Advertisement
০৫ অক্টোবর ২০২৪
Tattoos

ব্যক্তিত্বের পরিচয় হোক ট্যাটু

শরীরে উল্কি এঁকে নেওয়ার চল দীর্ঘ কালের। তবে কালের নিয়মেই বদলে গিয়েছে তা। ট্যাটু এখন ব্যক্তিত্বের পরিচয়।

An image of tattoo

—প্রতীকী চিত্র।

সায়নী ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২৩ ০৮:১৩
Share: Save:

বাবাজির হাতে বেমানান উল্কি দেখে মছলিবাবাকে সন্দেহ করেছিল ফেলুদা। অর্থাৎ, সাধুবাবা হাতে এরোপ্লেনের উল্কি আঁকাতে পারেন না, পারে পাড়ার কেষ্টদা। স্পষ্টতই, উল্কি বা ট্যাটু বরাবরই যিনি করাচ্ছেন, সেই ব্যক্তির দর্শন, ব্যক্তিত্বের স্বাক্ষর বহন করে। আর শরীরে উল্কি আঁকানোর প্রচলন জিশু খ্রিস্টের জন্মের আগের সময়কাল থেকে চলে আসছে। সিনেমায় অনাবৃত দেহে উল্কি আঁকা জনজাতিদের এক রকম ভাবে দেখিয়ে আসা হয়েছে বরাবর। কিন্তু উল্কির সঙ্গে তথাকথিত ‘সভ্যতা’ যে সরাসরি সম্পর্কিত নয়, তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ আপনিই বুঝেছে। তাই ক্রিকেট তারকা বা বলিউড তারকার ট্যাটু ট্রেন্ড ফলো করতে দু’বার ভাবে না জেন নেক্সট। তবে শিল্পী তার ছাপ রেখে যাওয়ার পরে ত্বকের নকশাটি একান্ত ভাবে সেই ব্যক্তিরই। তাই পরবর্তী কালের পরিচর্যা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার।

ট্রেন্ড মেনে ট্যাটু

ট্যাটুশিল্পী দিব্যেন্দু সাহা অনেক দিন ধরেই পেশাদার ভাবে নিজের স্টুডিয়োয় এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। তিনি জানালেন, কী ভাবে সময় ও জনপ্রিয় সংস্কৃতির ধারা মেনে ট্যাটু করানোর ধারা বদলে গিয়েছে। ‘‘আগে ইংরেজি বা চাইনিজ়ে নাম লেখানো, ট্রাইবাল নকশা, কাঁটাতারের বেড়া জাতীয় পরিচিত ট্যাটুই বেশির ভাগ মানুষ করাতেন। যত সময় এগিয়েছে, এ নিয়ে ভাবনা-চিন্তা, পড়াশোনা, ধারণা বদলেছে। এখনও ট্রাইবাল নকশা করান অনেকে, কিন্তু তাতে মাওরি বা অন্য পলিনেশিয়ান দেশগুলির প্রভাব বেশি। মেয়েরা আগে ট্যাটু করালে প্রজাপতি, পাখি বা ফুলের নকশা থাকত। মেয়েরা খুব কমই আসতেন আগে, এটাও ঘটনা। এখন ছবিটা একেবারেই আলাদা। কোথায় ট্যাটু করাবেন, তা নিয়েও সাহসী হয়েছে এ প্রজন্ম। আর আমরাও এখন অনেক উন্নত, ব্র্যান্ডেড নিডল, মেশিন বাইরে থেকে আনিয়ে কাজ করতে পারি,’’ বলছিলেন শিল্পী।

ডব্লিউডব্লিউএফ-এ রক তথা ডোয়েন জনসনকে দেখে তাঁর ট্যাটুর ভক্ত হয়েছে, এমন কিশোরের সংখ্যা নেহাত কম নয়। এখন সমাজমাধ্যমের দৌলতে সেই পরিধি অনেক বিস্তৃত। ইউটিউবার, ইনফ্লুয়েন্সারদের ছড়াছড়ি তো আছেই, তার উপরে রয়েছে বলিউড, হলিউড। ক্রিকেট ও বলিউড, এ দেশে বিনোদনের সবচেয়ে বড় দু’টি মাধ্যমের তারকারা যে ট্যাটু করান, তা নিজের শরীরে আঁকিয়ে নেওয়ার হিড়িক পড়ে যায় তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। তবে এ ধরনের ট্রেন্ডকে ট্যাটুশিল্পীরা সমর্থন করেন না। তার কারণ হিসেবে দিব্যেন্দু বললেন, ‘‘প্রথমত, কোনও ট্যাটুর কপি তৈরির চেয়ে নিজেদের মৌলিক ভাবনাকে আমরা সব সময়েই বেশি গুরুত্ব দিই। তা ছাড়া, ট্যাটু একটা স্থায়ী বিষয়। বলিউডের ট্রেন্ড দু’দিন পরেই পুরনো হয়ে যাবে। তখন শরীরে করানো সেই নকশা অপ্রাসঙ্গিক মনে হতে পারে।’’

ভাবনায় বদল

যিনি ট্যাটু করাতে আসছেন, তিনি ঠিক কী চাইছেন, সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা তাঁর আছে কি না, এ সবই একজন ট্যাটু শিল্পীর দেখে নেওয়ার কথা। কোথায় করাবেন ট্যাটু, তা ডিজ়াইন ও বডি ফ্লো অনুযায়ী ঠিক করা হয়। যে সব জায়গায় রোম কম, সে সব জায়গায় রং ধরতে চায় না চট করে। যেমন, হাত বা পায়ের পাতা, আঙুল... ইত্যাদি জায়গা। তবে চাইলে সেখানেও করানো যায় ট্যাটু। আগে একটা-দুটো করে ছোট ছবি এঁকে এঁকে হাত বা পায়ের পুরো অংশটা ভরিয়ে ফেলতেন অনেকে। এখন টানা, ভরাট ডিজ়াইনে হাফ বা ফুল স্লিভ ট্যাটু খুব পরিচিত। বিরাট কোহলি কিংবা হার্দিক পাণ্ড্যর মতো ট্যাটু করানোর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। এ ছাড়া হ্যারি পটার সিরিজ়, পছন্দের গেমের সিরিজ়, হরোস্কোপ সিরিজ়ও পরিচিত। ডিভোশনাল কিংবা উনালোম ট্যাটু চাহিদা অনেক দিনই রয়েছে। সরাসরি নয়, তবে জীবনদর্শন প্রতীয়মান হয়, এমন উল্কি আঁকানোর চলও বরাবরের। আসল কথা হল, ট্যাটু করানোর প্রধান উদ্দেশ্য এমন হওয়া উচিত, যেন আপনার ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন ঘটে।

ট্যাটু করানোর সময়ে যন্ত্রণার ব্যাপারটা পুরোপুরি মানসিক, তা নিয়ে সাবধান করে দিলেন ট্যাটু-শিল্পী দিব্যেন্দু। কেউ বড় ট্যাটু করাবেন বলে এসে প্রথম আঁচড়েই সিদ্ধান্ত বদলেছেন, এমন ঘটনাও দেখেছেন তিনি। তাই এ ব্যাপারে মানসিক প্রস্তুতি জরুরি।

খরচসাপেক্ষ

ছোটখাটো ট্যাটু করাতে তেমন খরচ না হলেও একটু বিশদে, ভরাট ডিজ়াইন করালে ভালই খরচ হতে পারে। সাধারণত এই খরচের হিসেব বর্গইঞ্চি ধরে হয়। প্রথম বর্গইঞ্চি ১৫০০ টাকা, তার পর থেকে ৭০০ টাকা করে প্রতি বর্গইঞ্চি... কমবেশি এমন খরচই হয়ে থাকে। অনেক সময়ে রঙিন ট্যাটুর জন্য খরচ বাড়ে। নকশা যদি টানা, ভরাট হয়, তখন পুরো ডিজ়াইনের উপরেও দাম নির্ভর করে। সে ক্ষেত্রে মোট খরচ ন্যূনতম ১৫-১৬ হাজার টাকা থেকে শুরু হয়। রিয়্যালিস্টিক বা থ্রি-ডি ট্যাটু হলে দাম আরও বেড়ে ২৫ হাজারও হতে পারে। অনেক শিল্পী সিটিং হিসেবেও পারিশ্রমিক নেন।

দীপিকা পাড়ুকোন তাঁর এক সময়ের ‘আরকে’ ট্যাটুটির সঙ্গে জুড়ে নিয়েছেন অন্য নকশা, ঢেকে গিয়েছে প্রাক্তন প্রেমিক রণবীর কপূরের নামটি। ট্যাটু তোলার একটা উপায় হল লেজ়ার ট্রিটমেন্ট। অথবা অন্য ট্যাটু দিয়ে আগেরটি ঢেকে দেওয়া। তবে এ সবই অভিজ্ঞ ডার্মাটোলজিস্টের তত্ত্বাবধানেই করানো দরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tattoos New style Personality tattoo
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE