Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
emotional eating

সারাদিন মন খাই খাই করে? অজান্তেই এই রোগের শিকার হননি তো?

আধুনিক মনোবিদরা বলছেন, যখন মানুষ পুষ্টির প্রয়োজন বা খিদে মেটানোর খাবার ছাপিয়ে গিয়ে খাচ্ছেন, বুঝতে হবে এই খাওয়ার থেকে তিনি পরিতৃপ্তি অর্জনের চেষ্টা করছেন।

২৪ ঘণ্টা মুখ চলছে যাঁদের, মনে তাঁদের  বাসা বেঁধেছে  বিশেষ অসুখ। ছবি: শাটারস্টক।

২৪ ঘণ্টা মুখ চলছে যাঁদের, মনে তাঁদের বাসা বেঁধেছে বিশেষ অসুখ। ছবি: শাটারস্টক।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৯ ১৩:৩৪
Share: Save:

মুড়কির মোয়া হোক বা ভেটকি ফ্রাই, ফ্রিজে রাখা চকোলেট থেকে রঙিন আইসক্রিম, ২৪ ঘণ্টাই মুখ চলছে যাঁদের, শরীর তাঁদের ছেড়ে কথা বলবে না। সে কথা তাঁরাও বিলক্ষণ জানেন। তারপরেও খান, খেয়ে পরিতৃপ্ত হন।

কেউ বলেন চোখের খিদে, কেউ বলেন 'বিগ অ্যাপেটাইট'। আসল কারণটা কিন্তু এসব কিছুই নয়। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন ২৪ ঘণ্টা মুখ চলছে যাঁদের, মনে তাঁদের বাসা বেঁধেছে অন্য অসুখ, যার পোশাকি নাম ‘রিওয়ার্ড ডেফিসিয়েন্সি সিন্ড্রোম’ বা ‘আরডিএস’।

আরডিএস-এর সাত সতেরো

আমরা যখনই কোনও ভাল খাবার খাই, আমাদের মস্তিষ্কে ডোপামিন নামে এক ধরনের ‘সুখী’ হরমোন ক্ষরিত হয়। শুধু খাওয়া নয়, যে কোনও কাজ যা মনকে পরিতৃপ্তি দেয়, তা এই হরমোন ক্ষরণে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন: অ্যালার্জির প্রকোপ বাড়ছে, কী ভাবে দূরে রাখবেন সন্তানকে?

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

আধুনিক মনোবিদরা বলছেন, যখন মানুষ পুষ্টির প্রয়োজন বা খিদে মেটানোর খাবার ছাপিয়ে গিয়ে খাচ্ছেন, বুঝতে হবে এই খাওয়ার থেকে তিনি পরিতৃপ্তি অর্জনের চেষ্টা করছেন। অর্থাৎ তাঁর ডোপামিন ক্ষরণের মধ্যে দিয়ে নিজেকে পুরষ্কৃত করার ক্রিয়া অবচেতনে চলছে। তিনি শুধু খাওয়াকেই বেছে নিয়েছেন, কারণ মস্তিষ্কই তাঁকে বার্তা দিয়েছে এই উপায়েই ভাল থাকা যাবে।

আরডিএস কেন হয়

‘সাইকোলজি টুডে’ নামক আন্তর্জাতিক স্বাস্থ‌্য জার্নালে তুলে ধরা হয়েছে গবেষক কেনিথ বামের গবেষণা। কেনিথ নিজের গবেষণায় প্রমাণ করেছেন এই অসুখে আক্রান্তদের মস্তিষ্কে আরডিএস গ্রন্থির পরিমাণ কম। অর্থাৎ বেশ কিছু আবেগ উচ্ছ্বাস তাঁকে সেই পরিতৃপ্তি দিতে পারে না, যা তিনি খাবার থেকে পান। আবার বিভিন্ন মুহূর্তে ডোপামিন স্বাভাবিক পরিমাণে ক্ষরিত না হলে মনও ভাল থাকে না। এই জন্যই অবচেতনই বাধ্য করে বারবার খেতে।

অতিরিক্ত খাওয়া থেকেই শরীরে চালান হয় নানা অসুখ।

মোকাবিলার নিদান

আরডিএস-এর মোকবিলা করতে সক্রিয় হতে হবে আপনার নিজেকেই। অসুখ বা প্রবণতাটি ধরতে পারলে সতর্ক হন। নিজের রাগ, দুঃখ, অভিমান সব আবেগই প্রথম সঙ্কেত দেয় শরীরে। নিজের সেই আবেগগুলিকে তাড়িয়ে না দিয়ে স্বীকৃতি দিতে হবে। শুধু আবেগ চিহ্নিত করাই নয়, খুঁজতে হবে অভিব্যক্তিও। আবেগকে ভাষা দেওয়ার কথা বলছেন চিকিৎসকরা। সেটা কারও বাঁকা কথার সপাট জবাবও হতে পারে, বন্ধুর সঙ্গে কোনও ঘটনা ভাগ করে নেওয়াও হতে পারে।

আরও পড়ুন: আফ্রিকা, আমেরিকা ও ইউরোপে দ্রুত ছড়াচ্ছে ক্যান্ডিডা, সুরক্ষিত নয় ভারতও!

মনোবিদ রেশমী দত্ত চৌধুরীর মতে, ‘‘প্রাথমিক আবেগ ও নানা বিক্ষেপগুলি নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্কের একটি অংশ। না বুঝে হঠাৎ খেয়ে ফেলার মত কাজগুলি নিয়ন্ত্রিত হয় এই অংশ দিয়ে। কিন্তু আমাদের যুক্তি, চিন্তা এগুলি নিয়ন্ত্রিত হয় প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স দ্বারা। অভ্যেস দ্বারা এই অংশটিকে ব্যবহার করা যায়। নিজের ভুলটিকে চিহ্নিত করতে পারা মাত্রই সচেতন হতে শুরু করুন। নিজেকে নিয়মিত অন্য নানা পুরষ্কার দিন। প্রিয়জনের সঙ্গে ফোনে কথা, কাছে পিঠে ঘুরে আসা এগুলিও আপনার সচেতন মনকে পরিতৃপ্ত করতে পারে।’’

ফলে আত্মবিশ্বাসের অভাব কাটিয়ে উঠুন দ্রুত। চিপসের প্যাকেট আর কোল্ড ড্রিঙ্কের বোতল থেকে শরীরে অসুখ চালান করবেন, না কি খোলা মাঠে মাতাল হাওয়ায় দু'দণ্ড শরীর জুড়িয়ে নেবেন, ঠিক করতে হবে আপনাকেই। আর রাশ টানতে না পারলে মনোবিদের হাত বাড়ানোই আছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Emotional Eating Health Tips Fitness Tips
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE