জেলা হাসপাতাল পরিদর্শনে কোচবিহারের তৃণমূল সাংসদ রেণুকা সিংহ।
এনসেফেল্যাইটিসের দাপট চলছে। রোগ থেকে বাঁচতে নিজেদের উদ্যোগে পাড়ায় পাড়ায় ব্লিচিং ছড়াতে শুরু করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। স্বাস্থ্য দফতর প্রতিদিন পরিচ্ছন্নতার পাঠ দিলেও, জেলা জুড়েই হাসপাতালগুলির অপরিচ্ছন্নতার ছবি কিন্তু অপরিবর্তিত।
রবিবার মাথাভাঙা হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল ওয়ার্ডের ভিতরে খাবারের অবশিষ্ট ছড়িয়ে রয়েছে যত্রতত্র। দেওয়ালে পানের পিকের দাগ। শৌচাগারগুলিতে জল জমে রয়েছে। একই বিছানায় গাদাগাদি করে শুয়ে দুই থেকে তিন জন করে রোগী। হাসপাতালের এ হেন দশায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে বাসিন্দাদের মধ্যে। হাসপাতাল পরিচ্ছন্ন রাখার দাবিতে সরব হয়েছেন ডান-বাম দুই পক্ষই। শুধু মাথাভাঙাই নয়, তুফানগঞ্জ ও মেখলিগঞ্জ হাসপাতালেও ছবিটা এক।
রবিবার পর্যন্ত কোচবিহার জেলায় এনসেফেল্যাইটিসে আক্রান্ত হয়ে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। দিনহাটা হাসপাতালে ১০ শয্যার ফিভার ক্লিনিক চালু হয়েছে। সেখানে দু’দিনে ১২ জন রোগীকে ভর্তি করানো হয়েছে। কোচবিহারের ডেপুটি স্বাস্থ্য আধিকারিক অমল সোরেন বলেন, “হাসপাতাল সহ সর্বত্র পরিষ্কার রাখার কথা বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর থেকে সব রকম উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।” অথচ ১২০ শয্যার দিনহাটা হাসপাতালের শৌচাগারগুলির বেশিরভাগই বেহাল বলে অভিযোগ তুলেছেন নাগরিক মঞ্চের সভাপতি জয়গোপাল ভৌমিক। তিনি বলেন, “হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলি পরিষ্কার থাকলেও শৌচাগারগুলি ব্যবহারের অযোগ্য। সেখান থেকেও দূষণ ছড়াচ্ছে।” কোচবিহারের তৃণমূল সাংসদ রেণুকা সিংহ এ দিন জেলা হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। তিনি জানান, কোনও রোগীর যাতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা না হয়, সে ব্যাপারে সুপারের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
একের পর এক পরিদর্শন চললেও, হাসপাতালের ভিতর এবং বাইরের পরিবেশ অপরিচ্ছন্ন হওয়ায় উদ্বেগে রয়েছেন রোগীর আত্মীয়েরা। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, মাথাভাঙা হাসপাতাল ১২০ শয্যার। সেখানে প্রায় দ্বিগুণ রোগী ভর্তি রয়েছেন। হাসপাতালের সুপার গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “হাসপাতাল পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করছি। কিন্তু তার পরেও নোংরা ছড়াচ্ছে।” এজন্য রোগীর আত্মীয়দের মধ্যে সচেতনতার অভাবকে দায়ী করেছেন তিনি। মাথাভাঙ্গা-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আবু তালেব আজাদ বলেন, “এনসেফেল্যাইটিস রুখতে পরিচ্ছন্নতার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। সেখানে হাসপাতালের পরিবেশ এমন কেন থাকবে, সেটাই বোধগম্য হচ্ছে না।”
তুফানগঞ্জ মহকুমা হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা নিয়েও অভিযোগের আঙুল তুলেছেন বাসিন্দারা। হাসপাতাল চত্বর আবর্জনায় ঢেকে গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিন হাসপাতাল চত্বর থেকে শুয়োর হটাতে অভিযান চালায় তুফানগঞ্জ পুরসভা। দিনহাটা মহকুমার এনসেফ্যালাইটিস আক্রান্ত এলাকাগুলি থেকেও শুয়োর হঠাতে অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মহকুমা প্রশাসন। আজ, সোমবার দিনহাটার গীতালদহ, পেটলা, বামনহাটে অভিযান চালানো হবে বলে জানানো হয়েছে। উদ্ধার করা শুয়োরগুলিকে ময়নাগুড়ির রামসাইয়ের সরকারি খামারে রাখা হবে বলে জানিয়ে দিনহাটার মহকুমাশাসক কাজল সাহা এই দিন বলেন, “শুয়োরের মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy