প্রয়াগরাজে যাহা ছিল গেরুয়া, হুগলির ত্রিবেণীতে তাহাই হল সবুজ! রং বদলেছে, তবে পোশাকের।
গেরুয়া বসনে প্রয়াগের ‘যুক্তবেণী’তে কুম্ভস্নানের পর তৃণমূল সাংসদ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘মুক্তবেণী’তে এলেন সবুজ শাড়ি পরে। এ প্রসঙ্গে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে রচনা বলেন, “আমি কালার থেরাপি করি।” এখন প্রশ্ন হল, এই ‘কালার থেরাপি’ বস্তুটি কী? করলে কী লাভ হয়?
সবজান্তা গুগ্ল যদিও বলছে, শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসায় নানা ধরনের রং, রঙিন আলোর ব্যবহার রয়েছে। মানুষের মধ্যে ভাল এবং খারাপ, দু’ধরনের শক্তিই বর্তমান। সেই এনার্জির মধ্যে নাকি সমতা রাখতে সহায়তা করে কালার থেরাপি। আবার ভারতীয় আধাত্ম্যে বলা হয়, মানবদেহে যে সাতটি চক্র রয়েছে, তাদের মধ্যেও নাকি সমতা রক্ষা করে রং। বিশেষ এই চিকিৎসা পদ্ধতিকে ‘ক্রোমোথেরাপি’ বলা হয়। মনের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখতে ওষুধের বিকল্প হিসাবে এই থেরাপির সাহায্য নেন অনেকে। এ প্রসঙ্গে মনোবিদ দেবশীলা বসুর বক্তব্য, “এক-একটি রঙের এক এক রকম প্রভাব মনের উপর পড়ে। তবে এ ক্ষেত্রে পরিবেশ বা পরিস্থিতির ভূমিকাও কম নয়।”

কুম্ভে গেরুয়া, ত্রিবেণীতে সবুজ রচনা। — নিজস্ব চিত্র।
এ তো খুব সহজ হিসাব। শোকসভা আর বিয়েবাড়িতে পরে যাওয়ার পোশাকের রং বা ধরন তো এক রকম হবে না! আবার, শিশুদের স্কুলের পোশাকের কথাই ভাবুন না। তার নেপথ্যেও তো মন শান্ত রাখা, ধীরস্থির হওয়া, একাগ্রতা বাড়িয়ে তোলার মতো বিষয় জড়িয়ে রয়েছে। মনো-সমাজকর্মী মোহিত রণদীপের কথায়, “মনস্তত্ত্ব বা মনোবিজ্ঞানে অবশ্যই রঙের ভূমিকা রয়েছে। তবে কার মনে কোন রং প্রভাব ফেলবে, তা আগে থেকে নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। কারও সাদা রং প্রিয়, আবার কারও সবুজ। কিন্তু তার সঙ্গে দিন বা বারের কোনও সম্পর্ক নেই।”
রং নিয়ে এই যে এত আলোচনা, ইতিহাস বলছে, তা শুরু হয়েছিল প্রাচীন মিশরে। পরে গ্রিস, চিন এবং ভারতেও এই কালার থেরাপি শুরু হয়। যদিও এ বিষয়ে বিশেষ তথ্যপ্রমাণ নেই। তবে এই থেরাপি নিয়ে যাঁরা কাজ করেন তাঁদের মতে, মানসিক চাপ, উদ্বেগ, অবসাদ, উচ্চ রক্তচাপ, অনিদ্রাজনিত সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই থেরাপির ব্যবহার করা হয়। মনের বিভিন্ন অনুভূতি বা আবেগের সঙ্গে এক-একটি রঙের সম্পর্ক রয়েছে। ক্রোমোথেরাপি অনুযায়ী, লাল রং এনার্জি বা শক্তির সঞ্চার করতে সাহায্য করে। অবসাদ, ব্যথা-বেদনা সারে নীল রঙে। সবুজ মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়। হলুদ আশার আলো জোগায়। কমলা রং আবার আনন্দ, খিদের উদ্দীপক হিসাবে কাজ করে।
কোনও ব্যক্তির আবেগ, আচরণ, দৃষ্টিভঙ্গি কী ভাবে রঙের দ্বারা প্রভাবিত হয়, সে সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণা রয়েছে ‘প্যারাসাইকোলজি’তে। সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ছবি ‘সোনার কেল্লা’র কথাই বা বাদ যায় কেন? মুকুলকে সম্মোহিত করতে সেখানে টর্চের হলদে আলোর ব্যবহার করেছিলেন নকল ডাক্তার হাজরা ওরফে ভবানন্দ। সুতরাং, মনের উপর দখল আনতে আলো এবং রঙের যে ভূমিকা রয়েছে, তা তো প্যারাসাইকোলজিতে প্রমাণিত। পরিস্থিতি অনুযায়ী, লাল রং কখনও ভালবাসা-শুভত্বের প্রতীক, আবার কখনও ভয়ের।
কিন্তু সবুজ?
এমনিতে তা সজীবতা, উর্বরতার প্রতীক। ক্রোমোথেরাপি অনুযায়ী সবুজ রং মানসিক চাপ, উদ্বেগ বশে রাখতে সাহায্য করে। তবে রচনার পোশাকে সবুজের ছোঁয়া কিসের ইঙ্গিত বহন করে, তা তিনি নিজেই জানিয়েছেন।