Advertisement
E-Paper

সন্তান থাকুক নিরাপদে

ঘরে-বাইরে সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা হওয়া স্বাভাবিক। দুশ্চিন্তা দূরে সরিয়ে বরং আপনার শিশুকে শেখান নিরাপদে থাকার উপায়ধাপে ধাপে সন্তানকে তৈরি করুন, যাতে সে নিজেই তার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পারে।

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০১

জন্মমুহূর্ত থেকেই সন্তানের নিরাপত্তা মা-বাবার চিন্তার বিষয়। খুদে বয়সে ঠান্ডা লেগে যাবে না তো? পড়ে গেলে ব্যথা লাগে যদি! এই ধরনের চিন্তা থেকে শুরু করে স্কুলে কেউ ওকে মারবে না তো? রাস্তা পার হওয়ার সময়ে... ভেবে আঁতকে ওঠে মায়ের দুর্বল মন। কিন্তু প্রতি মুহূর্তে দুশ্চিন্তা করে নিজে বিচলিত হয়ে তো লাভ নেই। তার চেয়ে ধাপে ধাপে সন্তানকে তৈরি করুন, যাতে সে নিজেই তার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পারে।

রাস্তাঘাটে

• রাস্তা পার হওয়ার সময়ে সন্তানের (তিন বছরের কম) হাত ধরে থাকুন বা কোলে তুলে নিন। দশ বছরের ছোট সন্তানদের অবশ্যই হাত ধরে রাস্তা পার করানো উচিত। আর রাস্তা পার হওয়ার সময়ে সন্তানকে নিরাপদ দিকে রাখুন। অর্থাৎ যে দিক থেকে গাড়ি আসছে, সন্তানকে রাখতে হবে তার বিপরীত দিকে।

• জ়েব্রা ক্রসিং ধরে বরাবরই রাস্তা পার হবেন। সন্তানকে ছোট থেকেই তা দেখিয়ে রাখুন। তা হলে তার মধ্যেও জ়েব্রা ক্রসিং ধরে রাস্তা পার হওয়ার সচেতনতা তৈরি হবে।

• সিগন্যাল দেখে রাস্তা পার হন। সে সময়ে সন্তানকেও সিগন্যাল দেখতে শেখান। সিগন্যালের লাল, সবুজ আলো কী সংকেত দেয়, তা বোঝান। কখনও রাস্তা পার হওয়ার সময়ে আপনার সন্তানকেই জিজ্ঞেস করুন, রাস্তা পেরোবার সিগন্যাল হয়েছে কি না। তা হলে তাকে পরখ করাও হয়ে যাবে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

চেনা-অচেনা

• মনে রাখবেন, বয়সে ছোট হলেও ভাল-খারাপ সম্পর্কে একটা ধারণা তাদের মধ্যেও থাকে। তাই আপনার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু বা প্রিয় দাদা বা মাসির কাছে যদি আপনার সন্তান যেতে না চায়, তার কথা শুনুন। বোঝার চেষ্টা করুন, সে কেন সেই মানুষটির কাছে যাচ্ছে না।

• পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট পায়েল ঘোষের কথায়, ‘‘আপনার সন্তানকে কেউ খেলনা দিলেই তা নিয়ে খেলতে দেবেন না। দেখে নিন, তাতে কোনও ছোট ব্লক বা ছোট কিছু আছে কি না। ছোট বাচ্চাদের সব কিছু মুখে দেওয়ার অভ্যেস থাকে। ফলে তারা ছোট খেলনা গিলে ফেলতে পারে।’’

• প্রতিবেশী বা বন্ধুবান্ধবের বাড়িতে সন্তানকে রেখে কোথাও যেতে হলেও সাবধান হন। যাদের কাছে বাচ্চাকে রাখবেন, তারা কেমন মানুষ সেটা আগে যাচাই করে নিন।

• নতুন স্কুলে ভর্তি করলে তার বন্ধুদের পরিবারের সঙ্গে মেলামেশা বাড়ানো প্রয়োজন।

• বাচ্চার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সম্পর্কেও তাকে জানিয়ে রাখুন। প্রাইভেট পার্টস সম্পর্কে তার বোধ তৈরি হওয়া জরুরি। সন্তানের শরীরের ব্যক্তিগত অংশ স্পর্শ করলে সে যেন আপনাকে এসে জানায়। তাই সন্তানের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশুন।

• অচেনা মানুষের কাছ থেকে খাবার নিতে নিষেধ করতে হবে। সে খাবার নিলেও যেন না খায়। বাড়িতে এসে আপনার উপস্থিতিতেই যেন সে তা খায়। একই সঙ্গে প্রতিবেশী বা বন্ধুদের বাড়িতে গেলে আপনার সন্তান কোন খাবার খাবে, সে বিষয়ে সচেতন থাকুন।

• পায়েল ঘোষের মতে, ‘‘অচেনা ব্যক্তির সঙ্গে কী ভাবে কথা বলবে, তা শেখাতে হবে।’’ অচেনা কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে তার উত্তরে কতটা বলবে, সেটাও শেখাতে হবে।

যে যে বিষয়ে সচেতন হবেন

• বাচ্চাকে দেখার জন্য যাঁকে রাখবেন, তাঁর পরিচয়পত্রের ফোটোকপি ও ছবি স্থানীয় থানায় জমা দিয়ে রাখুন। আর তাঁকে সেটা জানিয়েও রাখুন। তা হলে তিনিও সচেতন হবেন
• বাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে নিতে পারেন। তা হলে বাড়ির বাইরে দীর্ঘ সময় থাকতে হলেও নজর রাখতে পারবেন সন্তানের উপরে
• বাড়ির সুইচ বোর্ড যেন বাচ্চার নাগালে না থাকে। যে সুইচ বোর্ড বাচ্চার নাগালে, তাতে চাইল্ড লক বা গার্ড লাগানোর ব্যবস্থা রাখুন
• গরম চা, জল বা রান্না করা খাবার বাচ্চার থেকে দূরে রাখুন
• বাচ্চার বাসনপত্র বা খেলনার জিনিসে কাচ যেন না থাকে, খেয়াল রাখুন। কাচের জিনিস ভেঙে ফুটেও যেতে পারে
• বাড়িতে ফার্স্টএডের ব্যবস্থা রাখবেন। সঙ্গে প্রয়োজনীয় ওষুধ

নিজের বাড়িতে

• আপনার খুদেটি কি বাড়িতেও সম্পূর্ণ নিরাপদ? তাই বাচ্চার উপরে নজর রাখা দরকার। খুব ছোট বাচ্চা হলে চব্বিশ ঘণ্টাই তাকে চোখে চোখে রাখুন। প্রয়োজনে তাকে দেখাশোনা করার জন্য কাউকে রাখতে পারেন।

• খাট থেকে ছোট বাচ্চার পড়ে যাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। প্রত্যেক মা-বাবাই হয়তো এ রকম দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন। তাই বাচ্চাকে নিচু জায়গায় রাখার চেষ্টা করুন। খাটের পাশে ছোট বসার জায়গা টেনে এনে রাখতে পারেন। বাজারে খাটের গার্ডও কিনতে পাওয়া যায়। অন্ধকারে বাচ্চা ঘুমোলে তার পাশে মোবাইল অন করে কাজ করবেন না।

• ঘরের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি করে খেলতে গিয়েও বাচ্চারা ব্যথা পেতে পারে। বিশেষ করে টেবিল বা চেয়ারের কোণে ধাক্কা লেগে মাথা কেটে যেতে পারে। তাই রাবার গার্ড দিয়ে তা ঢেকে রাখতে পারেন।

বিপদে পড়লে

সন্তান নিরাপদে থাকুক সেটাই কাম্য। কিন্তু বাচ্চা বিপদে পড়লে কী করে বিপন্মুক্ত হবে, সেই পথও আপনাকে দেখাতে হবে। বাচ্চাকে পুলিশ স্টেশনের আপৎকালীন নাম্বার ও আপনার ফোন নাম্বার মুখস্থ করিয়ে রাখুন। বিপদে পড়লে সে নিজেই ফোন করতে পারবে। অথবা অন্য কাউকে দিয়েও ফোন করাতে পারবে।

খেলাধুলোর সময়ে

• বাচ্চাদের একসঙ্গে খেলতে তো দিতেই হবে। সে পড়ে চোট পেলেও তাকে আটকাবেন না। বরং সে কোথায় খেলছে, সেই জায়গাটা বড়জোর আপনি বাছতে পারেন। কংক্রিটের উপরে না খেলে মাঠে খেলাই নিরাপদ। তা হলে পড়ে গেলে ব্যথা কম লাগবে।

• এমন কিছু নিয়ে খেলতে দেবেন না, যাতে আঘাত লাগতে পারে। বয়স অনুযায়ী বাচ্চার খেলার ধরন ও খেলনাও আলাদা। তাই সমবয়সের বাচ্চাদের সঙ্গেই সন্তানকে খেলতে দিন।

• ক্রিকেট বা ফুটবল খেলা চললে তার পাশেই আপনার খুদেটিকে খেলতে ছাড়বেন না। ক্রিকেট বা ফুটবলের বল এসে মাথায় লাগতে পারে। একে সেই বল ভারী, তায় গতিসম্পন্ন। সেই আঘাত কিন্তু প্রাণঘাতীও হতে পারে।

বিভিন্ন বয়সের বাচ্চার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাও আলাদা। সন্তানের নিরাপত্তা সবচেয়ে ভাল তার মা-বাবাই বোঝেন। তাই কোনও বিষয়ে দুশ্চিন্তা হলেই সেই সমস্যা থেকে কী ভাবে বেরোতে হবে, সেই পথ বাচ্চাকে আগাম দেখিয়ে রাখুন।

মডেল: হিয়া মুখোপাধ্যায়, ডিম্পল ঘোষ, শ্রীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, রোমিত বন্দ্যোপাধ্যায়; ছবি: অমিত দাস; মেকআপ: সৈকত নন্দী

হেয়ার: স্বরূপ দাস; পোশাক: ওয়েস্টসাইড, ক্যামাক স্ট্রিট

লোকেশন: লাহা বাড়ি

Parenting Security
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy