Advertisement
E-Paper

অসুস্থ হলে বা আহত হলে প্রাথমিক পরিচর্যাগুলি কী

কেউ অসুস্থ হলে বা আহত হলে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার আগে তাৎক্ষণিক পরিচর্যা দিয়ে তাঁকে প্রাথমিক ভাবে স্থিতিশীল করা দরকার। লিখেছেন করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসক নিরঞ্জন রায়।বাড়িতে হঠাৎ কোনও প্রিয়জন অসুস্থ হতে পারেন। রাতের দিকে তা হলে আরও অসুবিধা। বা রাস্তাঘাটে দুর্ঘটনায় কেউ চোট পেতে পারেন। সেই সময়ের মতো রোগীকে স্থিতিশীল করা। তাঁর কষ্ট কিছুটা কমানো খুব জরুরি পরবর্তী চিকিৎসার জন্য। প্রত্যেকেরই তার জন্য প্রাথমিক কিছু নিয়মকানুন জেনে রাখা দরকার। 

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৫৮

বাড়িতে হঠাৎ কোনও প্রিয়জন অসুস্থ হতে পারেন। রাতের দিকে তা হলে আরও অসুবিধা। বা রাস্তাঘাটে দুর্ঘটনায় কেউ চোট পেতে পারেন। সেই সময়ের মতো রোগীকে স্থিতিশীল করা। তাঁর কষ্ট কিছুটা কমানো খুব জরুরি পরবর্তী চিকিৎসার জন্য। প্রত্যেকেরই তার জন্য প্রাথমিক কিছু নিয়মকানুন জেনে রাখা দরকার।

জ্বর হলে

বড় বা বাচ্চাদের জ্বর হলে যদি খিঁচুনি না থাকে তাহলে তার শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। ঘরে যদি থার্মোমিটার না থাকে তাহলে তাপমাত্রা মোটামুটি আন্দাজ করে বাচ্চার মাথা ধুয়ে দিতে হবে এবং শরীরের অন্য অংশ ঠান্ডা জলে ভালো করে মুছে দিতে হবে। তবে সুচিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ কোন ওষুধ খাওয়ানো ঠিক নয়। জ্বর হলে শরীরে স্পঞ্জিং করা উচিত। ভেজা নরম কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে শরীর একটানা কয়েক বার আলতো করে মুছে দিলে শরীরের তাপমাত্রা কমে যায় এবং রোগী আরাম বোধ করেন। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে দাঁড়ানো অবস্থায় এবং শিশুদের গামলায় বসিয়ে স্পঞ্জ করাই সুবিধাজনক। স্পঞ্জিং আলো-বাতাসযুক্ত স্বাস্থ্যকর পরিবেশে করা দরকার। রোগীকে প্রচুর জল ও জলীয় পদার্থ খেতে দিতে হবে। জ্বর বাড়লে রোগীর মাথায় জলপট্টি দিতে হবে। বিশ্রামে রাখতে হবে। যেখানে সেখানে রোগীকে কফ, থুথু ফেলতে দেওয়া যাবে না, তাতে অন্যদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। স্বাস্থ্যকর, খোলামেলা, শুষ্ক পরিবেশে আলোবাতাস বেশি আসে এমন ঘরে রোগীকে রাখতে হবে।

কেটে গেলে

ছোটখাটো কাটায় সমস্যা নেই কিন্তু যে কাটায় রক্তপাত বেশি বিপদ সেখানেই। তখন প্রথমেই দরকার রক্ত বন্ধ করা। ঘরের কাজ বিশেষ করে তরকারি কাটতে গিয়ে কেটে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। সেক্ষেত্রে প্রথমেই সেই ক্ষতস্থান পরিষ্কার করতে হবে এবং প্রেসার ব্যান্ডেজ দিয়ে কিম্বা গজ বা কাপড় দিয়ে সেই ক্ষতস্থান বাঁধতে হবে। হাতে কেটে গেলে হাত কিছু ক্ষণ উঁচু করে ধরুন। এতে রক্তক্ষরণ কিছুক্ষণের মধ্যেই বন্ধ হয়ে আসবে। ক্ষতস্থানে হলুদ গুঁড়ো, গাঁদা পাতা বাটা বা চিনি দিলেও রক্ত বন্ধ হয়। তার পর অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে ওই স্থান পরিষ্কার করে অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম লাগিয়ে ড্রেসিং করুন।

কামড়ানো

কুকুর, বিড়াল, ইঁদুর বা বাঁদরের কামড়ে: ক্ষতস্থান ভাল করে জল ও সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে এবং প্রতিষেধক ইনজেকশনের জন্য যত দ্রুত সম্ভব নিকটবর্তী হাসপাতালে যেতে হবে।

সর্পদংশন

সাপের কামড় বা অজানা জীবের কামড়: যে অঙ্গে কামড় বসেছে তা বেশি নাড়াচাড়া করা যাবে না। কোনও বাঁধন দরকার নেই। বরং রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

পোড়ার ক্ষত

উনুন, গ্যাস, স্টোভ, গরম জল, গরম পাত্র প্রভৃতি থেকে শরীরে ছ্যাঁকা লাগতে পারে বা শরীর ঝলসে যেতে পারে। জ্বালাভাব বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ওই অংশে ঠান্ডা জল দিতে হবে অথবা ঠান্ডা জলে চুবিয়ে রাখতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। শরীরে বা পোশাকে আগুন লেগে গেলে কম্বল জাতীয় কিছু দিয়ে আগে আগুন নেভাতে হবে। ক্ষতস্থানে লোশন, মলম বা তেল ব্যবহার এ বিরত থাকুন।আহত ব্যক্তির যদি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তবে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তার আগে তিনি যাতে ঠিকঠাক শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারেন সেই ব্যবস্থা করতে হবে। কেউ অ্যাসিডে পুড়ে গেলে ঠাণ্ডা জল দিতে হবে। রোগীকে যত দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যাবে ক্ষতি তত কম হবে।

হাড় ভাঙা

বাড়িতে বা রাস্তায় পড়ে গিয়ে বা আঘাত লেগে হাত- পা ভাঙার ঘটনা ঘটে। তখন চেষ্টা করতে হবে রোগীর ভাঙা অংশটিকে নাড়াচাড়া না-করে যতটা সম্ভব স্থির রাখা। অনেকে অযথা হাত দিয়ে মুচকে হাড়জোড়ার চেষ্টা করেন। এটা মারাত্মক। ওই অংশে কোনও ব্যথার মলম ঘষে লাগানো যাবে না। রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

চোখে কিছু ঢুকলে

চোখ একেবারে ডলা চলবে না। শুধু বারংবার জলের ঝাপটা দিতে হবে।

কনজাংটিভাইটিস

রোগীকে চোখে হাত দেওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে। চোখের জল বা ময়লা মোছার জন্য নির্দিষ্ট ছোট তোয়ালে বা রুমাল ব্যবহার করতে হবে। ঘুম থেকে উঠেই চোখ ভাল করে জল দিয়ে ধুতে হবে।

শ্বাসকষ্ট

ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট হলে ভেজা তোয়ালে, রুমাল বা কাপড়ের টুকরা রোগীর মুখ ও নাক বেঁধে দিতে হবে।রোগীকে আধশোয়া করে দিতে হবে, ঘরের দরজা-জানালা খুলে দিতে হবে। শ্বাসকষ্ট বিভিন্ন কারণে হতে পারে তাই রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে স্থানান্তর করা উচিৎ।

কানে কিছু ঢুকলে

অনেক সময় কানের ছিদ্র দিয়ে কীট পতঙ্গ কানের ছিদ্র পথে প্রবেশ করে। অলিভয়েল বা নারিকেল তেল দিতে হবে। গরম সেঁক দিতে হবে। তবে তেল দেওয়ার আগে অবশ্যই নিশ্চিত হবে যে, রোগীর কানের পর্দায় কোনও ছিদ্র নেই।

কীটনাশক সেবন

অনেক ক্ষেত্রে ভুল করে বাচ্চারা কীটনাশক পান করে থাকে। কেউ আবার রাগ বা অভিমানে তা খেয়ে ফেলেন। যদি রোগীর স্বাভাবিক জ্ঞান থাকে তবে প্রাথমিক ভাবে তাকে বেশি করে জল খাইয়ে বমি করাতে হবে এবং হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

নাক দিয়ে রক্ত পড়া

নাক দিয়ে রক্ত পড়লে প্রথমেই রোগীকে সোজা করে বসিয়ে দিতে হবে। অথবা ঘাড়ের নিচে সাপোর্ট দিয়ে মাথা পিছন দিকে হেলিয়ে দিতে হবে। তারপর বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনী দিয়ে নাক চেপে রাখতে হবে।

বমি ও পায়খানা

ঘন ঘন পায়খানা কিংবা পায়খানা ও বমি একসাঙ্গে হলে মানুষের শরীর থেকে প্রয়োজনীয় জল ও লবণ দেহের বাইরে বেরিয়ে যায়। শরীর জল শূন্য যায়। এমতাবস্থায় বাড়িতেই রোগীকে লবণ ও চিনির জল , পাতলা স্যূপ, ডাবের জল বা ডালের জল বারে বারে খাওয়ানো দরকার। পেট খারাপে টক দই ভাল কাজ দেয়।

হাইপোগ্লাইসেমিয়া

যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাঁদের মধ্যে এই হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা রক্তে শর্করা কমে যাওয়ার ঘটনা সাধারণত ঘটে। নিয়মিত এবং নিয়ম মতো ওষুধ না খাওয়া বা ইনসুলিনের ডোজ বেশি হলেও যে কোনো ডায়াবেটিক ব্যক্তি হঠাৎ এমন অসুস্থতা বোধ করেন। যেমন বুক ধড়ফড় করা, প্রচণ্ড ঘেমে যাওয়া কিংবা নেতিয়ে পড়া, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। এ ক্ষেত্রে চিনির জল বা গ্লুকোজের জল খাইয়ে দিতে হবে এবং রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

দাঁতে ব্যথা

বৃদ্ধ কিংবা ছোট যে কোনও বয়সেই কারও দাঁতে ব্যথা বা দাঁতের যন্ত্রণা হতে পারে। ব্যথা শুরু হলে প্রাথমিক অবস্থায় গরম জলে কুলকুচি করলে কিছুটা আরাম পাওয়া যায়। লবঙ্গের তেল দাঁতে লাগানো যেতে পারে। এ ছাড়া নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার করা একমাত্র মুক্তির উপায়।

খিঁচুনি

প্রথমে রোগীকে এক পাশ করে শোয়ানো দরকার। তাঁর দাঁতে দাঁতে লেগে যেন জিভ কেটে না-যায় তার জন্য দুই পাটি দাঁতের মাঝখানে শক্ত কিছু দিতে হবে। দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

মৌমাছি, বোলতার কামড়

ভাল করে দেখতে হবে কামড়ানোর জায়গায় হুল আছে কিনা। যদি থাকে চেষ্টা করতে হবে সেগুলো বের করার। যন্ত্রণা ও চুকানি কমানোর জন্য বড় ভরসা বরফ, চুন, বেকিং সোডার মিশ্রণ বা ক্যালামাইন লোশন। যদি শ্বাসকষ্ট বা বুক ব্যাথা হয় তা হলে দ্রুত হাসপাতাল যেতে হবে।

পেট ব্যথা

অ্যান্টাসিড জাতীয় ওষুধ, জোয়ানের আড়ক বা ইসবগুলের ভুষি খেলে প্রাথমিক উপকার পাওয়া যায়।

অনুলিখন: কল্লোল প্রামাণিক ছবি প্রতীকী। তুলেছেন সুদীপ ভট্টাচার্য

First Aid Health Tips
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy