Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অবশেষে এনআরএসে জেরা, তবে কাজ হবে কি

তে-রাত্তির পেরিয়ে যাওয়ার পরে এনআরএসের হত্যাকাণ্ড নিয়ে কিছুটা সক্রিয় হল পুলিশ। বুধবার সকালে হাসপাতালের হস্টেলে গেল তদন্তকারী দল। বিকেলে জেরা করার জন্য পুলিশের গাড়িতে চাপিয়ে লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হল এক ডাক্তারি পড়ুয়াকে। কিন্তু এই সক্রিয়তা অপরাধীদের ধরার ক্ষেত্রে কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে লালবাজারের অন্দরেই! এনআরএসের ছাত্র সংসদ শাসক দলের দখলে থাকার জন্যই পুলিশ নিজের কাজ করতে পারছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে।

মুখ ঢাকা...। ছাত্রদের সঙ্গে বৈঠকের পরে বেরিয়ে আসছেন এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষা মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার রণজিত্‌ নন্দীর তোলা ছবি।

মুখ ঢাকা...। ছাত্রদের সঙ্গে বৈঠকের পরে বেরিয়ে আসছেন এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষা মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার রণজিত্‌ নন্দীর তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৪ ০২:২৮
Share: Save:

তে-রাত্তির পেরিয়ে যাওয়ার পরে এনআরএসের হত্যাকাণ্ড নিয়ে কিছুটা সক্রিয় হল পুলিশ। বুধবার সকালে হাসপাতালের হস্টেলে গেল তদন্তকারী দল। বিকেলে জেরা করার জন্য পুলিশের গাড়িতে চাপিয়ে লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হল এক ডাক্তারি পড়ুয়াকে। কিন্তু এই সক্রিয়তা অপরাধীদের ধরার ক্ষেত্রে কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে লালবাজারের অন্দরেই! এনআরএসের ছাত্র সংসদ শাসক দলের দখলে থাকার জন্যই পুলিশ নিজের কাজ করতে পারছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে।

খুনের ৮৪ ঘণ্টা পরেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি লালবাজার। কেন? পুলিশের একাংশের মতে, হবু ডাক্তারদের হস্টেলে খুনের তদন্ত এগোনোর ক্ষেত্রে তদন্তকারীদের রাশ কিছুটা টেনে রাখা হয়েছিল। ছাত্র সংসদ শাসক দলের দখলে থাকার জন্যই এই রাশ টানা হয়েছিল বলে অভিযোগ। পুলিশ সূত্রের খবর, হাসপাতালে শাসক দলের সদস্যরা মাঝেমধ্যেই মারামারির ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন। বছর তিনেক আগে হস্টেলের ক্যারম খেলার ঘরে (এই ঘরের সামনেই নিহত হন কোরপান) বাম মনোভাবাপন্ন কয়েক জনকে পেটানো হয়েছিল বলে অভিযোগ। সেই ঘটনাতেও কেউ গ্রেফতার হয়নি। হাসপাতালের এক কর্মীর কথায়, “দিন কয়েক আগেই কয়েক জন ছাত্র মিলে আর এক ছাত্রকে প্রকাশ্যে মারছিল। কারও কিছু বলার সাহস ছিল না।”

এ দিন ছাত্রদের হাবভাবেও তা ফুটে বেরিয়েছে। এক শ্রমিকের দাবি, “কয়েক জন লোক বলাবলি করছিল, কিছু হবে না। স্যারেরা আছেন তো!” সেই স্যারেরা কারা, তা অবশ্য বুঝে উঠতে পারেননি ওই শ্রমিক। তাঁরা বলছেন, এ সব নিয়ে বেশি কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে তাঁদের। রবিবার সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলেছিলেন রবিউল নামে এক শ্রমিক। তার পর থেকে তাঁকে আর কাজে দেখা যাচ্ছে না বলে শ্রমিকরা জানিয়েছেন।

এরই মধ্যে এনআরএসের অধ্যক্ষ ঘোষণা করেছেন, ছাত্রদের জেরা করার আগে পুলিশকে আগাম জানাতে হবে। যা শুনে পুলিশের অনেকেই বলছেন, জেরার জন্য আগাম অনুমতি নিতে হলে তা তদন্তে প্রভাব ফেলবে। এ দিন মেডিক্যাল কলেজে একটি সভাতে পড়ুয়ারা ইতিমধ্যেই পুলিশি জেরা নিয়ে অধ্যক্ষ মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে নালিশ জানিয়েছেন।

এ দিন বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ দেখা যায়, হস্টেল থেকে ছাত্রেরা দলে দলে বেরিয়ে কলেজের সভাকক্ষে ঢুকছেন। তার পরেই কয়েক জন ছাত্র ও সহকর্মী বেষ্টিত হয়ে সেখানে ঢোকেন অধ্যক্ষ। সভার পরে তাঁকে মুখ ঢেকে বেরোতে দেখা যায়। কর্তৃপক্ষ যে অস্বস্তিতে রয়েছেন, এটা তারই লক্ষণ বলে মনে করছেন কেউ কেউ। তবে পরে ফোন করা হলে মঞ্জুদেবী দাবি করেন, সংবাদমাধ্যমে মুখ দেখানো তিনি বরাবরই অপছন্দ করেন। তাই চাদরে মুখ ঢেকেছিলেন। তাঁর কথায়, “ছাত্রদের পরীক্ষার জন্য পরিচয়পত্র ও হস্টেলের নিরাপত্তা নিয়েই এ দিনের বৈঠক ছিল।” যদিও ছাত্রদের অনেকে জানিয়েছেন, পুলিশি গতিবিধি নিয়েও কথা হয়েছে। মঞ্জুদেবীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি শুধু বলেন, “পুলিশের কাজ পুলিশ করবে। তবে ওদের বলেছি, জেরা করতে আসার আগে আমায় জানাতে।”

পুলিশের কাজ কি করতে পেরেছে পুলিশ? গোয়েন্দা কর্তাদের অনেকেই বলছেন, তদন্তের নিয়ম মেনে ঘটনাস্থল সংরক্ষণ করার কোনও ব্যবস্থাই হয়নি। সে ভাবে কাজে লাগানো হয়নি লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগকে। তদন্তে নামানো হয়নি পুলিশ কুকুরও! ঘটনার তিন দিন পরেও নিয়ে যাওয়া হয়নি ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের! পুলিশের একাংশই মানছেন, এ ক’দিনে যে ভাবে হস্টেলের পড়ুয়ারা ঘটনাস্থল দিয়ে চলাফেরা করেছেন, তাতে অনেক প্রমাণই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এখন সেই প্রমাণ খুঁজে বের করা কার্যত অসম্ভব।

লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ডাক্তারি পড়ুয়াকে। —নিজস্ব চিত্র

লালবাজারের অনেকের অবশ্য দাবি, তদন্তকারীরাই নমুনা সংগ্রহ করেছেন। ঘটনাস্থলে চিহ্ন দিয়ে রাখা হয়েছে। প্রয়োজন হয়নি বলেই পুলিশ-কুকুর নিয়ে যাওয়া হয়নি। যদিও এই বক্তব্য মানতে নারাজ ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই। তাঁরা বলছেন, খুনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ক্ষেত্রে পুলিশ কুকুর এবং ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে যাওয়াটাই দস্তুর। এনআরএসে সেটাই করা উচিত ছিল।

তবে তদন্ত নিয়ে সংবাদমাধ্যমে সমালোচনা শুরু হওয়ায় এ দিন কিছুটা নড়েচড়ে বসেছেন লালবাজারের কর্তারা। তার জেরেই এ দিন সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ ডিসি-ডিডি (২) সুমনজিত্‌ রায়ের নেতৃত্বে একটি গোয়েন্দা দল এনআরএস হস্টেলে যায়। তার পর থেকে দিনভর পুলিশ জেরা করেছে ছাত্রদের। বিকেলে এক ছাত্রকে পুলিশের গাড়িতেও তুলতে দেখা যায়। লালবাজার সূত্রের খবর, ওই ছাত্রের মোবাইল চুরি করার অভিযোগেই কোরপানকে পেটানো হয়েছিল।

কী বলছেন পুলিশকর্তারা? গোয়েন্দাপ্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “তদন্ত জোরকদমেই চলছে।” তবে লালবাজারের একটি সূত্র বলছেন, হাসপাতালের কাছে ছাত্রদের যে বিবরণ চেয়ে পাঠানো হয়েছিল, তা এখনও পুরোপুরি মেলেনি। সেই তথ্য পাওয়ার পরে তদন্তে আরও কিছুটা এগোনো সম্ভব হবে। এ দিন হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ দেখায় মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর ও বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE