Advertisement
E-Paper

ডাক্তার চাই, চিঠি গ্রামবাসীর

বারবার স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের দৃষ্টি আর্কষণ করেও কোনও লাভ হয়নি। ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা তাই চিকিৎসকের দাবিতে চিঠি পাঠালেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর কাছে। মন্ত্রী দাবি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। ময়ূরেশ্বরের ঢেকা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঘটনা।

অর্ঘ্য ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৫ ০২:০৫
বেহাল ঢেকা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। —নিজস্ব চিত্র।

বেহাল ঢেকা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। —নিজস্ব চিত্র।

বারবার স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের দৃষ্টি আর্কষণ করেও কোনও লাভ হয়নি। ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা তাই চিকিৎসকের দাবিতে চিঠি পাঠালেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর কাছে। মন্ত্রী দাবি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। ময়ূরেশ্বরের ঢেকা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঘটনা।

দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালের মে মাসে উচ্চ শিক্ষার্থে ছুটি নিয়ে চলে যান ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একমাত্র চিকিৎসক শুভব্রত মজুমদার। তার পর থেকেই জোড়াতালি দিয়ে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র চলছে বলে অভিযোগ। মাসকয়েক আগে এক জন ডাক্তার নিয়োগ করা হলেও তিনিও কাজে যোগ দেননি। ফলে স্থানীয় জনমানসে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, বারবার চিকিৎসক নিয়োগের আবেদন স্বাস্থ্য দফতর কানেই তোলেনি বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। বাধ্য হয়ে তাই তাঁরা রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বরস্থ হয়েছেন। আশিসবাবু বলেন, ‘‘বাম আমল থেকেই রাজ্যের বহু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তার নেই। আমরা একে একে ওই সব শূন্যপদ পূরণ করছি। কিন্তু, দীর্ঘ দু’ বছর ধরে কোনও ডাক্তার না থাকাটাও বাঞ্ছনীয় নয় । জেলা স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে কথা বলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’

অথচ এমন ছিল না স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হাল। বিষ খাওয়া, ডায়েরিয়া, জ্বরজ্বালা-সহ ছোটখাটো সব ধরনের চিকিৎসাই এখানে মিলত। এলাকার ২০-২৫টি গ্রাম তো বটেই, সংলগ্ন মুর্শিদাবাদ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ জনের ভরসাস্থল হয়ে উঠেছিল ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্বাস্থ্য দফতরের গাফিলতিতে সেই ভরসা আজ হতশায় পরিণত হয়েছে। তিলডাঙা গ্রামের সুনীল পাল, রসুনপুরের সুভাষ পাল, কুলিয়ারার খোকন ভট্টাচার্যরা বলেন, ‘‘ডাক্তার না থাকায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তেমন কোনও পরিষেবাই মেলে না। তখন ২০-২৫ কিলোমিটার দূরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছুটতে হয়। তাই সবাই সরাসরি ওই সব স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই চলে যান।’’

ওই অভিযোগের সমর্থন মিলেছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ফার্মাসিস্ট শঙ্কর সোরেনের কথাতেও। তিনি বলছেন, ‘‘আমাদের আর কতটুকু সাধ্য। চিকিৎসা করার এক্তিয়ারও নেই। তাই ডাক্তার থাকাকালীন যেখানে দৈনিক ১২০-১৫০ জন রোগী আসতেন, সেখানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫০-৬০ জনে।’’

চিকিৎসকের অভাব প্রভাব ফেলেছে অধীনস্থ উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতেও। প্রত্যন্ত এলাকায় টিকাকরণ কর্মসূচি, প্রসূতিদের চিকিৎসা-সহ স্বাস্থ্য সচেতনতা গড়ে তুলতে ওই সব উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভূমিকা অপরিসীম। নিয়মানুযায়ী, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মাসে এক দিন স্বাস্থ্য বিষয়ক বৈঠক করার কথা চিকিৎসকের। মাসে এক দিন করে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে গিয়ে বিশেষ স্বাস্থ্য শিবির করার কথাও তার। কিন্তু চিকিৎসকের অভাবে দু’ বছর ধরে বন্ধ ওই সব কর্মসূচিও। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অধীনে রয়েছে ছ’টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র । ওই সব উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দুই সুপারভাইজার অর্পণা মণ্ডল এবং ইন্দিরা সরকার বলেন, ‘‘চিকিৎসকের অভাবে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালাতে আমাদেরও খুব সমস্যা হয়। এলাকার বাসিন্দাদের কাছে প্রতিনিয়ত জবাবদিহি করতে হয়। ব্লক স্বাস্থ্য দফতরকে বিষয়টি বহুবার জানিয়েওছি। কিছু হয়নি।’’

শুধু চিকিৎসকই নয়, শূন্য রয়েছে অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর পদও। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য বরাদ্দ রয়েছে— এক জন করে ডাক্তার, ফার্মাসিস্ট এবং সুইপার। দু’ জন করে নার্স এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। কিন্তু, ডাক্তারের পাশাপাশি দীর্ঘ দিন শূন্য রয়েছে নার্সের পদ দু’টিও। বছরখানেক ধরে স্থানীয় নওয়াপাড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে নার্স রেখা সিংহকে তুলে এনে কাজ চালানো হচ্ছে। ফাঁকা রয়েছে এক জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর পদও। তার উপরে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঘাটতি মেটাতে সপ্তাহে দু’ দিন তুলে নেওয়া হয় একমাত্র ফার্মাসিস্টকেও।

ঢেকা গ্রামেরই বিজয় মণ্ডল, লোকপাড়ার তুষারকান্তি মণ্ডলরা বলেন, ‘‘জোড়াতালি দিয়ে এ ভাবে স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালানোর থেকে ডাক্তার যোগ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখাই ভাল। তা হলে অন্তত চিকিৎসা করাতে গিয়ে রোগীদের অনর্থক হয়রান হতে হবে না।’’ এলাকারই বাসিন্দা তথা সংশ্লিষ্ট ময়ূরেশ্বর ২ নং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কল্যাণী দাস এবং ঢেকা পঞ্চায়েতের প্রধান মিঠু গড়াই জানান, সত্যিই ডাক্তারের অভাবে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিষেবা ব্যাহত হয়ে পড়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের অন্যত্র ছুটতে হচ্ছে। তাঁরা নিজেরাও ডাক্তারের জন্য স্বাস্থ্য দফতরের দৃষ্টি আর্কষণ করেছেন। কিন্তু, দু’ বছর পরেও ডাক্তার মেলেনি বলে অভিযোগ।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক এনামুল হক বলেন, ‘‘সবে এখানে দায়িত্ব নিয়েছি। খোঁজ নিয়ে দেখেছি ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক জন ডাক্তার নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু, তিনি কাজে যোগ না দেওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। ফের ডাক্তার নিয়োগের প্রস্তাব জেলাস্তরে পাঠানো হয়েছে। সাময়িক ভাবে ব্লকের বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে পালা করে এক জন করে ডাক্তার পাঠানো যায় কিনা দেখছি।’’ অন্যান্য শূন্যপদ পূরণের প্রস্তাবও জেলা স্বাস্থ্য দফতরে পাঠানো হয়েছে বলে তাঁর দাবি।

Doctor Villager health minister Mayuraswar Birbhum
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy