Advertisement
E-Paper

বর্ষায় ঘুরে নিন অদেখা পুরুলিয়া, সৌন্দর্যে অযোধ্যা পাহাড়কেও টেক্কা দিতে পারে ঝালদার আনাচকানাচ

দোলের সময় পুরুলিয়ায় লোকে যান পলাশের টানে। তবে প্রকৃতি তার রূপের ঝুলি উপুড় করে বর্ষাতেও। সপ্তাহশেষে পুরুলিয়া ঘুরে নিতে পারেন অন্য পথে, অন্য ভাবে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২৫ ১০:৪০
সপ্তাহশেষে লম্বা ছুটি? চলুন পুরুলিয়ার স্বল্পচেনা ঠিকানায়।

সপ্তাহশেষে লম্বা ছুটি? চলুন পুরুলিয়ার স্বল্পচেনা ঠিকানায়। ছবি: শাটারস্টক।

পুরুলিয়া বললে চোখের সামনে ভেসে ওঠে অযোধ্য পাহাড়। সবুজ পাহাড়কে বেড় দিয়ে উঠে গিয়েছে সর্পিলাকার পথ। জলাধার, ঝর্না, মুখোশের গ্রাম, সরল জীবনযাপন— সব নিয়েই এই জেলা।

একসময় পুরুলিয়ার যে সমস্ত এলাকা মাও-আতঙ্কে কুঁকড়ে গিয়েছিল, এখন সেখানে পর্যটকদের কোলাহল। গত কয়েক বছরে পর্যটনের প্রসার হয়েছে অনেকটাই। পাহাড়ের পাদেদেশে, অরণ্যের মাঝে তৈরি হয়েছে পরিবেশবান্ধব রিসর্ট। তবে এখনও অজানা, অচেনা রয়ে গিয়েছে পুরুলিয়ার অনেক স্থানই।

গড়পঞ্চকোট, জয়চণ্ডী পাহাড়, অযোধ্যা পাহাড় ঘিরে তৈরি হয়েছে পর্যটনের এক একটি সার্কিট। তবে বাদ পড়ে যাওয়া ঝালদাও কিন্তু পর্যটকদের মনোহরণের ক্ষমতা রাখে।

ফাগুনের ছোঁয়ায় প্রকৃতি রঙিন হলে অত্যুৎসাহী পর্যটকেরা ভিড় করেন সেখানে। শীতেও আনাগোনা থাকে শহুরে লোকজন এবং স্থানীয়দের। তবে বর্ষা একেবারেই আলাদা।

সামনেই ১৫ অগস্ট। শনি-রবি জুড়ে নিন। হাতে তিনটি দিন থাকলেই চট করে ঘুরে নিতে পারবেন ঝালদার আনাচকানাচ। ঝালদা মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তেই ছড়িয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। মাথা চ্যাপ্টা পাহাড়, টিলা, অরণ্য, জলাধার, নদী, ইতিহাস— সব মিলিয়েই এই স্থান। তবে একটু ভাল করে ঘুরতে গেলে অন্তত তিন থেকে চার দিন হাতে রাখা প্রয়োজন।

তুলিন

তুলিনের কাছ দিয়ে বয়ে গিয়েছে সুবর্ণরেখা নদী।

তুলিনের কাছ দিয়ে বয়ে গিয়েছে সুবর্ণরেখা নদী। ছবি: সংগৃহীত।

ঝালদা সফর শুরু করতে পারেন তুলিন দিয়েও। বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানাবর্তী ছোট্ট গ্রাম তুলিন। বয়ে গিয়েছে সুবর্ণরেখা। মুরী জংশন থেকে গাড়িতে পৌঁছোনো যায় সেখানে। তুলিন রেল স্টেশনও আছে অবশ্য। এখান থেকেই ঘুরে নেওয়া যায় একাধিক বাঁধ, ঝর্না। তবে যদি কোথাও যেতে ইচ্ছা না করে তা হলে অলসযাপনেও প্রকৃতির সান্নিধ্য মন্দ লাগবে না। গাছগাছালি ঘেরা শান্ত স্থান ভুলিয়ে দেবে শহুরে জীবনের ক্লান্তি।

আর যদি মন চায় বেরিয়ে পড়তে পারেন গাড়ি নিয়ে। বাইক নিয়েও অনেকে পুরুলিয়ার আনাচকানাচ উপভোগ করেন। তুলিন থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরে মুরুগুমা জলাধার। পাহাড় ঘেরা মুরুগুমা দেখতে আর পাঁচটি জলাধারের চেয়ে আলাদা লাগে। মনে হয়, পাহাড়ের অংশবিশেষের ফাঁক দিয়ে যেন এঁকেবেঁকে গিয়েছে জলাধারটি। অরণ্যঘেরা স্থানটি অত্যন্ত মনোরম।

মুরুগুমা জলাধার।

মুরুগুমা জলাধার। ছবি: সংগৃহীত।

পুরুলিয়ার অনেক জায়গাতেই রাস্তা বেশ সুন্দর। মসৃণ। পথে সঙ্গ দেবে ছোট ছোট পাহাড়। মুরুগুমা যাওয়ার পথে ছোট্ট একটি জলপ্রপাত ঘুরে নিতে পারেন। স্থানীয়েরা বলেন লক্ষ্মীপুর জলপ্রপাত।

জাজাহাতু

চেমটাবুরু এখানকার উচ্চতম শৃঙ্গ। সুযোগ হলে পাহাড় চড়ার পরিকল্পনাও করতে পারেন।

চেমটাবুরু এখানকার উচ্চতম শৃঙ্গ। সুযোগ হলে পাহাড় চড়ার পরিকল্পনাও করতে পারেন। ছবি: সংগৃহীত।

সপ্তাহান্তের ভ্রমণের ঠিকানা হতে পারে জাজাহাতুও। ঝালদার এই ঠিকানাটিও নিজগুণে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ড সীমানায় জাজাহাতুর অবস্থান। অনুচ্চ পাহাড় ঘিরে রেখেছে চারপাশ। দোলের সময় ঝালদার আনাচকানাচ ভরে যায় আগুনরঙা পলাশে। শীতের পরিবেশ মনোরম বলে পর্যটকেরা বেছে নেন সেই সময়ও। তবে বাদ পড়ে যায় বর্ষা বা বর্ষাশেষের মরসুম। অথচ বর্ষণসিক্ত রূপে থাকে অদ্ভুত এক মাধুর্য। ঘন সবুজ হয়ে ওঠা প্রকৃতি হাতছানি দিয়ে বার বার।

জাজাহাতুকে ঘিরে রয়েছে ছোটবড় নানা পাহাড়। কোনও এক সকালে কিংবা পড়ন্ত বিকেলে তেমন একটি পাহাড়ে কিছুটা অন্তত উঠলেও আশপাশের দৃশ্য দারুণ দেখাবে। বন্ধুবান্ধব থাকলে আড্ডা জমতে পারে সেখানেই। রাস্তার দু’পাশের ঘন অরণ্যও চোখকে প্রশান্তি দেবে। জাজাহাতু থেকে ঘুরে নিতে পারেন নরহরা জলাধার। শীতের দিনে স্থানীয়েরা এখানে পিকনিকে আসেন। তবে বর্ষায় তেমন ভিড়ভাট্টা পাবেন না। বরং প্রকৃতি উপভোগের সুযোগ থাকবে বেশি। এখান থেকে ঘুরে নেওয়া যায় লায়েক বাঁধ, পাঁড়রি ড্যাম।

জাজাহাতুকে ঘিরে রয়েছে ছোটবড় টিলা।

জাজাহাতুকে ঘিরে রয়েছে ছোটবড় টিলা। ছবি: সংগৃহীত।

ঝালদায় ঘোরার জায়গা আছে অনেক। চেমটাবুরু শৃঙ্গ দেখা যায় জাজাহাতু থেকে। দেখা যায় গজাবুরু শৃঙ্গ, সিন্দ্রোলিয়া এবং কীর্তনিয়া পাহাড়।

কী ভাবে যাবেন?

ট্রেনে গেলে নামতে হবে মুরী জংশনে। হাওড়া থেকে রাতের ক্রিয়াযোগ এক্সপ্রেস ধরলে ভোর চারটে নাগাদ পৌঁছবেন মুরী জংশন। এ ছাড়াও রাঁচী শতাব্দী, রাঁচী ইন্টারসিটি, রাঁচী বন্দে ভারত–সহ একাধিক ট্রেন আছে মুরী যাওয়ার জন্য। মুরী থেকে তুলিনের দূরত্ব সড়কপথে ৫ কিলোমিটারের মতো।

মুরী জংশন অথবা ঝালদা স্টেশন থেকে অটো বা গাড়িতে জাজাহাতু আসা যায়। মুরী থেকে দূরত্ব প্রায় ২৭ কিলোমিটার। ঝালদা স্টেশন থেকে দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। সড়কপথে কলকাতা-সহ যে কোনও বড় শহর থেকে গাড়িতেও ঝালদা আসা যায়।

কোথায় থাকবেন?

ঝালদা শহর জনবহুল। সেখানে থাকার জায়গা আছে। তবে শহরের ভিড় এড়াতে চাইলে তুলিন বা জাজাহাতুতে থাকতে পারেন। তুলিনে হেরিটেজ বাংলো আছে থাকার জন্য। জাজাহাতুতে একটি বেসরকারি ইকো রিসর্ট আছে। এ ছাড়াও চাইলে মুরুগুমার আশপাশে থাকতে পারেন।

Jhalda Municipality purulia Weekend Travel Jhalda Travel Tips
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy