Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Intensive Care Unit

রোগীর সঙ্কট সামলাতে ক্রিটিক্যাল কেয়ারে কী কী ব্যবস্থা থাকে? কোন রোগে কী ইউনিট?

সঙ্কটজনক রোগীর প্রাণ বাঁচাতে আইসিইউ-এর প্রয়োজনীয়তা সবিস্তারে জানালেন ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ অরিন্দম কর। শুনলেন সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনেক সময় রোগীর অবস্থা খুব ঝুঁকিপূর্ণ না হলেও হার্টের বাইপাস সার্জারি, অরগ্যান ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট সহ যে কোনও মেজর সার্জারির পর চটজলদি বিপদের মোকাবিলার জন্যে রোগীকে আইসিইউতে রাখা হয়।

রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক হলে ইনটেনসিভ কেয়ারে সবরকমের সাপোর্ট দিয়ে রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনাই আইসিইউ ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য।

রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক হলে ইনটেনসিভ কেয়ারে সবরকমের সাপোর্ট দিয়ে রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনাই আইসিইউ ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য।

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২০ ১৭:৪৮
Share: Save:

গুরুতর অসুস্থ রোগীকে সুস্থ করে তুলতে বেশিরভাগ সময়েই ‘আইসিইউ’ বা ‘ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট’-এরাখা হয়। ক্রিটিক্যাল কেয়ার সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মনে যেমন একদিকে ভয় থাকে, তেমনই অন্যদিকে জমে থাকে অনেক অভিযোগ।

বর্ষীয়ান কবি শঙ্খ ঘোষ, অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, দীপঙ্কর দে, নব্বই পেরনো সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর গুরুতর অসুস্থ হয়ে কিছুদিন আইসিইউ-তে কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন। আবার দীর্ঘদিন আইসিইউতে থেকেহেরে হাওয়া মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। আইসিইউ, আইটিইউ, নিকু, পিকু এই শব্দগুলো শুনলে বা কাছের মানুষকে এই সব ঘরে থাকতে হলে অজানা আতঙ্ক গ্রাস করে। যদিও এই জীবনদায়ী ব্যবস্থা সবরকমভাবেই রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সাহায্য করে।

কখন আইসিইউ দরকার

রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক হলে ইনটেনসিভ কেয়ারে সবরকমের সাপোর্ট দিয়ে রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনাই এই ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য। হার্ট অ্যাটাক, ব্রেন স্ট্রোক, নিউমোনিয়া, সিওপিডি ও অ্যাজমার কারনে সাংঘাতিক শ্বাসকষ্ট, দুর্ঘটনায় চোট আঘাত, ভয়ানক ভাবে পুড়ে যাওয়া, বিষাক্ত সাপের কামড় ইত্যাদি কারণ রয়েছে। এ ছাড়াও ওষুধের মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা ওষুধে অ্যালার্জির জন্য শ্বাসনালী ফুলে গিয়ে শ্বাসকষ্ট, অন্যান্য কোনও গুরুতর অসুখের কারণে শ্বাসকষ্ট, শরীরের ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে, হার্ট, কিডনি, ফুসফুস, লিভার-সহ কোনও গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কাজ সাময়িক ভাবে বিপর্যস্ত হলেওরোগীকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে রাখা হয়। অনেক সময় রোগীর অবস্থা খুব ঝুঁকিপূর্ণ না হলেও হার্টের বাইপাস সার্জারি, অরগ্যান ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট সহ যে কোনও মেজর সার্জারির পর চটজলদি বিপদের মোকাবিলার জন্যে রোগীকে আইসিইউতে রাখা হয়।

কী কী বিশেষ ব্যবস্থা

হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে রোগীর যাবতীয় শারীরিক সঙ্কটের মোকাবিলার জন্য নানা জীবনদায়ী ব্যবস্থা থাকে। ক্রিটিক্যাল কেয়ারের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্স ছাড়াও প্রত্যেক প্যারামেডিক্যাল স্টাফকেও বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরা রোগীর উপর সর্বক্ষণ নজর রাখেন। দরকার হলেই উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে সামাল দেন। অনবরত হৃৎপিণ্ডের গতিবিধি, শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ, শ্বাস-প্রশ্বাসের অবস্থা, সব কিছু অনবরত পর্যবেক্ষণ করার পাশাপাশি কোনও রকম সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে সব রকমের সাপোর্ট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

আরও পড়ুন: একা একা খান আর হয়ে যান টানটান ছিপছিপে, বলছে গবেষণা

নানা নামে ক্রিটিক্যাল কেয়ার

সঙ্কটাপন্ন রোগীদের বিপদমুক্ত করতে বিশেষ ব্যবস্থাযুক্ত ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের নানান ভাগ আছে। যেমন, সদ্যোজাতদের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ‘নিকু’ বা ‘এনআইসিইউ’। সবে জন্মানো বাচ্চাদের অল্প ওজন থেকে শুরু করে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে জন্মানো-সহ নানান শারীরিক ত্রুটি, শ্বাসকষ্ট, জন্ডিস-সহ নানা সঙ্কটজনক পরিস্থিতি সামলে দেওয়া যায়। শিশুদের জিন্যে ‘পিকু’ বা ‘পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার’, ‘আইটিইউ’ বা ‘ইনটেনসিভ থেরাপি ইউনিট’, ‘সিসিইউ’ বা ‘ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট’, ‘আইসিসিইউ’ বা‘ইনটেনসিভ করোনারি কেয়ার ইউনিট’।

আরও পড়ুন: সংক্রামক করোনাভাইরাস নিয়ে প্রশ্নগুলির উত্তর জানেন কি? নইলে এখনই সাবধান হোন!

প্রত্যেক ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের ভূমিকা একই, তৎপরতার সঙ্গে সঙ্কটজনক অবস্থার মোকাবিলা করে রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা। এই অবস্থায় রোগীর পুষ্টির ওপরেও বেশি জোর দেওয়া হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নাকে নল দিয়ে পুষ্টি সরবরাহ করা হয়। ইমিউনো নিউট্রিশন (যেমন আরজাইনিন, ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড, নিউক্লিওটাইডস, গ্লুটামিন ইত্যাদি) দিয়ে রোগীর পুষ্টির ঘাটতি মেটানো হয়।

ক্রিটিক্যাল কেয়ার চিকিৎসা পরিষেবায় একজন রোগীর পেছনে ২৪ ঘন্টা স্বাস্থ্য কর্মী ও স্পেসালিষ্ট চিকিৎসক মোতায়েন থাকেন। এই দক্ষ হিউম্যান রিসোর্সের মূল্য যথেষ্ট বেশি। তাই চিকিৎসার খরচ সামলাতে স্বাস্থ্য বিমা করিয়ে রাখাও জরুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE