Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
international women's day

আন্তর্জাতিক নারী দিবস: ‘এমন বন্ধু আর কে আছে, তোমার মতো সিস্টার’

দেখে অবাক হয়েছি, দীর্ঘ সময়ে প্রচণ্ড গরম আর আর্দ্রতার মধ্যেও কী ভাবে সিন্থেটিক পিপিই পরে প্রবল সংক্রামক এক ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের যত্ন করেছেন তাঁরা।

এ বারের নারী দিবস উদ্‌যাপিত হোক যোদ্ধাদের নামে।

এ বারের নারী দিবস উদ্‌যাপিত হোক যোদ্ধাদের নামে।

মোহিত রণদীপ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২১ ১৬:৫৩
Share: Save:

করোনা-সংক্রমণের প্রথম দিকে ভয় আর আতঙ্ক ছড়িয়েছিল সবচেয়ে বেশি। তার থেকে আত্মকেন্দ্রিকতাও বাড়ে। কিন্তু এই আতঙ্ক আর স্বার্থপরতার বাইরে পড়েন কি চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীরা? তা তো নয়। অনেকেই ভয় পেয়েছেন। সেটাই স্বাভাবিক। তবে সকলে তো মাঠ ছেড়ে চলে যাননি। অথচ তাঁদেরই কত জনকে সামাজিক হেনস্থার মুখোমুখি হতে হল! তার জেরে এই রাজ্য থেকে চলে যেতে বাধ্য হলেন ভিন্ রাজ্য থেকে বিভিন্ন হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত বহু নার্স। এখানকার মানুষের পক্ষে তা নিশ্চয়ই গৌরবের নয়।

তার পরেও কত নার্স অক্লান্ত ভাবে কাজ করে গিয়েছেন! নিজে করোনায় আক্রান্ত হয়ে তেমনই কয়েক জনের সাহায্য পেয়েছি, সুস্থ হয়ে ওঠার চেষ্টার সময়ে। সে সময়ে বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় ছিন্ন করে, রোগের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছিল আমাকেও। পরিবারের কারও মুখ দেখতে পাইনি দিনের পর দিন। হাসপাতালে কাটাতে হয়েছে। চিকিৎসকদের পাশাপাশি, শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালের সেই নার্সেরাই আমাকে সাহায্য করেছেন মনোবল ধরে রাখতে।

সে সময়ে দেখেছি, আমার মতো এমন অনেককেই সাহায্য করে, নার্সেরা দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন এই অতিমারির সময়ে। দেখে অবাক হয়েছি, দীর্ঘ সময়ে প্রচণ্ড গরম আর আর্দ্রতার মধ্যেও কী ভাবে সিন্থেটিক পিপিই পরে প্রবল সংক্রামক এক ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের যত্ন করেছেন তাঁরা। এক দিন- দু’দিনের বিষয় তো নয়। দিনের পর দিন। এই সেবিকাদের মধ্যেই কাছ থেকে দেখা কয়েক জনের কথা এখানে তুলে ধরতে চাই, আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে। তাঁদের জানাতে চাই কৃতজ্ঞতা ও অভিবাদন।

শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালের নার্সদের এক জন সুস্মিতা কাঞ্জিলাল। তিনি বাড়িতে রেখে এসেছিলেন বছর পাঁচেকের ছেলে আর শাশুড়িকে। স্বামীও তখন শহরের এক নার্সিংহোমে ‘কোভিড ডিউটি’তে। হাসপাতালে ভর্তি থাকার সময়ে কথা হত ওঁর সঙ্গে। সুস্মিতার মনখারাপ হত সন্তানকে ওই ভাবে ছেড়ে আসার জন্য। তবে কাজ করছেন কেন? জিজ্ঞেস করায় বলেছিলেন, ‘‘সহকর্মীরা এমন এক অতিমারির মোকাবিলা করবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, আর আমি এক জন শিক্ষাপ্রাপ্ত নার্স হয়েও বাড়িতে বসে থাকব? এটা মেনে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়, নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না কখনও।’’ এই দায়িত্ববোধের অভিজ্ঞান যাঁর মধ্যে, তাঁকে কুর্ণিশ না জানিয়ে পারা যায় না! সেখানেই কর্মরত মৌসুমী দাস, মর্জিনা খাতুন, রিঙ্কু মণ্ডল আর তাঁদের সহকর্মী-বন্ধুরা প্রত্যেকেই দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন এ ভাবেই। ওঁদের সকলের পরিবার রয়েছে। ছিল পরিজনেদের নিয়ে চিন্তা। তবু কোভিড আক্রান্তদের সেবা দিতে পিছপা হননি এঁদের এক জনও।

এ প্রসঙ্গে একটা ঘটনা যেমন খুবই মনে পড়ছে। হাসপাতালে দেখেছিলাম, ‘হিপোক্রিটাসের শপথ’ নেওয়া এক ডাক্তারবাবু ১৫ ফুট দূর থেকে, ফেস শিল্ড পরে রোগীর সঙ্গে কথা বলছেন। আর সেই সময়েই রোগীর কাছে গিয়ে, তাঁকে ওষুধ দেওয়ার কাজ করছেন এক নার্স। মনে ধরেছিল। বুঝেছিলাম, এঁরাই ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের যোগ্য উত্তরসূরী। অনুভব করেছিলাম, তাঁদের ওই নিষ্ঠা শুধু দায়িত্ববোধ থেকে আসে না। গভীর মানবিক বোধ থেকেও আসে।

এঁদের মধ্যে কোনও নার্স কি কোভিড আক্রান্ত হননি? অবশ্যই হয়েছেন। তখন দেখা দিয়েছে গভীর সঙ্কট। কিন্তু অন্যান্য দফতরে কেউ কোভিড আক্রান্ত হলে অফিস বন্ধ রাখা হচ্ছিল। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে তো তা হয় না। ফলে যাঁরা হননি আক্রান্ত, সেই নার্সদের দেখা গেল আরও বেশি দায়িত্ব নিতে। কঠিন সময়ে এ ভাবেই সকলের পাশে থাকলেন নার্সেরা।

(লেখক মনোসমাজকর্মী)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

international women's day
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE