বেড়াতে যাওয়ার সঙ্গী এখন কেতাদুরস্ত ট্রলি ব্যাগ। সেটি আবার রীতিমতো ‘স্মার্টও’। ট্রলি ব্যাগে কফির কাপ রাখার জায়গা থেকে মোবাইল চার্জিংয়ের বন্দোবস্ত। আবার কারও সফরসঙ্গী রুকস্যাকও। ট্রলি ব্যাগ হোক বা রুকস্যাক— এগুলি দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনই ব্যবহার করাও সুবিধাজনক। তৈরি হয় এক যাত্রীর খুঁটিনাটি প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখে।
তবে বাড়িতে খুঁজলে এখনও হয়তো পেয়ে যাবেন কোনও না কোনও স্যুটকেস। শক্ত কভারের স্যুটকেসে থাকত তালাচাবি দেওয়ার বন্দোবস্ত। কোনওটিতে তালা থাকত স্যুটকেসের সঙ্গেই। তার ভিতরেই জামাকাপড়, জরুরি জিনিস সফরের সময় নিয়ে যাওয়া হত।
আরও পড়ুন:
স্যুটকেস সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উন্নত হয়েছে। ধারণা বদলেছে। তা থেকেই বদল হয়ে বর্তমান ট্রলি ব্যাগ বাজারে এসেছে। কিন্তু কখনও ভেবেছেন কি, স্যুটকেসের নাম কেন ‘স্যুটকেস’? কোথা থেকেই বা এল সেটি?
ফিরতে হবে ১৯ শতকে। এখনকার সফরের সঙ্গে সেই সময়ের সফরের ভাবনা, আদব কায়দায় তখন ছিল বিস্তর তফাত। বাইরে কোথাও যেতে গেলে ‘ক্যাজ়ুয়াল’ পোশাকের ঠাঁই ছিল না। বরং ফর্ম্যাল বা আনুষ্ঠানিক ভাবে পরা যায় এমন জামা-কাপড়ই সঙ্গে রাখা ছিল রেওয়াজ। কিন্তু আনুষ্ঠানিক পোশাক তো যেমন তেমন করে নিয়ে গেলে চলবে না। তার উপর লোকসমাজে পরতে গেলে, সেটি কোঁচকানো হওয়াও কাঙ্ক্ষিত নয়। তা হলে উপায়? বাজারে এল ট্রাঙ্কের মতো দেখতে তুলনায় হালকা এক বাক্স। যেখানে পোশাক ভরে রাখলেও ভাঁজ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় নেই। বরং টান টান পোশাক, তেমনই থাকবে। সফরকালে পোশাক এবং আনুষঙ্গিক জিনিস বহনের জন্য আয়তাকার এই বাক্স জনপ্রিয় হয়ে উঠল, যার নাম হল স্যুটকেস।
কিন্তু কেন এমন নাম? নামেই রয়েছে অর্থ।সফরের জন্য স্যুট নিয়ে যাওয়ার কেস বা বাক্স। তা থেকেই স্যুটকেস। এক সময় চামড়া, স্টিল দিয়ে তৈরি স্যুটকেসের চল ছিল। তবে ১৯৩০ সালের পরে উপাদানে বদল আসে। প্লাস্টিক, কার্ডবোর্ডের ব্যবহারের ফলে স্যুটকেস ক্রমশ ভারে হালকা হতে শুরু করে।
তবে তাতে চাকা জোড়ে ১৯৭০ সালের পরে। পোশাক এবং আনুষঙ্গিক জিনিস বহনের স্যুটকেসে বিপ্লব আসে। ব্যবহার সহজ হতে শুরু করে।
১৯ শতকের গোড়ায় স্যুটকেসের ভাবনাটি এসেছিল একজন ব্রিটিশ ব্যবসায়ীর মাথা থেকে। তিনি পোশাক এবং প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে যেতেন এতে। সেই সময় চামড়া, রাবারের কাপড় ব্যবহার হত স্যুটকেশ তৈরিতে। মূলত ট্রাঙ্কের ভাবনাই বিবর্তিত হয়ে স্যুটকেশের জন্ম হয়।
দিন যত গিয়েছে, স্যুটকেসে বদল এসেছে। সত্তরের দশকের চাকা লাগানো স্যুটকেসও দীর্ঘ ভাবনাচিন্তার ফসল। বর্তমানে চাকা লাগানো ট্রলি স্যুটকেস কী ভাবে আরও উন্নত করা যায়, তা নিয়েই ভাবনা চলছে। জিপিএস-এর মতো প্রযুক্তি ব্যবহৃত হত ট্রলি ব্যাগের চুরি রুখতে। এখন আর শুধু পোশাক নয়, স্যুটকেসে থাকে ল্যাপটপ, ক্যামেরা থেকে শুরু করে নানা রকম গ্যাজেট। সেগুলি কী ভাবে নিরাপদে নিয়ে যাওয়া যায়, তা নিয়েও ভাবনা চলছে নিরন্তর। তারই ফসল বর্তমানের ‘স্মার্ট’ ট্রলি ব্যাগ।