E-Paper

নারীর শরীর, নারীর সিদ্ধান্ত

স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য টিউবাল লাইগেশনের ভূমিকা জেনে নিন। রইল চিকিৎসকের পরামর্শ।

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৫ ০৮:৪২

ভারতে প্রতি বছর কয়েক লক্ষ নারী স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হিসেবে টিউবাল লাইগেশন বেছে নেন। প্রযুক্তির উন্নতি, অস্ত্রোপচারের নিরাপত্তা এবং দীর্ঘমেয়াদি কার্যকারিতা— সব মিলিয়ে এটি স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি হিসেবে অনেকেরই প্রথম পছন্দ। কিন্তু টিউবাল লাইগেশন শুধু একটি অস্ত্রোপচার নয়, বরং নারীর নিজের শরীরের উপরে নিয়ন্ত্রণ রাখার সিদ্ধান্ত। পরিবার পরিকল্পনা, স্বাস্থ্য রক্ষা কিংবা রোগ প্রতিরোধ— সব কিছুর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এটি।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, অনেক সময়েই দেখা যায়, দম্পতিরা একটি বা দু’টি সন্তান নেওয়ার পরে স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণের পথে হাঁটতে চান। পরিকল্পনা বিহীন গর্ভধারণ এড়াতে পুরুষদের জন্য ভ্যাসেকটমি যতটা কার্যকর, নারীদের জন্য ততটাই উপযোগী ও নিরাপদ পদ্ধতি টিউবাল লাইগেশন। গর্ভাশয়ের ক্যানসার রোধেও উপযোগী এই পদ্ধতি।

টিউবাল লাইগেশন কী

স্ত্রীরোগ চিকিৎসক চন্দ্রিমা দাশগুপ্ত জানাচ্ছেন, টিউবাল লাইগেশন একটি ছোট অস্ত্রোপচার। এ ক্ষেত্রে ফ্যালোপিয়ান টিউব কেটে বা বেঁধে দেওয়া হয়, যাতে ডিম্বাণু আর শুক্রাণুর মিলন না ঘটে। ফলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে না। বর্তমানে এই পদ্ধতি সাধারণত ল্যাপরোস্কোপির মাধ্যমে করা হয়। পেটে একটি বা দু’টি ছোট ছিদ্র করে যন্ত্র প্রবেশ করানো হয়, ক্যামেরার সাহায্যে টিউবের গঠন স্পষ্ট দেখা যায়। এর পরে টিউব কেটে, বেঁধে বা ইলেকট্রোকোয়াগুলেশন পদ্ধতিতে বন্ধ করে দেওয়া হয়। চন্দ্রিমা বললেন, ‘‘অস্ত্রোপচারটি সাধারণত ৩০-৪৫ মিনিটের মধ্যেই হয়ে যায়। বেশির ভাগ রোগী অস্ত্রোপচারের দিন বা এক দিন পরেই বাড়ি যেতে পারেন।’’

অন্য উপযোগিতা

জন্মনিয়ন্ত্রণ ছাড়াও টিউবাল লাইগেশনের গুরুত্ব আরও কয়েকটি চিকিৎসাগত কারণে বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন স্ত্রীরোগ চিকিৎসক অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়। ওভারিয়ান অর্থাৎ গর্ভাশয়ের ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে এখন অনেক ক্ষেত্রেই ‘অপারচুনিস্টিক স্যালপিনজেকটমি’ অর্থাৎ অন্য কোনও অস্ত্রোপচারের সঙ্গেই দুই ফ্যালোপিয়ান টিউব সম্পূর্ণ কেটে বাদ দেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। সিজ়ারিয়ান, হিস্টেরেকটমি বা পেটের অন্য অস্ত্রোপচারের সঙ্গেই স্যালপিনজেকটমি করানো সম্ভব। তিনি জানাচ্ছেন, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব গাইনিকলজি অ্যান্ড অবসটেট্রিকস এবং আমেরিকান কলেজ অব অবসটেট্রিশিয়ান্স অ্যান্ড গাইনিকলজিস্টস-এর সাম্প্রতিক নির্দেশিকা অনুযায়ী, এর ফলে ভবিষ্যতে হাই-গ্রেড গর্ভাশয়ের ক্যানসারের আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যায়। ডা. অভিনিবেশ বলেন, ‘‘ওভারিয়ান ক্যানসারের উৎপত্তিস্থল মূলত ফ্যালোপিয়ান টিউব। লাইগেশনে ২৪-৩০ শতাংশ এবং স্যালপিনজেকটমির মাধ্যমে এই আশঙ্কা ৪৫-৫০ শতাংশ অবধি কমতে পারে।’’

এ ছাড়াও, ফ্যালোপিয়ান টিউব সংক্রান্ত দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা, যেমন হাইড্রোসালপিঙ্কস, পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজ়িজ বা টিউবাল এন্ডোমেট্রিয়োসিসের যন্ত্রণায় ভোগা রোগীর ক্ষেত্রেও টিউব অপসারণে স্থায়ী উপকার মেলে। এই সমস্ত সমস্যা থাকলে আইভিএফ চিকিৎসা করানোর পূর্বেও চিকিৎসকেরা অনেক সময়ে টিউব কেটে ফেলার পরামর্শ দেন। কারণ এই রোগগুলি গর্ভসঞ্চারে সাফল্যের হার কমিয়ে দেয়। একাধিক বার এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি হয়েছে বা জটিল গর্ভধারণের ইতিহাস রয়েছে, এমন রোগীদের ক্ষেত্রেও টিউব সম্পূর্ণ কেটে ফেলার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। এতে ভবিষ্যতে প্রাণঘাতী পরিস্থিতির আশঙ্কা কমে।

জরুরি তথ্য

অস্ত্রোপচার ঠিক মতো হলে গর্ভধারণের আশঙ্কা শূন্যের কাছাকাছি। তবু তলপেটে যে কোনও ব্যথা বা পিরিয়ড না হলে চিকিৎসককে জানানো প্রয়োজন। যাঁরা নিশ্চিত ভাবে আর সন্তান নিতে চান না, যাঁদের গর্ভধারণে অতীতে জটিলতা হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও ঝুঁকি রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এই অস্ত্রোপচার উপযোগী। যাঁরা হরমোন-নির্ভর গর্ভনিরোধক নিতে চান না, তাঁদের জন্যও এটি নিরাপদ পথ। এই পদ্ধতি পিরিয়ড বন্ধ করে না, হরমোনের তারতম্যের ভয় থাকে না এবং স্বাভাবিক যৌনজীবনেও বাধা সৃষ্টি করে না। তবে এটি স্থায়ী পদ্ধতি হওয়ায় ভাবনা-চিন্তার পরেই অস্ত্রোপচার করানো উচিত। কমবয়সি, নীরোগ কেউ এই অস্ত্রোপচার করাতে চাইলে চিকিৎসকেরা প্রথমে কাউন্সেলিংয়ের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

সুনীতা কোলে

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

uterus health

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy