Advertisement
০১ মে ২০২৪
COVID-19

করোনাভাইরাস: অক্সিজেনের মাত্রা কী এবং তা ঘিরে সঙ্কট কোথায়?

অক্সিজেনের মাত্রা মানে কী? কতই বা তা থাকা উচিত?

করোনায় আক্রান্তদের ফুসফুস কমজোর হয়ে যাচ্ছে।

করোনায় আক্রান্তদের ফুসফুস কমজোর হয়ে যাচ্ছে। ফাইল চিত্র

সুচন্দ্রা ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২১ ২১:১৭
Share: Save:

দেশজুড়ে অক্সিজেনের জন্য চলছে হাহাকার। এ শহরেও সহজে মিলছে না অক্সিজেন সিলিন্ডার। কোথাও গেলে বলে দিচ্ছে, আগামী বহু দিনের মধ্যে পাওয়া যাবে না অক্সিজেন। কোথাও আবার একটি সিলিন্ডারের জন্য হাঁকছে ২০,০০০ টাকা। তা-ও কিনতে বাধ্য হচ্ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর পরিবার। কেন?

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, করোনায় আক্রান্তদের ফুসফুস কমজোর হয়ে যাচ্ছে। ফলে অক্সিজেন নেওয়ার গতিও কমছে। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কত, তা মাপলেই বোঝা যাচ্ছে ফুসফুসের জোর। কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফুসফুস, তা বলে দিচ্ছে অক্সিমিটার। আর এই অক্সিজেনের মাত্রাই নির্ধারণ করছে রোগীর শারীরিক অবস্থা।

অক্সিজেনের মাত্রা মানে কী? কতই বা তা থাকা উচিত?

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, রক্তে অক্সিজেন ঠিক কতটা আছে, তা মাপা যায়। সেই মাপকেই চিকিৎসার পরিভাষায় বলে শরীরের ‘অক্সিজেন স্যাচুরেশন’ বা অক্সিজেনের মাত্রা। শ্বাস টানার পরে ফুসফুস সেই বায়ু থেকে অক্সিজেন পাঠায় রক্তে। যা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে গোটা শরীরে। ফুসফুস কমজোর হলে, শ্বাস টানার ক্ষমতা কমে। তখন রক্তে কম পরিমাণ অক্সিজেন পাঠাতে পারে। ফলে মস্তিষ্ক এবং অন্যান্য অঙ্গে কম অক্সিজেন পৌঁছোয় বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক সাত্যকি হালদার। তিনি বলেন, ‘‘এর থেকেই শারীরিক নানা সমস্যা দেখা দেয়। কারও মাথা ঘুরতে থাকে, বমি ভাব হয়। কারও তার চেয়েও বেশি। অনেকে জ্ঞানও হারান যদি অক্সিজেনের মাত্রা অনেকটা পড়ে যায়।’’ ফলে অক্সিজেন ঠিক পরিমাণে থাকা প্রয়োজন।

চিকিৎসক সুমিত দাস জানাচ্ছেন, অক্সিজেনের মাত্রা সাধারণত ১০০ থাকে। খুব কমলেও সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে তা ৯৭-এর নীচে নামার কথা নয়। কোভিড আক্রান্তদের কখনও কখনও অল্প ওঠা-নামা করে। তবে ৯৪-এর নীচে নেমে গেলে তা চিন্তার। সাত্যকি জানাচ্ছেন, অনেকের ক্ষেত্রে অক্সিজেনের মাত্রা তার থেকেও নীচে নেমে যাচ্ছে। এতে বড় বিপদ ঘটতে পারে। মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দেয় এমন অবস্থায়। ফলে শরীরের অনেক অঙ্গই অকেজো হয়ে পড়ে।

কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্রের মাধ্যমে অক্সিজেন কখন দিতে হবে?

৯৪-এর নীচে নেমে গেলেই অক্সিজেন দিতে হবে আলাদা ভাবে। সুমিত বলেন, ‘‘বহু করোনা রোগীর ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, শ্বাসকষ্ট টের পাচ্ছেন না তাঁরা। অথচ অক্সিমিটার দেখাচ্ছে ৯৪-এর নীচে নেমে গিয়েছে মাত্রা।’’ এমন পরিস্থিতি বেশ সঙ্কটজনক। ফলে অক্সিমিটারে রোজ মাপতে হবে অক্সিজেনের মাত্রা। তাঁর বক্তব্য, অক্সিমিটারে ৯০ পর্যন্ত অনেক রোগীকেই স্থিতিশীল দেখা যায়। কিন্তু ততটা নামা পর্যন্ত অপেক্ষা করলে চলবে না। কারণ, অক্সিজেনের মাত্রা পড়ার গতি বেড়ে গেলে তখন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া মুশকিল। ফলে ৯৪-এর আশপাশে গেলেই কৃত্রিম উপায়ে অক্সিজেন দিতে হবে রোগীকে।

কিন্তু ফুসফুস যদি কমজোর হয়, তবে কৃত্রিম অক্সিজেন টানে কী করে? তাতে সাহায্যই বা হয় কেন?

ফুসফুস যখন শ্বাসবায়ু টানছে, তখন তাতে শুধু অক্সিজেন থাকে না। বাতাস থেকে অক্সিজেন বার করে ফুসফুস তা রক্তে পাঠায়। সাত্যকি জানাচ্ছেন, কৃত্রিম উপায়ে অক্সিজেন দিলে ওই কষ্টটা করতে হয় না ফুসফুসকে। ফলে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন খানিকটা সহজে পৌঁছয় শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে।

করোনা রোগীদের ক্ষেত্রে অধিকাংশের ফুসফুসকে কমজোর করে দিচ্ছে ভাইরাস। অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিকের কাছাকাছি রাখতে চলছে চেষ্টা। তাই কৃত্রিম অক্সিজেনের প্রয়োজন বাড়ছে। আর তার জোগান যথেষ্ট না থাকায় বাড়ছে হাহাকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE