চোখে গেলে সংক্রমণ বাড়বে।

৩) হাঁপানি বা সিওপিডি থাকলে রং না খেলাই ভাল।

৪) রং যেন বেশি ক্ষণ শরীরে লেগে না থাকে, তাড়াতাড়ি ধুয়ে ফেলতে হবে।

৫) অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে হাতের কাছে ইনহেলার রাখুন।

৬) জল দিয়ে ধোয়ার পরেও চোখ জ্বালা বা চোখ দিয়ে জল পড়তে থাকলে কাছাকাছি হাসপাতালে যেতে হবে।

Eye Infection Lung Diseases
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy