হাঁটাহাঁটিতে কমতে পারে মেদ, তবে নিয়ম না জানলে বৃথা পরিশ্রম। ছবি: শাটারস্টক।
‘মৎস্য মারিব, খাইব সুখে!’ কাব্যে এমন বিলাসপ্রিয় পঙ্ক্তি যে বাঙালির সম্পত্তি, তার যে শরীরে কিছুটা অবাঞ্ছিত মেদ জমবে এ আর এমন কি বেশি কথা! তবু অসুখবিসুখ সে স্তোক শুনলে তো! কাজেই ওজন কমানোর দায় শরীরচর্চার দিকে ঠেললে বাধ্য হয়েই সে পথ মাড়াতে হয়। তা বলে কাজ, ব্যস্ততা, দিনের রুটিন সব সেরে যে সকলেই শরীরচর্চার খুব সময় পান, এমনটা নয়।
অগত্যা দোষ খণ্ডাতে হাঁটাহাঁটিকেই অনেকে মেনে নেন। বলা ভাল, মনেও নেন। শরীরচর্চার চেয়ে সহজ আবার রোজের রুটিনের মধ্যেইকাজের মাঝে সেরেও ফেলা যায়। কিন্তু কী ভাবে হাঁটলে, দিনে কতটা হাঁটলে তা ওজন ঝরাতে সাহায্য করে, এটা না জানলে কিন্তু পণ্ডশ্রম!
বাজার-দোকান, অফিস, কেনাকাটা এ সব রাস্তা হেঁটে গেলেই হাঁটার উপকারিতা আসবে, নাকি ঘণ্টার পর ঘণ্টাশরীরকে কষ্ট দিয়ে হাঁটলে তবেই মিলবে সুফল? কত ক্ষণ ধরে হাঁটবেন বা কখন হাঁটবেন, হাঁটার এ সব নিয়মনীতি না জেনেই পথে নেমে পড়লে কিন্তু অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। তাই সচেতন হোন এখন থেকেই।
আরও পড়ুন: দোলে অনিয়মে জেরবার শরীর, কী ভাবে সামাল দেবেন এ বার?
পায়ের জন্য স্বাস্থ্যকর ও আরামদায়ক জুতো পরে হাঁটুন। ছবি: শাটারস্টক।
হাঁটার পরিমাণ
অনেকটা হাঁটলে বেশি মেদ ঝরবে, আর কম হাঁটলে সে সুফল পাবেন না, এমন সরল ভাবনা অনেকের মধ্যেই আছে। এ ভাবনা খুব ভুল নয়, কিন্তু শরীরকে কষ্ট দিয়ে জোরে জোরে অনেকটা হাঁটতে গিয়ে পায়ের স্নায়ুর অসুখ ডেকে আনাও কোনও কাজের কথা নয়। তার চেয়ে নিয়ম মানুন। চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদদের মতে, একটানা হাঁটাতেই লুকিয়ে সুফল। টুকটাক খুচরো হাঁটায় শরীরের কলকব্জা ভাল থাকে ঠিকই, কিন্তু ওতে ওজনে হেরফের হয় না। বরং সপ্তাহে ৩০০ মিনিট হাঁটতেই হবেএকটানা। গড় হিসাবে যা দাঁড়ায় প্রায় ৪৩ মিনিট করে। একান্ত না পারলে অন্তত আধ ঘণ্টা একটানা হাঁটুন রোজ। এতে উপকার মিলবে আলবাত।
হাঁটার কায়দা
হাঁটা না হয় শুরু করলেন, কিন্তু কী গতিতে হাঁটবেন? ফিটনেস এক্সপার্ট চিন্ময় রায়ের মতে, ‘‘লক্ষ্য রাখতে হবে সেকেন্ডে দুটো স্টেপ। অত হিসাব কষতে না পারলে অন্তত ১৫-২০ মিনিটে দেড় কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে পারলে ভাল। আর টানা হাঁটার অভ্যাস করুন। বাড়ির বাগানে বা ছাদে বা লনে এ মাথা ও মাথা করে হাঁটবেন না।’’
প্রথম দিকেই ৩০০ মিনিটের লক্ষ্যে না পৌঁছতে পারলে অন্তত ধীরে ধীরে এগোন সে পথে।
আরও পড়ুন: চুপিসারে ওজন বাড়াচ্ছে এ সব কাজ, মেদ ঝরাতে আজই সচেতন হোন
পোষ্য নিয়ে বেড়াতে বেরোন, তবে ওজন কমানোর হাঁটার সময় নয়, এতে গতি শ্লথ হয়।
কিছু বিধিনিষেধ
পোষ্য নিয়ে বা দলবেঁধে গল্প করতে করতে হাঁটবেন না। এতে হাঁটার গতি শ্লথ হয়ে পড়ে। মোবাইল কানে গল্প করতে করতে হাঁটলে হাঁটার উপকারিতা আসে না, সঙ্গে হাঁপিয়ে গিয়ে বেশি হাঁটা যায় না। মাথায় একগাদা চিন্তা নিয়ে হাঁটবেন না। হাঁটা একটা নেশা। অভ্যাসের সঙ্গে রুটিনে ঢুকিয়ে নিতে ভালই লাগে। কিন্তু প্রথম প্রথম একঘেয়ে লাগলে মোবাইলের হেডফোন কানে গান শুনতে শুনতে হাঁটুন। এতে ফিল গুড হরমোন ক্ষরিত হবে ও দুশ্চিন্তাও কমবে। তবে বড় রাস্তায় হাঁটলে হেডফোন গুঁজে হাঁটার সময় সচেতন থাকুন। মাঝে মাঝেই হাঁটার অভ্যাসে রাশ টেনে ফেলেন অনেকেই। এতে লাভ হয় না। তাই সুযোগ খুঁজে নিয়ে নিয়মিত হাঁটার চেষ্টা করুন। হাঁটার সময় জুতোটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পায়ে আরাম দেয়, এমন জুতো পরে হাঁটুন। হাতে বা পিঠে খুব বেশি ভার বইবেন না তখন, এতে ক্লান্ত হবেন তাড়াতাড়ি। অনেকের নানা রকম হাড়ের অসুখ থাকে, তাঁদের হাঁটাহাঁটিও নিয়ন্ত্রণে থাকে। এমন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে হাঁটুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy