Advertisement
E-Paper

আজব অভ্যাস, কিশোরীর পেটে মিলল চুলের বল

দীর্ঘ দিনের ‘বদভ্যাস’, অনেক সময়েই যেগুলো থেকে যায় বড়দের চোখের আড়ালে, সেগুলো থেকেই গুরুতর শারীরিক অসুস্থতার শিকার হতে পারে শিশু-কিশোরেরা। সচেতনতার অভাবে এমন অসুস্থতা অনির্ণিতই থেকে যায়। কিন্তু এ থেকে ছোটদের প্রাণসংশয়ও হতে পারে। কসবার ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া, বছর বারোর নেহা সাউয়ের ঘটনার পরে চিকিৎসকেরাই স্বীকার করছেন তা। সোমবার যেখানে নেহার অস্ত্রোপচার হয়েছে, সেই শিয়ালদহ ইএসআই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়ছেন, গত প্রায় ৮-৯ বছর যখন-তখন নিজের মাথার চুল ছিঁড়ে খাওয়ার অভ্যাস ছিল নেহার।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৪ ০২:৩৪

দীর্ঘ দিনের ‘বদভ্যাস’, অনেক সময়েই যেগুলো থেকে যায় বড়দের চোখের আড়ালে, সেগুলো থেকেই গুরুতর শারীরিক অসুস্থতার শিকার হতে পারে শিশু-কিশোরেরা। সচেতনতার অভাবে এমন অসুস্থতা অনির্ণিতই থেকে যায়। কিন্তু এ থেকে ছোটদের প্রাণসংশয়ও হতে পারে। কসবার ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া, বছর বারোর নেহা সাউয়ের ঘটনার পরে চিকিৎসকেরাই স্বীকার করছেন তা।

সোমবার যেখানে নেহার অস্ত্রোপচার হয়েছে, সেই শিয়ালদহ ইএসআই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়ছেন, গত প্রায় ৮-৯ বছর যখন-তখন নিজের মাথার চুল ছিঁড়ে খাওয়ার অভ্যাস ছিল নেহার। মা-বাবা কখন-সখনও এর জন্য বকুনি দিয়েছেন, মেরেছেন, কিন্তু তার বেশি গুরুত্ব দেননি। নেহার চুল খাওয়াও তাই থামেনি। বছরের পর বছর সেই থোকা থোকা চুল নেহার পাকস্থলীতে জমে প্রায় এক ফুট লম্বা, আড়াই কেজি ওজনের বলের চেহারা নিয়েছিল।

গত এক বছরে সে কিছু খেতে পারত না, সব বমি হয়ে যেত, সঙ্গে পেটে অসহ্য যন্ত্রণা। শরীর রোগা, দুর্বল হতে শুরু করে। শুধু পেটটা ফুলে যায়। শেষে ধরা পড়ে এই চুল খাওয়ার রোগের কথা। সোমবার ইএসআই-এর সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক সুপ্রিয় রায়, সোমনাথ ঘোষ ও বিজয় বিশ্বাস অস্ত্রোপচারের পরে চুলের টিউমারটি বার করেছেন। নেহা আপাতত সুস্থ।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বাচ্চাদের এই বদভ্যাসগুলির কারণ মূলত মানসিক। কোনও মানসিক অস্থিরতা, অস্বস্তি বা সঙ্কটের বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় তাদের এই ধরনের আচরণে। তাই প্রথমে দরকার সেই মনের জায়গা ঠিক করা। শিশুদের মনোচিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সাধারণ মানুষের একটা দ্বিধা থাকে। ফলে সমস্যা ফিরে-ফিরে আসে। তাই অভ্যাসগুলো থেকে শিশুদের বার করে আনাটাও মুশকিল হয়ে পড়ে।

শিশু-শল্যচিকিৎসক বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় এনআরএস-এর বিভাগীয় প্রধান থাকার সময়ে বেশ কিছু শিশুর পেট থেকে এমন জমে থাকা চুল অস্ত্রোপচার করে বার করেছিলেন। তিনি জানান, চুল ছেঁড়ার এই অভ্যাসকে চিকিৎসা পরিভাষায় ‘ট্রাউকোটিল্লোম্যানিয়া’ বলে, চুল ছিঁড়ে খেয়ে ফেলাকে বলে ‘ট্রাইকোবেজোয়ার।’ অনেক সময়ে চুল পেটের মধ্যে জমতে-জমতে লম্বা হয়ে পায়ুর কাছাকাছি চলে যায়। তখন একে বলা হয় ‘র্যাপুন্জেল সিন্ড্রোম’।

শিশু-বিশেষজ্ঞ অপূর্ব ঘোষের কথায়, ছোটদের মধ্যে চক, পেনসিল, কাঠ, হাতের বা ঠোঁটের চামড়া, কাপড়, দেওয়ালের রং, মাটি, ঘুঁটের মতো বিভিন্ন জিনিস খাওয়ার বদভ্যাস থাকে। এর থেকে হাতে-ঠোঁটে ক্ষত, পেটে আলসার থেকে প্যাংক্রিয়াটাইটিস পর্যন্ত হতে পারে। সময়মতো রোগ নির্ণয় না হলে মৃত্যুও অসম্ভব নয়। মনোবিদ প্রশান্ত রায় জানান, অনেক সময়ে শিশু কার্পেটের সুতো বা উল, ফলের বিচি খায়। এই রকম যা-তা খাওয়াকে চিকিৎসার ভাষায় ‘পিকা’ বলে। এখন অভিভাবকেরা এত ব্যস্ত যে শিশুদের দিকে নজর দেওয়ার সময় নেই। এ সব অভ্যাস তাঁরা ছেলেমানুষি ভেবে উড়িয়ে দেন। ভাবেন না, এর থেকে জটিল রোগও হতে পারে।”

মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালের কথায়, “সাধারণত মেয়েদের সঙ্গে মায়েদের কোনও মানসিক অমিল থাকলে শিশুকন্যার মধ্যে এই রকম চুল ছিঁড়ে খাওয়ার সমস্যা দেখা যায়। কোথাও মানাতে অসুবিধা হলে, আত্মবিশ্বাসের অভাব ঘটলেও এমন বদভ্যাস জন্মাতে পারে। সবাই দেখে ফেলতে পারে মনে করে সে লুকিয়ে-লুকিয়েও এটা চালাতে পারে। ফলে তাদের আচরণের দিকে নজর রাখা, তাদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মেশা, মনের কথা বোঝার চেষ্টা করা খুব দরকার।”

parijat bandyopadhyay hair tumour trichotillomania
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy