Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Vaccines

‘টিকার মতোই শুধু আইন বাঁচায় না, তার প্রয়োগ বাঁচায়’

কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রে আবার খবর, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাতাসের মানের পরিবর্তন নথিভুক্ত হয়েছে।

ছবি রয়টার্স।

ছবি রয়টার্স।

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২০ ০৩:০০
Share: Save:

‘টিকা জীবন বাঁচায় না। টিকাকরণ জীবন বাঁচায়। (ভ্যাকসিনস ডোন্ট সেভ লাইভস। ভ্যাকসিনেশনস সেভ লাইভস)’!— রোগের টিকাকরণের গুরুত্বের প্রসঙ্গে এই আপ্তবাক্যেরই উল্লেখ করেন চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা। আসন্ন কালীপুজোয় রাজ্য সরকারের বাজি নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে সেই বক্তব্যেরই প্রসঙ্গ টানছেন পরিবেশবিদ ও আইনজীবীরা। তাঁদের বক্তব্য, টিকার মতো শুধুমাত্র আইনও কোনও অনৈতিক, বেআইনি কাজ আটকাতে পারে না, যত ক্ষণ না সেই আইনের যথাযথ প্রয়োগ হয়। ফলে করোনা পরিস্থিতিতে বাজি-দূষণ আটকাতে গেলে সরকারি প্রচেষ্টা ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না, বরং তার সার্থক প্রয়োগেই পরিস্থিতির বদল নির্ভর করছে।

একই সঙ্গে পরিবেশবিদ এবং আইনজীবী মহল এ-ও জানাচ্ছে, বাজি-দূষণ নিয়ে আদালতের নির্দেশ নতুন নয়। করোনা পরিস্থিতিতে বিষয়টির আলাদা গুরুত্ব রয়েছে ঠিকই, কিন্তু প্রতি কালীপুজোর আগে বাজি নিয়ে কোনও না কোনও মামলা আদালতে দায়ের হয়েই থাকে। সুপ্রিম কোর্টও বিভিন্ন সময়ে বাতাসের মানের অবনমন ও বাজি-দূষণের প্রসঙ্গটি উল্লেখ করেছে। যেমন, ২০১৬ সালে ‘অর্জুন গোপাল ভার্সেস ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া’ মামলায় বাজি-দূষণের ফলে কী ভাবে দিল্লির বাতাস ‘খারাপ’ থেকে ‘বিপজ্জনক’ হয়ে ওঠে এবং যা থেকে রোগের উৎপত্তি হয়, সে প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছিল দেশের শীর্ষ আদালত।

ওই একই মামলায় ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্ট এ-ও জানিয়েছিল, জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষার বিষয়টি যে কোনও বাণিজ্যিক বা অন্য কর্মকাণ্ডের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই বাজির উপরে নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। তার পরের বছর, অর্থাৎ ২০১৮ সালে ক্রমবর্ধমান দূষণ ও বাজির ফলে বাতাসের অবনমনের বিষয়টি মাথায় রেখে দীপাবলির আগে বাজি পোড়ানোর জন্য রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল আদালত। শুধু তা-ই নয়, কম দূষণ ছড়ায়, এমন বাজিই কেনাবেচা করা যাবে বলে জানিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট।

আরও পডুন: ক্যানসার সচেতনতা আটকে স্রেফ উদ্‌যাপনেই

কোভিড ১৯ পরিস্থিতিতে কয়েকটি রাজ্যে বাজি নিষিদ্ধ সংক্রান্ত মামলায় সম্প্রতি জাতীয় পরিবেশ আদালত সুপ্রিম কোর্টের ওই বিভিন্ন নির্দেশের উল্লেখ করেছে। সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবীর কথায়, ‘‘এ বছর কোভিড ১৯-এর কারণে বাজি-দূষণের গুরুত্ব অনেক বেশি। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এই প্রসঙ্গটি বার বার আদালতের পরিধিতে এসেছে। একাধিক মামলাও হয়েছে।’’ শহরের বায়ুদূষণ রোধে কলকাতা পুরসভা গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান তথা পরিবেশবিদ্যার অধ্যাপক অনিরুদ্ধ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ফুসফুসে ক্রমাগত দূষিত বাতাসের প্রবেশ যে মৃত্যুর কারণ হচ্ছে, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-সহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংগঠনের সমীক্ষায় স্পষ্ট।’’ সংক্রামক রোগ চিকিৎসক সায়ন্তন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘টিকার ক্ষেত্রে বলা হয় যে টিকা জীবন বাঁচায় না, টিকাকরণ বাঁচায়। কোভিড পরিস্থিতিতে সত্যিই বাজি নিষিদ্ধ হল, নাকি তা শুধুমাত্র ঘোষণার মধ্যেই রয়ে গেল, সেটার উপরেই আগামী দিনের করোনা পরিস্থিতি অনেকটা নির্ভর করছে। কারণ, টিকার মতোই শুধু আইন বাঁচায় না, তার প্রয়োগ বাঁচায়।’’

কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রে আবার খবর, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাতাসের মানের পরিবর্তন নথিভুক্ত হয়েছে। গত প্রায় চার দশকে দেশের বাতাসের গুণমান সংক্রান্ত তথ্য একত্রিত করা হয়েছে। পর্ষদের এক কর্তার কথায়, ‘‘বাতাসের মানের অবনমন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যাবে কী ভাবে আমরা ক্রমশই দূষিত বায়ুর চক্রব্যূহে ঢুকে পড়েছি।’’ তবে পরিবেশকর্মীদের প্রশ্ন, বাজি-দূষণের ফলে বাতাসের মানের অবনমন ঘটে, সেটা তো জানাই। তাই শুধু করোনা পরিস্থিতিতে কেন, প্রতি বছরই কেন বাজি নিষিদ্ধ করা হবে না? পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের কথায়, ‘‘করোনা না থাকলে কি বাজির ধোঁয়ার মাধ্যমে পিএম ২.৫ ফুসফুসে ঢোকে না? তাই প্রতি বছরই যাতে এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকে, সেটা রাজ্য সরকারের দেখা প্রয়োজন।’’ পরিবেশমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রের অবশ্য আশ্বাস, ‘‘পরিস্থিতির গুরুত্ব সরকার জানে। তাই বাজি-দূষণ রুখতে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে সব পরিকল্পনাই করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE